ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা রিকশাযোগে যাতায়াতেও বাধা দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। সকালে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। যানবাহন না পেয়ে অনেকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আবার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-রিকশা চলাচল করলেও সেগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে চালকরা।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোশাররফ হোসেন। বৈঠক ফলপ্রসূ না হলে ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা।
পাশাপাশি বুধবার থেকে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জেও ধর্মঘট চলবে বলে তারা জানান।
পরিবহন শ্রমিক নেতারা জানান, তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ও উপকমিশনারকে (ট্রাফিক) অপসারণ, ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি বন্ধ, রেকার বাণিজ্য ও অতিরিক্ত হারে জরিমানা আদায় বন্ধ, সিলেটে শ্রমিক লীগের নাম ব্যবহার করে প্রভাব খাটানো শ্রম আদালতের প্রতিনিধি নাজমুল আলম রোমেনকে প্রত্যাহার, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া, ভাঙা সড়কগুলো দ্রুত মেরামত করা, সিএনজিচালিত নতুন অটোরিকশা বিক্রি বন্ধ ও বিক্রি করা গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশন প্রদান। এদিকে সোমবার রাতে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছিল প্রশাসন। তবে তারা অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে ধর্মঘট শুরু করেন।
মঙ্গলবার সকালে নগরীর আম্বরখানা, বন্দরবাজার, টিলাগড়, দক্ষিণ সুরমার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, চন্ডিপুল প্রভৃতি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যানবাহন না পেয়ে মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ছাত্রছাত্রীরা সকালে বাসা থেকে বের হয়ে গণপরিবহন না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেশি টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে স্কুল-কলেজে গিয়েছেন। কেউ আবার পায়ে হেঁটেও স্কুলে যান। রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি আর মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন চলতে দেখা যায়নি। নগরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে লাঠি হাতে নিয়ে পিকেটিং করতে দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের। তারা ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী গাড়ি চলতেও বাধা দিচ্ছেন।
আম্বরখানা-টিলাগড় সড়কে অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় সকালে এ সড়কে শিক্ষার্থী-অভিভাবকের ভিড় থাকে। কিন্তু অটোরিকশাসহ কোন ধরণের যানবাহন না পেয়ে তারা বিপাকে পড়েন।
সালমা সুলতানা নামে এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মেয়ের ক্লাস শুরুর সময় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রায় আধাঘণ্টা ধরে সড়কে দাঁড়িয়ে কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। মেয়ে আমার কান্নাকাটি করছে। এভাবে আমাদের জিম্মি করে কীসের আন্দোলন।’
জাকির মিয়া নামে আরেক অভিভাবক বলেন, ‘রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চললেও এগুলোতে গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পাশাপাশি রিকশা চলাচলেও বাধা দিচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা। কিন্তু এসব দেখার কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না।’
তবে ব্যক্তিগত গাড়ি আটকানো হচ্ছে না দাবি করে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ বলেন, ‘সিলেটের বাইরের অনেক গাড়িচালক আজকের কর্মবিরতির কথা জানে না। তাই তারা গাড়ি নিয়ে চলে আসছে। তাদের ধর্মঘটের কথা বুঝাতেই শ্রমিকরা কয়েকটি মোড়ে অবস্থান নিয়েছে।’
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ দফা দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। দাবি মানা না হলে বুধবার থেকে পুরো সিলেট বিভাগে ধর্মঘট পালন করা হবে।’
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ড. মোশাররফ হোসেন আশা করছেন বৈঠক ফলপ্রসূ হবে এবং পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন।