নিজস্ব সংবাদদাতা : বাংলাদেশের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন শিল্পের পথিকৃৎ ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলাম। তার প্রতিষ্ঠিত ওয়ালটন এখন বিশ্বের কাছে শিল্পসমৃদ্ধ বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ তুলে ধরছে। বাংলাদেশও যে পারে, বিশ্বের কাছে সেটিই প্রমাণ করছে মেড ইন বাংলাদেশ খ্যাত ওয়ালটন পণ্য। আজ এই মহান ব্যক্তির তৃতীয় প্রয়াণ দিবস। ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।কর্মজীবনে অত্যন্ত সফল ব্যক্তিত্ব আলহাজ এস এম নজরুল ইসলাম ১৯২৮ সালের ৭ মে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গোসাই জোয়াইর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম এস এম আতাহার আলী তালুকদার এবং মায়ের নাম মোসাম্মৎ শামছুন নাহার।প্রথমে বাবা এস এম আতাহার আলী তালুকদারের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত হলেও স্বাধীনতার পর আলাদাভাবে ব্যবসা শুরু করেন এস এম নজরুল ইসলাম। সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন সব মহলে। যে ব্যবসাতেই হাত দিয়েছেন, সফলতা পেয়েছেন সেখানেই।দেশের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে ইলেকট্রনিক্স পণ্য পৌঁছে দিতে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রেজভী অ্যান্ড ব্রাদার্স, সংক্ষেপে আরবি গ্রুপ। পরবর্তী সময়ে নাম বদলে হয়ে যায় ওয়ালটন গ্রুপ।একসময় দেশে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয় ওয়ালটন পণ্যের। এরপর শুরু হয় একই গ্রুপের আরেক ব্র্যান্ড মার্সেলের পথ চলা। নজরুল ইসলামের দূরদর্শিতা ও সুযোগ্য পরিচালনায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ওয়ালটন পণ্যের সুনাম ও খ্যাতি আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে। এ গ্রুপকে এগিয়ে নিতে বিশাল ভূমিকা রাখছেন তার মেধাবী সন্তানরা২০০৮ সালে গাজীপুরের চন্দ্রায় নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন শুরু হয় ওয়ালটন পণ্যের। সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চ মানের পণ্য এবং সেবা দিয়ে ওয়ালটন জয় করেছে গ্রাহকের আস্থা।বর্তমানে বাংলাদেশে শিল্পায়নের মডেল হয়ে উঠেছে ওয়ালটন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন করে মুগ্ধ হয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ ওয়ালটনের উদ্যোগকে অভিহিত করেছেন প্রকৃত শিল্প হিসেবে।শুধু দেশেই বাজারজাত করে সীমাবদ্ধ থাকেনি ওয়ালটন, উদ্যোগ নেওয়া হয় বিদেশে রপ্তানির। প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয় ওয়ালটন পণ্যের রপ্তানি। বর্তমানে প্রায় ৩৫টি দেশে যাচ্ছে ওয়ালটন পণ্য।ওয়ালটন কারখানা কমপ্লেক্স হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদন ও গবেষণাগার। প্রায় ৩৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তৈরি হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি।ব্যবসায়িক সাফল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আলহাজ এস এম নজরুল ইসলাম বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা সমবায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, টাঙ্গাইল জেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের পরিচালক এবং টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় জমি বন্ধকি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তিনি।তিনি তার গ্রামে এস এম নজরুল ইসলাম কারিগরি বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এতিমখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সহযোগিতা করতেন। তিনি গ্রামের দুস্থ, বৃদ্ধ ও নারীদের জন্য ভাতা প্রকল্প চালু করেছেন।মহৎপ্রাণ ব্যক্তি নজরুল ইসলাম ২০১৭ বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাতে না ফেরার দেশে চলে যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।