ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল শনিবার। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির কাছে এ সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে দলের সাধারণ সম্পাদককেই। তাই নেতা বাছাইয়ের ধরনটা পাল্টে ফেলছেন শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে ত্যাগী, যোগ্য, তৃণমূলের গ্রহণযোগ্য, সৎ, সাহসী ও গুণের অধিকারী, যাকে নিয়ে নেই কোনো বিতর্ক, যিনি আন্তর্জাতিক লবিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন, তেমনি একজন নেতাকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিয়ে আসার কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে দলটির সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে আলোচনায় রয়েছেন অনেকেই।
১৯৮১ সাল থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে ছাড়া বিকল্প কাউকে ভাবতে পারছেন না
তৃণমূলসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক দলের এবারের সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন, তা নিয়ে বাড়ছে কৌতূহল। ইতিমধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে চমক নিয়ে আসছেন শেখ হাসিনা। তবে কেউ কেউ বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন।
দলীয় সূত্র বলছে, পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে শেখ হাসিনা আগামী কাউন্সিলে চমক নিয়ে আসছেন। এসব নেতার মধ্যে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন। তবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, কাজী জাফর উল্যাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদা মাহমুদ চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সবকিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সবার দৃষ্টি দলের সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে। এ পদে প্রার্থীদের অনেকের ইচ্ছা থাকতে পারে। অন্তত গণতান্ত্রিক দল হিসেবে। আমার জানা মতে, এখানে অন্তত ওই পদের ১০ জন প্রার্থী আছেন। তারা এ পদে আসতে চান। কে হবেন, এটা নেত্রীর ইচ্ছা এবং কাউন্সিলরদের মতামতের ওপর নির্ভর করছে। সবকিছুর প্রতিফলন ঘটবে দ্বিতীয় অধিবেশনে, বেলা ৩টার পর যেটা শুরু হবে সেখানে।
আপনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন- এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সময়ের আলোকে বলেন, গুঞ্জন সবসময় গুঞ্জনই। সম্মেলনে সব বিচার-বিবেচনা করে শেখ হাসিনাই ঠিক করেন, দলের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন? এ বিষয়ে ডেলিগেটরাও শেখ হাসিনার কাছে আস্থা রেখে তাকেই দায়িত্ব দেন। তাই তিনিই ঠিক করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক : সম্মেলনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও আসতে পারে ব্যাপক পরিবর্তন। এ পদ থেকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে যেতে পারেন কেউ কেউ। একই সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে প্রোমোশন দিয়ে দুয়েকজনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আনা হতে পারে। তবে ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হতে পারে। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, একেএম এনামুল হক শামীম, এসএম কামাল হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আনা হতে পারে।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দলে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। প্রত্যেক কর্মী-সমর্থক চান শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে আছেন, ততদিন দলকে নেতৃত্ব দেবেন। তবে অন্যান্য পদে বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের সুপ্রিম লিডার, তিনি ঠিক করবেন কে কোন পদে থাকবেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক : এ পদেও পরিবর্তন আসছে। বর্তমানে যারা সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে পদোন্নতি পাবেন। এ পদে থাকা অন্যদের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। তাদের দলের বর্তমান বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, শেখ ফজলে নূর তাপস, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও সংসদ সসদ্য তানভীর শাকিল জয়ের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক সময়ের আলোকে বলেন, সম্মেলনে দলে বেশকিছু চমক আসবে। কারণ বঙ্গবন্ধুকন্যা সবসময়ই চমক পছন্দ করেন। আগামীতে দলে তারাই নেতৃত্বে আসবেন, যারা আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত, ত্যাগী, যোগ্য ও সৎ। একই সঙ্গে যেসব নেতার সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, সুসম্পর্ক রয়েছে, যারা নেতাকর্মীদের কথা ভাবেন, সময় দেন, তাদের সমস্যা সমাধান করেন, তারাই নেতৃত্বে আসবেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সম্পাদকীয় পদে আলোচনা রয়েছে শেখ পরিবার নিয়েও। আওয়ামী লীগের আগের কয়েকটি জাতীয় সম্মেলনের মতো এবারও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোতে আসছেন কি না- এ নিয়ে নেতাকর্মীদের কৌতূহল রয়েছে।
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের জন্য নেত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। এর বাইরে নেত্রী যাকে মনে করবেন তাকে কমিটিতে রাখবেন। সব সিদ্ধান্ত নেত্রীর। তাই তিনি যেখানে রাখবেন সেখানেই থাকব।
প্রচার ও প্রকাশানা সম্পাদক : বর্তমান প্রচার ও প্রকাশানা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এ পদেই থাকছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে আলোচনায় রয়েছেন আমিনুল ইসলাম, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াও।
দফতর সম্পাদক : সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন ইকবাল হোসেন অপু ও সায়েম খান।
বন ও পরিবেশ সম্পাদক : বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে যারা আলোচনায় রয়েছেন তারা হলেন- দেলোয়ার হোসেন, হারুনুর রশিদ, শামসুন নাহার চাঁপা, রিয়াজুল কবির কাওসার।
আইন সম্পাদক : আইন সম্পাদক পদে নজিবুল্লাহ হিরুই থাকছেন- এমন শোনা যাচ্ছে। তবে সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার ও অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের নামও শোনা যাচ্ছে।
মহিলাবিষয়ক সম্পাদক : মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে আসতে পারেন মারুফা আক্তার পপি অথবা যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল।
আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক : আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ড. সাম্মি আহমেদই থাকছেন- এমনটা শোনা যাচ্ছে। তবে অসীম কুমার উকিলেরও নাম শোনা যাচ্ছে।
কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক : কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক পদে ফরিদুন্নাহার লাইলী থাকতে পারেন অথবা অসীম কুমার উকিলও আসতে পারেন।
ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক : ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদেও আসবে পরিবর্তন। এ পদে ইকবাল হোসেন অপু ও হারুনুর রশিদের নাম শোনা যাচ্ছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুরই থাকছেন এমন শোনা যাচ্ছে। তবে এর বাইরেও সদস্য পদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে যারা যোগ্য সেখান থেকে কাউকে আনা হতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে আসতে পারেন অসীম কুমার উকিল। এ ছাড়া শামসুন নাহার চাঁপার নামও শোনা যাচ্ছে।
যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক : যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে হারুনুর রশিদই থাকছেন।
শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক : এ পদে গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণার নাম শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে মারুফা আক্তার পপির নামও।
সাংস্কৃতিক সম্পাদক : সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদেও আসছে পরিবর্তন। এ ক্ষেত্রে ডা. অরুপ রতন চৌধুরী, দীপংকর তালুকদার ও সানজিদা খানমের নাম বেশি উচ্চারিত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক : স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক পদে ডা. রোকেয়া সুলতানাই থাকছেন।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে যারা রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই থাকছেন। তবে বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হতে পারে।
এ জাতীয় আরো খবর..