রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন

বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরুর পর মেট্রোরেলের ৭ দিন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১১৯ বার পঠিত
অনলাইন নিউজ : ২৯ ডিসেম্বর মেট্রোরেল বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরুর পর যাত্রীর যে উপচেপড়া ভিড় ছিল তা কিছুটা কমে এসেছে। যাত্রার সপ্তম দিনে বুধবার উত্তরা উত্তর স্টেশনের নিচে যাত্রীর দীর্ঘ লাইন দেখা গেলেও উল্টো চিত্র ছিল আগারগাঁও স্টেশনে। যাত্রীরা এই স্টেশনে এসে সরাসরি চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় চলে যাচ্ছেন। সেখানে ছোটখাটো একটা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে নিচ্ছেন তারা।

যাত্রা শুরু করে সাতদিন পার করল মেট্রোরেল। এই সাতদিনের মধ্যে একদিন (মঙ্গলবার) ছিল মেট্রোরেলের সাপ্তাহিক ছুটি। সে হিসাবে যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচল করেছে ৬ দিন। প্রথম চার দিন যাত্রীর চাপ বেশি থাকলেও পরবর্তী তিনদিন সেই চাপ অনেকটাই কমে গেছে। এখন উত্তরা উত্তর স্টেশনের নিচে যাত্রীর লাইন থাকলেও আগারগাঁও স্টেশনের নিচটা অনেকটাই ফাঁকা।

রাজধানীর উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ী) স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬-এর প্রথম অংশ ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু হয় পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা করে যাত্রী পরিবহন করছে মেট্রোরেল। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ১০টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ ছিল মেট্রো ট্রেন চলাচল। ৩১ ডিসেম্বর রাতে খ্রিষ্টীয় নববর্ষকে স্বাগত জানাতে উড়ানো ফানুস বৈদ্যুতিক তারে আটকে থাকায় এই বিপত্তি দেখা দেয়।

বুধবার সরেজমিনে মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশনের নিচে যাত্রীর দীর্ঘ লাইন দেখা গেলেও উল্টো চিত্র ছিল আগারগাঁও স্টেশনের নিচে। প্রথম দিন এখানে যাত্রীর লাইন স্টেশন ছাড়িয়ে পাসপোর্ট অফিস পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। সেখানে এদিন ছিল ফাঁকা। যাত্রীরা এই স্টেশনে এসে সরাসরি চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় চলে যাচ্ছেন। সেখানে ছোটখাটো একটা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে নিচ্ছেন তারা। স্টেশনের কর্মীরা কিছুটা দক্ষ হয়ে ওঠায় টিকিট কাউন্টারের কাজেও গতি এসেছে।

আগারগাঁও স্টেশনের নিচে কর্মরত মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মী হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রথম চারদিন এখানে যাত্রীর অনেক লম্বা লাইন ছিল। পঞ্চম দিন থেকে সেই লাইন ছোট হতে থাকে। আজ (বুধবার) সকাল থেকে যাত্রীর কোনো লাইন নেই। যাত্রীর চাপ অনেকটাই কম।’

যাত্রীর চাপ কম থাকায় অবশ্য মেট্রো ট্রেনের যাত্রীদের ঘুরেফিরে দেখা, ছবি তোলা এমনকি ভিডিও ধারণের ব্যস্ততা ছিল বাধাহীন।

আগারগাঁও স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে সারোয়ার নামে এক কর্মী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মনে হচ্ছে এখানে আগতদের বেশিরভাগই প্রথম মেট্রোরেলের অভিজ্ঞতা নিতে আসছেন। তারা এখান থেকে মেট্রো ট্রেনে যাত্রা করে উত্তরা উত্তর স্টেশনে গিয়ে আবার টিকিট কেটে এখানে আসছেন। তাই এখানে যাত্রী কম। আর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে দুই ধরনের যাত্রী আসছেন। তাই সেখানে যাত্রীর চাপ বেশি।

‘উত্তরা থেকে অনেক যাত্রী এদিকে কাজে আসছেন। তারা সকালে ট্রেনে এসে সারাদিন কাজ করে বিকেলে বাসে ফিরে যাবেন।’

এই মেট্রোরেল কর্মীর বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় বেশ কয়েকজন যাত্রীর কথায়ও। আগারগাঁও স্টেশন থেকে উত্তরাগামী নন্দি নামে এক যাত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এতোদিন ভিড়ের ভয়ে এখানে আসিনি। আজ এখানে এসে অনেকটাই ফাঁকা পেয়েছি। শুধু টিকিট কাটার জন্য ছোট একটা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। এখন আমি উত্তরা যাব। ১২টার মধ্যেই আরেক ট্রেনে করে এখানে চলে আসব।’

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসা আরেক যাত্রী মতি হোসেন বলেন, ‘আমি, আমার স্ত্রী আর আমার মেয়ে আজ প্রথম মেট্রো ট্রেনে উঠব। প্রথম দিকে ভিড় ছিল বলে আজ এলাম। ওপারে গিয়ে আবার পরের ট্রেন ধরে চলে আসব।’

উত্তরা উত্তর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল দুটি সিঁড়ির সামনেই যাত্রীর দীর্ঘ লাইন। তবে যাদের এমআরটি পাস আছে তারা সরাসরি সিঁড়ি বেয়ে স্টেশনে চলে যাচ্ছেন। নিরাপত্তা কর্মীরাও কোনো বাধা দিচ্ছেন না।

টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাদের বেশিরভাগই অফিস বা কাজের উদ্দেশ্যে শহরের মূল অংশে যাচ্ছেন। লাইনে অবশ্য আগারগাঁও স্টেশন থেকে আসা ফিরতি যাত্রীও ছিলেন।

সালেহ আহম্মেদ নামে এক যাত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি থাকি টঙ্গীতে আর অফিস কারওয়ান বাজারে। দুদিন ধরে মেট্রো ট্রেনে চেপে অফিসে যাওয়া-আসা করছি।’

বাবু নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীকে দেখতে যাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে মেট্রোতে যাওয়াটাই ভালো মনে করছি। নিচে লাইনে ১৫ থেকে ২০ মিনিট আর ট্রেনে ১০ মিনিট- সব মিলিয়ে ৩০ মিনিটে পৌঁছে যাব। অন্যভাবে গেলে তো লেগে যাবে তিন ঘণ্টা।

উত্তরা উত্তর স্টেশনকে কেন্দ্র করে মেট্রোরেলের সিঁড়ির একটু দূরেই গড়ে উঠেছে ১৫-২০টি ভ্রাম্যমাণ দোকান। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে তাদের বেচাকেনা। মূলত মেট্রোর যাত্রীদের কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এসব দোকানে চা, চিপস, বিস্কুট, পেয়ারা, মুড়ির বিকিকিনিও বেশ জমজমাট।

চা বিক্রেতা জজ মিয়া বলেন, ‘দুদিন হলো এই চা-বিস্কুটের দোকান দিছি মামা। আগে বাসের হেলপারি করতাম। এখন বেলা ১ পর্যন্ত এই দোকান করি। যদি এখানে ব্যবসা ভালো হয় তাহলে হেলপারি ছেড়ে দেব। এই দুই দিন মোটামুটি চলতাছে। আমার মতো এখানে আরও ২০ টার মতো দোকান হয়ে গেছে।’

পাশেই পেয়ারা কেটে মাখিয়ে বিক্রি করছেন চান নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘স্টেশনের সিঁড়ির নিচে আমাগো বসতে দেয়নি পুলিশ। তাই পাশের এই জাইগায় বইছি। বেচাকেনাও খারাপ হইতাছে না। দেহি কয়দিন এইহানে বইতে পারি।’

২৮ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি সোমবার পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন যাত্রী পরিবহন ও এমআরটি পাস বিক্রি করে মেট্রোরেল আয় করেছে ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৩০০ টাকা। এরপর মঙ্গলবার ছিল মেট্রোরেলের সাপ্তাহিক ছুটি দিন। আর বুধবারের হিসাব তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) তথ্য বলছে, বাণিজ্যিকভাবে মেট্রোরেল চালুর প্রথম দিন ২৯ ডিসেম্বর ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫২০, দ্বিতীয় দিন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮০, তৃতীয় দিন ১২ লাখ ৩১ হাজার ৭১০, চতুর্থ দিন ৯ লাখ ১৬ হাজার ৩৪০ এবং পঞ্চম দিনে মেট্রোরেলের আয় হয়েছে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৪১০ টাকা। বর্তমানে প্রতিদিন ১০টি ট্রেন চলাচল করছে।

ডিএমটিসিএল-এর ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পাবলিক রিলেশনস) নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘সপ্তাহে একদিন (মঙ্গলবার) বন্ধ থাকার পর আজ আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত কত যাত্রী মেট্রো ট্রেনে উঠেছেন এবং আজ পর্যন্ত কত টাকা আয় হয়েছে সেটা এখনই বলতে পারছি না।

‘আমাদের বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে হিসাব নিয়ে বলতে হবে। তাছাড়া বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দুই স্টেশনে এমআরটি পাস বিক্রি হচ্ছে। তাই আজ (বুধবার) কত আয় হলো সেটা আগামীকাল জানা যাবে। তবে প্রথম দিন থেকে পরে দিনগুলোতে আমাদের আয় ক্রমশ বেশি হচ্ছে। কারণ মানুষ এখন এমআরটি পাস বেশি কিনছে।’

এদিকে মেট্রোরেল থেকে আয়ের কিছুটা তথ্য পাওয়া গেলেও ব্যয়ের হিসাব এখনও জানা যায়নি। ডিএমটিসিএল থেকে জানা যায়, মেট্রোরেলের দৈনিক খরচের হিসাব পেতে কমপক্ষে এক মাস সময় লাগবে। মাসে কত টাকার বিদ্যুৎ খরচ হলো, কী পরিমাণ জনবলের বেতন-ভাতা দেয়া হলো- এসব হিসাব পাওয়া যাবে এক মাস পর।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com