বিডি ঢাকা অনলাইন ডেস্ক
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের কাজলকেশর গ্রামের ‘স্বপ্নের বাড়ি’। দূর থেকে দেখলে বাড়িটির বিশেষত্ব বোঝার উপায় নেই। যতই কাছাকাছি হবে, ততই বাড়িটির ভেতর দেখার মোহ তৈরি হবে। বাড়িটি দেখতে আসা কয়েকজন উৎসুক ব্যক্তিকে দেখা গেল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেয়ালে আঁকা চিত্রগুলোকে অবলোকন করতে। বাড়ির আঙিনায় থাকা বাহারি ফুলের গাছ দেয়ালের চিত্রগুলোকে অন্যরকম মাত্রা যুগিয়েছে।
এই ‘স্বপ্নের বাড়ি’র কারিগর সাহিদা খাতুন। যিনি নিজের পুরো শিল্পসত্তা ঢেলে দিয়ে সাজিয়েছেন তারি বাড়িকে। দেড় বিঘা জমির মধ্যে ১৫ কাঠাজুড়ে বাড়িটি। পাকা নয়, মাটির বাড়ি। আর মাটির বাড়িকেও যে শিল্পম-িত করে তোলা যায়, তার উদাহরণ ‘স্বপ্নের বাড়ি’। সাহিদা খাতুন মনের মাধুরী মিশিয়ে পরিপাটি করেই সাজিয়ে তুলেছেন নিজের বাড়িটিকে। ভুটভুটিচালক মোমিনুল ইসলামের স্ত্রী সাহিদা খাতুন তার এই শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, অর্থ নয়, শৈল্পিক মন থাকলেই সম্ভব।
প্রত্যন্ত এলাকায় অবসর সময়ে ধীরে ধীরে বাড়িটিকে সাজিয়েছেন সাহিদা। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে যেন একটি টিনের চালা দিয়ে একটি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে; কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে অন্যরকম দৃশ্য।শৈল্পিক চিন্তা চেতনা দিয়ে সাজানো বাড়ির প্রবেশমুখ। দেয়ালে দেয়ালে সাহিদা খাতুন হাতের সুনিপুণ ছোঁয়া দিয়ে তৈরি করে রেখেছেন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ডিজাইন। আরো রয়েছেÑ গ্রামবাংলার আবহমান চিত্র, বঙ্গবন্ধু টানেল, বাংলাদেশের মানচিত্র, শহীদ মিনার, শীতের সকালে খেজুরের গাছে টাঙানো হাঁড়ি। এছাড়াও জাতীয় ফল, ফুল ও বিভিন্ন রকমের গ্রামীণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন রঙতুলির আঁচড়ে। বাদ যায়নি রাজশাহীর পানের বরজের দৃশ্যও। বাড়ির আঙিনা বিভিন্ন রকমের ফুল দিয়ে সাজানো। একপলক দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাবার কথা যে কারোরই।
এরই মধ্যে সাহিদা খাতুনের ‘স্বপ্নের বাড়ি’র কথা আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখতেও আসছেন অনেকেই। স্বপ্নের বাড়ি দেখতে আসা মোস্তফার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই রকম বাড়ি এখানে আর একটিও নেই। বাড়িটি দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে।
দেখতে আসা আরেকজন লুৎফর রহমান বলেন, গ্রামীণ এলাকায় যে এইরকম একটি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে, এটা কল্পনার বাইরে। আমি অনেক জায়গায় ঘুরেছি; কিন্তু এইরকম বাড়ি দেখিনি। এই বাড়িটি গোছানো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। বাড়িটির কারুকাজ দেখে তার মনটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বলে জানান তিনি।
নেজামপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য তোসলিম উদ্দিন বলেন, সাহিদা খাতুন সবসময় বাড়িটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন। আর পাঁচজন থেকে তার চিন্তাভাবনা অন্যরকমের। তিনি বলেন, কাজলকেশর গ্রামের এই একটা বাড়ি সাজানো হয়েছে। ভালো কিছু করতে গেলে একটু সময়ের দরকার। তিনি বলেন, নিজের মনের মধ্যে কল্পনা না থাকলে এইরকমভাবে ডিজাইন করা সম্ভব নয়। আমি চাই আমার এলাকায় সাহিদাকে দেখে আশপাশের অন্যরাও যদি তাদের বাড়িটিকে সাজিয়ে রাখে তাহলে এই এলাকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অনেকেই দেখতে আসবে।স্বপ্নের বাড়ি তৈরির কারিগর সাহিদা খাতুন বলেন, বিয়ের পর থেকেই চিন্তা করছিলাম সামর্থ্যরে মধ্যেই, হোক না তা মাটির, সুন্দর করেই বাড়ি বানাব। আমি নিজ হাতে বিভিন্ন চিত্রকর্ম এঁকে বাড়িটি সাজিয়েছি। বাড়ির আঙিনাটাও বিভিন্ন রকমের ফুলগাছ দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করেছি। পরিবারের সকলের সহযোগিতায় বাড়িটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখতে পারছি। তিনি বলেন, বাড়িটি দেখে যখন কেউ ভালো বলে, তখন নিজের কাছে অনেক ভালো লাগে। সাহিদা বলেন, আমি এই বাড়িতে যতই কাজ করি না কেন, একটুও ক্লান্তি লাগে না।
এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করা সাহিদা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আঁকাআঁকির বিষয়ে তার কোনো প্রশিক্ষণ নেই। প্রযুক্তির কল্যাণে অর্থাৎ মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ভিডিও দেখে নিজেই আঁকিয়ে হয়ে উঠেছেন। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে দেয়ালের চিত্রগুলো এঁকেছেন দুই সন্তানের জননী সাহিদা খাতুন। তিনি জানান, এ কাজে তার স্বামী তাকে সাপোর্ট দিয়ে আসছেন, কোনো দিন বাধা দেননি। সন্তানরাও সহযোগিতা করে। দুটি সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে, বলেন তিনি।
সাহিদা খাতুন বলেন, বাড়িটি দেখতে অনেকেই আসেন। অনেকে তাদের মতামত দেন। সেই মতামতগুলো নিয়েই আগামী দিনে আরো সুন্দর করে বাড়ির চিত্রকর্ম তৈরি করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রতিটা মানুষই সুন্দরভাবে জীবনযাপন করুক এবং সৌন্দর্য নিয়েই বেঁচে থাকুকÑ এ প্রত্যাশাও সাহিদা খাতুনের।