অনলাইন নিউজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আন্দোলন, ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা বা বিদেশিদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। নৌকা সারা জীবন উজান ঠেলেই এগিয়ে যাবে। অনেকে আন্দোলনের কথা বলে। আবার ভিসানীতি বা নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখায়। আমার স্পষ্ট কথা, দেশ আমাদের, দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। আমাদের এসব ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরনো বাণিজ্যমেলা মাঠে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন-পরবর্তী সুধী সমাবেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, আজকের বাংলাদেশের এত উন্নয়ন কেন হয়েছে? কারণ দেশে একটা গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। অথচ এখন অনেকে বলেন, তারা গণতন্ত্র উদ্ধার করবেন। আমরা জানি তারা কী গণতন্ত্র উদ্ধার করবেন। এখন আবার তারা অনেকে আন্দোলনের কথা বলে। ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয় দেখায়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে যারা আন্দোলনের নামে রোজই আমাদের ক্ষমতা থেকে ফেলে দিচ্ছে, আমি তাদের বলব, মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। ভয়কে জয় করে বাংলাদেশের জনগণ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। নৌকা যেভাবে সারা জীবন উজান ঠেলে এগিয়েছে, সেভাবেই এগিয়ে যাবে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, নৌকা মার্কা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছে। এই নৌকাটি স্মার্ট বাংলাদেশ দেবে। আত্মবিশ্বাস রেখে জনগণের কল্যাণে কাজ করলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব। এটা আমরা দেখেছি। তবে তার জন্য স্থিতিশীলতা দরকার। ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের উন্নয়নে এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে দেশের মানুষের জন্য তার আরেকটি উপহার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ বিশেষ আনন্দের দিন। যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যুক্ত হলো নতুন একটি মাইলফলক। আজ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করা হয়েছে। এটা আপনাদের উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম। ঢাকা শহরের, বিশেষ করে এয়ারপোর্ট, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, ফার্মগেট, মগবাজার ও কমলাপুর এলাকার যানজট নিরসন এবং যোগাযোগব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়নে এটি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে। এর মাধ্যমে ঢাকা মহানগরবাসীর দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন ঘটল। তিনি বলেন, ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের যে একটি আকাক্সক্ষা, এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে তা পূরণ হবে। আমরা আজ যত দূর পর্যন্ত (সম্ভব) করলাম, পরবর্তী সময়ে বাকিটাও হয়ে যাবে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়কে বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বর্ণযুগ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৭ সময়কালে দেশ ছিল অন্ধকারে। এখন আর সেটা নেই। বাংলাদেশ আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি, সেটা একের পর এক পূরণ করে যাচ্ছি। কবি সুকান্তের ভাষায়, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আজ একটা সাময়িক সমস্যা চলছে। আমাদের ওপর অর্থনৈতিক ধাক্কা এসেছে। এ জন্য আমি বলেছি, দেশে কোনো অনাবাদি জমি থাকবে না। নিজের ফসল নিজে ফলাব। নিজের খাবার নিজে উৎপাদন করব। কারও কাছে হাত পাতব না। জাতির পিতা বলতেন, ভিক্ষুকের জাতির উন্নতি হয় না। জাতির পিতার এই স্বাধীন দেশের একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। তাদের ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি। বেকারদের কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছি। সরকারি চাকুরেদের মতো সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন চালু করেছি। শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎও যেন আলোকিত হয়, আমরা সেই উদ্যোগই নিচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশকে দাবায়ে রাখা যায় না। মেট্রোরেল, উড়ালসড়ক উদ্বোধন করলাম। এগুলো সবই জনগণের স্বার্থে। সারা দেশে যোগাযোগব্যবস্থার অভাবনীয় উন্নতি করেছি। আমরা চাই, আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে।
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুধী সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। অনুষ্ঠানস্থলে তাদের স্বাগত জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সুধী সমাবেশস্থলেও প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় তার সঙ্গে শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নুর তাপস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান উপস্থিত ছিলেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা হাফেজ মুহিবুল্লাহিল বাকী মোনাজাত পরিচালনা করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এরপর ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি’ প্রকল্পের বিষয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রকল্পটির বিনিয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধি লি গুয়াংজিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষুদে সংস্করণ উপহার দেন। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বক্তব্যও দেন।