আলিফ হোসেন,তানোরঃ রাজশাহীর তানোরের বিভিন্ন এলাকায় আলুখেতে বায়ার কোম্পানির নিম্নমাণের বালাই নাশক এন্টাকল ( ব্যাচ নম্বর ০০৯৯) প্রয়োগ করে শত শত কৃষক সর্বশান্ত হতে চলেছে।এদিকে আলু চাষের শুরুতেই এমন ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। ওদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বায়ার কোম্পানীর ডিলারদের গ্রেফতার ও দৃস্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেছেন। এবার আলুর ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে আলু চাষ শুরু করেছে। কৃষকরা জানান, আলুর জমিতে যেসকল কৃষক এন্টাকল বালাইনাশক বিষ প্রয়োগ করেছেন তাদের আলু গাছ পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে এক প্রকারের হতাশায় রয়েছেন আলু চাষি কৃষকরা। তারা জমি, আলুর দাম, সার-বিষ, সেচের খরচ, শ্রমিক বিবেচনা করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার দাবি করেছেন। কারণ সিংহভাগ কৃষক আলু চাষের জন্য ঋণগ্রস্থ হয়েছেন। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, তানোরের তালন্দ ইউপির বিলশহর মাঠে মোখলেসুর রহমানের ৪ বিঘা,পাঁচন্দর ইউপির চিমনা মাঠে শাহিন আলমের ৭ বিঘা, তানোর পৌর এলাকার সেন্দুকায় মাঠে মুজাহারের ৮ বিঘা, সরনজাই মাঠে আকবরের ১০ বিঘা, তানোর পৌর সদরের সেকেন্দার আলীর ৭ বিঘা জমির আলুর গাছ নষ্ট হয়েছে। এছাড়া এন্টাকল ছত্রাকনাশক বিষ ব্যবহারে আরও কৃষকের জমির আলু নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে, গত মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জমি পরিদর্শন করেছেন বায়ার কোম্পানীর প্রতিনিধিগণ বলে জানান, তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার একটি কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের আলুক্ষেত পরিদর্শন করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে থেকে একজন প্রতিনিধি, বায়ার কোম্পানির একজন প্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি অফিসের প্রতিনিধির মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত সোমবার সরেজমিন তানোরের চিমনার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, শাহিন আলমের প্রায় ৭ বিঘা জমির আলু নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি জানান, ‘০০৯৯’ এই ব্যাচের এন্টাকল প্রতিষেধক দেওয়ার কারণে পুরো জমির আলু পুড়ে গেছে। শাহিন আলম আরও জানান, ‘চার বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছেন তিনি। কদিন আগে আলুর জমিতে ‘০০৯৯’ এই ব্যাচের এন্টাকল ছত্রাকনাশক বিষ দেন। এর ফলে আলু পাতা পুড়ে গাছ মারে যাচ্ছে।’তিনি জানান, আলুর গাছ মারা যাওয়ার বিষয়টি ডিলারকে জানানো হয়েছিল। তিনি কোম্পানির লোকজন নিয়ে জমি পরিদর্শনের কথা জানিয়ে ছিলেন। কিস্তু আসেননি। পরে তিনি মোবাইলে বলেন, জমি দেখতে এসে একটু সমস্যা হয়েছে। আলুর ক্ষতির জন্য ১০ জন কৃষক যে টাকা পাবে, আপনিও সেই টাকা পবেন। তিনি আরও জানান, এবছর আলুর বীজের দাম বেশি ছিলো। তার পরেও কৃষক বেশী টাকা দরে আলু কিনে জমিতে রোপন করেছেন। এভাবে আলু চাষের শুরুতে নষ্ট হয়ে গেল কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আলু চাষি এমদাদ জানান, দুপুরে কৃষি কর্মকর্তারা এসে আলুর জমি পরিদর্শন করেছে। তারা জমির মালিক ও আশে-পাশের আলু চাষিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বায়ার কোম্পানির প্রতিনিধিদের আসার কথা রয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, তানোর গোল্লাপাড়া বাজারের সৈয়ব আলী ট্রেডার্স এর মালিক সৈয়ব আলী বায়া’র কোম্পানির পরিবেশক (ডিলার)। তার মাধ্যমে এন্টাকল নামক ছত্রাকনাশক ঔষুধ নেয়া হয়েছিল। পরে আলু চাষীরা জমিতে স্প্রে করে। এর পরে আলুর গাছ পুড়ে যায়। কৃষক মোখলেসুর রহমান বলেন, কেশরহাট বাজারের মেসার্স আরাফাত ট্রেডার্স থেকে বায়ারের এন্টাকল কিনেও অসংখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এবিষয়ে বায়া’র কোম্পানির পরিবেশক সৈয়ব আলী ট্রেডার্সের মালিক সৈয়ব আলী বলেন, কোম্পানির লোকজনদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা সরেজমিনে তদন্ত করছে। তিনি বলেন, এর দায় তাদের নয় এটা কোম্পানির দায়,কারণ তারা যেই মাল দেন তারা সেই মাল বিক্রি করেন। এবিষয়ে তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, গত মঙ্গলবার কোম্পানির লোকজন আসার কথা ছিল। বিষয়টি নিয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা বিষয়টি মাঠ পর্যায় থেকে দেখছে আসলে কি কারণে এমনটি হলো বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।