বিডি ঢাকা ডেস্ক
আগামী রমজানে অবশ্য-প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। দেশের মানুষ যেন স্বস্তিতে থাকতে পারে সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় শপথ নেওয়ার পরপরই শেখ হাসিনা নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াহয়। এরই ধারাবাহিকতায় অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা; ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় চলছে তাদের বৈঠক। কড়া নজরদারির পাশাপাশি দেশজুড়ে চালানো হচ্ছে বিশেষ অভিযান। সে সঙ্গে রোজার পণ্যগুলোর সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানি সহজীকরণ ও শুল্ক কমানোর উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফে।
কিন্তু এরপরও পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, আটা, চিনি, ছোলা, খেজুরের মতো পণ্যগুলোর বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে বিপুল মুনাফা লুটে নিতে সক্রিয় অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। প্রতি বছরই পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। বারবার একই কায়দায় কারসাজি করে পার পেয়ে যাওয়ায় এ প্রবণতা ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। এ বছর অনেক আগে থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেটগুলো। রোজার দেড় মাস আগেই চাল, ডাল, ছোলা, তেল, চিনি, খেজুর, মাংসসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা উদ্যোগ থাকলেও কারসাজিকারীদের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন। তারা যে কোনো কৌশলে অতি-মুনাফার ফন্দি আঁটেন। তাদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটিগুলো দূর করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকাও জরুরি। এর পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে চাহিদা ও সরবরাহের সঠিক তথ্য থাকতে হবে। সেসব তথ্য সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক কিংবা স্বাভাবিকের কাছাকাছি ধরে রাখাটাও চ্যালেঞ্জ। প্রয়োজনে আমদানি ও আমদানিতে শুল্ক কমানো যেতে পারে। তবে অবশ্যই কারসাজিকারিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নইলে কারসাজি আরও বাড়বে।গত বুধবারও নওগাঁর মান্দায় নিত্যপণ্যের বিপুল পরিমাণ অবৈধ মজুদ জব্দ করা হয়েছে। উপজেলার পরাণপুর ইউনিয়নের সোনাপুর ও কালিতলা বাজারে অভিযান চালিয়ে উপজেলা প্রশাসন দেখতে পায়, আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে মাসুদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দুটি গোডাউনে একটিতে ১৩ হাজার ১৩৫ লিটার সয়াবিন তেল, ১ লাখ ২৮ হাজার কেজি গম, ৮ হাজার কেজি আটা, ২৭ হাজার ১৭৫ কেজি ছোলা, ৪ হাজার ৫০ কেজি চিনি, ৪ হাজার ৭০০ কেজি বুট, ৫ হাজার ৯২০ কেজি পামওয়েল এবং ১ হাজার ২০০ কেজি লবণ মজুদ করা হয়েছিল। আরেকটি গুদামে ৭ হাজার ৪৭৪ কেজি ময়দা, ৩ হাজার ৬৬৭ লিটার সরিষার তেল, ১ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কেজি গম, ৫ হাজার ৪০৪ লিটার পামওয়েল, ৪ হাজার ৫৩ লিটার সয়াবিন তেল, ১ হাজার ৬০০ কেজি মুড়ি, ২৩ হাজার ৭৫ কেজি অ্যাংকর ডাল (ছোলা), ৩৭৫ কেজি ছোলা, ৪ হাজার ৫৭৫ কেজি মসুর ডাল এবং ৮ হাজার ৭০০ কেজি চিনিসহ বিপুল পরিমাণ গোখাদ্য পাওয়া যায়। অবৈধভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদের অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মাসুদ রানাকে আটক করেন ইউএনও।