বিডি ঢাকা ডেস্ক
দেশের বাতাস দূষণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর সচেতনতামূলক নির্দেশনা প্রচার করেছে। জানানো হয়েছে, বর্তমানে বায়ুদূষণ বায়ুমান সূচক ৩০০-এর বেশি হওয়ায় অসুস্থ, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। পাশাপাশি ছোট-বড় সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে। পরিস্থিতি সহনীয় হলে এ সতর্কতা প্রত্যাহার করা হবে। দেরিতে হলেও সিদ্ধান্তটি যথার্থ। তবে সতর্কতার পাশাপাশি দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার ব্যাপারেও দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রতিবছর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বায়ুদূষণ আগের বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও পরিস্থিতির উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। ফলে বায়ুদূষণের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রায়ই ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে থাকে। অন্যান্য শহর তো আছেই, এমনকি দেশের নির্মল বায়ুর শহরখ্যাত সিলেটের বায়ুদূষণও উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে বায়ুদূষণের হার ক্রমেই বাড়ছে, যার পেছনে রয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন দফতরের আন্তঃসমন্বয়হীনতার অভাব। এছাড়া অবৈধ ইটভাটাও বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। দায় রয়েছে সড়কে চলাচলরত ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অতিরিক্ত যানবাহনেরও। বায়ুদূষণের প্রভাবে শ্বাসজনিতসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বায়ুদূষণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, জানা সত্ত্বেও নিজস্ব লাভ-লোকসানের হিসাব মেলাতে গিয়ে আমরা সাধারণ মানুষও বায়ু বা অন্যান্য দূষণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছি। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়ার ব্যাপারে ভাবছি না। দূষণ কমাতে তাই রাজধানী ও অন্যান্য শহরে প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা দরকার। আমরা দেখছি, দেশের অধিকাংশ শহর ও পৌরসভায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। অধিকাংশ স্থানেই আগুন দিয়ে বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে, এতে দূষণ বাড়ছে। ঢাকার মাতুয়াইলে বর্জ্য পোড়ানোর ফলে ক্ষতিকর মিথেন গ্যাসের ক্রমাগত নির্গমন তো ওপেন সিক্রেট। বস্তুত সারা দেশেই বায়ুদূষণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায় পৌঁছেছে। এমন অবস্থায় রাজধানীসহ সারা দেশের পরিবেশ সুরক্ষায় সরকার সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।