বিডি ঢাকা ডেস্ক
দেশে বর্তমানে চারটি সড়কে যানবাহন থেকে টোল আদায় করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এর সঙ্গে নতুন করে আরো সাত সড়ককে টোলের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। সড়কগুলো হলো ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-সিলেট, সিলেট-তামাবিল, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ভাঙ্গা-বেনাপোল, ভাঙ্গা-বরিশাল ও ঢাকা বাইপাস। এর মধ্যে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সবার আগে টোল আদায় করা শুরু হতে পারে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং এর অধীন সংস্থা সওজ অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা-সিলেট, সিলেট-তামাবিল ও ঢাকা বাইপাস মহাসড়কের উন্নয়নকাজ চলমান। কাজটি শেষ হলেই এ পথে চলাচল করা যানবাহন থেকে টোল আদায় শুরু হবে। ঢাকা-চট্টগ্রামে টোল আদায় শুরু হবে মহাসড়কটিকে এক্সপ্রেসওয়ে মানে উন্নীতের পর। একইভাবে চার লেনে উন্নীতের পর টোল আদায় শুরু হবে ভাঙ্গা-বেনাপোল ও ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কে।
টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সাত মহাসড়কই পড়েছে ‘গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক’ শ্রেণীতে। ২০১৪ সালের টোল নীতিমালা অনুযায়ী এসব সড়কে যানবাহনের ভিত্তি টোল কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা। বর্তমানে এ নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। সংশোধিত খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ভিত্তি টোলের সঙ্গে প্রতি বছর সমন্বয় করা হবে ভোক্তা মূল্য সূচক (পরিবহন)। অর্থাৎ ভোক্তা মূল্য সূচক বাড়লে প্রতি বছর বৃদ্ধি পাবে টোলের হার।
অন্যদিকে আলাদা সার্ভিস লেনসহ ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কও চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ২০২৫ সালের জুনে ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে সম্পন্ন করার জন্য নির্ধারিত আছে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) পদ্ধতিতে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে ঢাকা বাইপাস মহাসড়ক। নির্মাণাধীন ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি জয়দেবপুর থেকে শুরু হয়ে দেবগ্রাম, ভুলতা হয়ে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত বিস্তৃত। চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে ও দুইপাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য পৃথক লেন নির্মাণ করা হচ্ছে, যার কাজ চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পিপিপি চুক্তি অনুযায়ী, নির্মাণ-পরবর্তী ২৫ বছর সড়কটি থেকে টোল আদায় করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল এবং ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়কটি পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সওজ অধিদপ্তর। চার লেনে উন্নীতের পর এ দুই সড়ক থেকেও টোল আদায় হবে।
চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এক্সপ্রেসওয়ে মানে উন্নীতের পরিকল্পনা করছে সওজ অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যে বর্তমানে একটি সমীক্ষার কাজ চলমান, যা আগামী মার্চে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। সমীক্ষা শেষে দ্রুতই মহাসড়কটির উন্নয়নকাজ শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা। এক্সপ্রেসওয়ে মানে উন্নীতের পর টোল আদায় শুরু হবে এ সড়ক থেকেও।
সাত মহাসড়কে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা কিন্তু এ সড়কগুলো থেকে এখনই টোল আদায় শুরু করছি না। আগে সড়কগুলোতে প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলোর উন্নয়ন করা হবে। সড়কগুলোয় প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত হিসেবে গড়ে তোলা, সার্ভিস লেনের মতো বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা রাখা, টোল প্লাজার মতো অবকাঠামো নির্মাণের পরই টোল আদায়ের কাজ শুরু করা হবে।’
বর্তমানে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক (ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে), ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক, প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম বন্দর সংযোগ সড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর থেকে শেরপুর পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার অংশে টোল আদায় করছে সওজ অধিদপ্তর। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছর এ চার মহাসড়ক থেকে টোল আদায় হয়েছে ২১৩ কোটি টাকা।