বিডি ঢাকা ডেস্ক
নেই আগের সেই ভিড় আর উৎসবমুখর পরিবেশ। তালা ঝুলছে জনপ্রিয় অনেক রেস্তোরাঁয়। যারা শতপদের ইফতার সামগ্রী নিয়ে হাজির হতেন, তারা বসেছেন ১৫ বা ২০ পদের খাবার নিয়ে। নেই তেমন ক্রেতাও। বেইলি রোডের ইফতার বাজারের এবার এমনই চিত্র। ইফতারির দোকানিরা বলছেন, এখানকার বাসিন্দাদের মনে এখনো আতঙ্ক। পাশাপাশি তাদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিভিন্নভাবে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বেইলি রোডের ইফতারির বাজার যেন কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডে এখনো পুড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসা দোকানিদের কেবলই হাহাকার।
বেইলি রোডের ইফতার বাজারের কথা বললেই চলে আসে ক্যাপিটালের ইফতারির কথা। মুখরোচক সব ইফতারি তৈরি করা ক্যাপিটাল এ বছর বিফ চাপ, কালো ভুনা, ব্রেন মাসালাসহ বেশ কিছু পদ করলেও অনেক পদই সেখানে নেই। বুধবার বিকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ক্যাপিটালের ইফতার বাজারে তেমন ক্রেতা নেই। একেবারেই অচেনা এক পরিবেশ। ক্যাপিটালের অন্যতম পরিচালক মো. বশিরউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, মানুষ ইফতার বাজারে আসতে চাইলেও আসছে না। একটা আতঙ্ক ছড়ানো আছে। দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু সেটির ভিন্ন রকম প্রচার হচ্ছে। খাবারের ব্যবসায়ীদের অনেকেই নিয়ম মেনে চলেননি। কিন্তু সেটি ঠিক করার জন্য তাদেরকে সময় দিতে হবে। আমরা ভ্যাট দিই, ট্যাক্স দিই। আগে থেকেই যারা দায়িত্বে থাকেন তারা যদি এখানকার ব্যবসায়ীদের অনিয়ম বা সমস্যাগুলো ধরিয়ে দিতেন তাহলে এই অবস্থা হতো না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের আরেক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল বেলি ডেলির সব কিছু ঠিক আছে। রাজউকের কর্মকর্তারা এসে কোনো ত্রুটি বের করতে পারেননি। শুধু ফায়ারের কাগজ নবায়ন সমস্যা ছিল সিস্টেমের কারণে। সেজন্য আমাদেরকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এভাবে হলে আমরা কিভাবে ব্যবসা করব? এমন আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে যে, ক্রেতারা চাইলেও আসছেন না।
বেইলি রোডের আগুনে পোড়া ভবনের উল্টো দিকেই আরেক খ্যাতিমান বেকারি সুইস। ইফতারে তারা বিক্রি করছে চিকেন কোপ্তা, চিকেন হানি গ্লোসিং, চিলি চিকেন, চিকেন ড্রামস্টিক, রেশমি জিলাপি, সুইস খাসির তেহারি, সুইস গরুর হালিমসহ আরও কিছু পদের খাবার। হালিম কিনছিলেন এলাকার বাসিন্দা মনোয়ার পাটোয়ারি। এখানকার ইফতার বাজার নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ইফতার বাজার নিয়ে হোটেল রেস্তোরাঁগুলো খোলা কিনা তা-ই অনেকে খবর রাখছেন না। অনেকে খোলা জানলেও আসছেন না। কারণ, এখানে এখনো জনমনে আতঙ্ক আছে। হোটেলগুলোও অনেকে বন্ধ রেখেছেন, কিছু আবার বন্ধও করা হয়েছে।
সুইসের বিক্রয়কর্মী মো. সোহেল বলেন, বিক্রি মোটামুটি। আগুন লাগার ঘটনার পর থেকে মানুষ তেমন বাইরে খেতে আসছেন না। ইফতার কিনতেও তাই ক্রেতা কম।
বেইলি রোডের ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি, নবাবী ভোজের মতো ইফতারির জন্য বিখ্যাত খাবারের দোকানগুলোতে এখনো তালা ঝুলতে দেখা গেছে। দু-একটি ভবনে জরুরি নির্গমনের সিঁড়ি তৈরির জন্য মার্কেট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নোটিশও দেখা গেছে।
বেইলি রোডের আরেক বিখ্যাত খাবারের দোকানের নাম মামা পেঁয়াজু। যদিও দোকানের আসল নাম প্যারাডাইস জুস বার। সেখানে ছোলা, আলুর চপ, পেঁয়াজুসহ বিভিন্ন ভাজাপোড়া ইফতারি পাওয়া যাচ্ছে। দোকানের মালিক আব্দুল লতিফের মুখে একই বেদনার কথা। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এতোটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে, মানুষ এখানকার কোনো রেস্তোরাঁয় আসছেন না। দুই-তিন তলা রেস্টুরেন্টে তো আরও না। আমাদেরকে গ্যাসের চুলা ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। তেলের পাম্পের চুলায় রান্না করছি। কুলিয়ে উঠতে পারছি না। তার ওপর ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ নানা সংস্থা থেকে জরিমানা তো আছেই। এভাবে চলতে থাকলে আমরা টিকতে পারব না।