সুব্রত দাশ (বিটু) কোলকাতা : ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে আজ থেকেই কার্যকর নির্বাচনী আচরণবিধি। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার আর কোনো জনকল্যাণমুখী প্রকল্প ঘোষণা করতে পারবে না।
এখন থেকে দেশটির আইনশৃঙ্খলার ভার চলে গেল নির্বাচন কমিশনের হাতে। ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির নিয়ন্ত্রণও ভোটপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলে যাবে কমিশনের হাতে।মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেছেন, সাত দফায় দেশের ৫৪৩ আসনে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৫ এপ্রিল। তা যাচাই-বাছাই হবে ২৬ এপ্রিল। মনোনয়ন তুলে নেওয়ার শেষ দিন ২৯ এপ্রিল এবং ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোট।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবরকম রয়েছে উল্লেখ করে রাজীব কুমার বলেছেন, ভোটে যতদূর সম্ভব কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হবে। মোট ২১০০ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। তারাই বাহিনী নিয়োগ করবেন। কোনো রাজ্যেই কোনো চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে ভোটের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিভিশনে নজর রাখা হবে। সংবাদমাধ্যমকেও কড়া নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা যাবে না। ফেক নিউজ তৈরি করা যাবে না। কোনো বিজ্ঞাপন হলে, তা জানিয়ে দিতে হবে। অনিয়মের অভিযোগ পেলে অ্যাপের মাধ্যমে ১০০ মিনিটের মধ্যে সমাধান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন থেকে রাজ্যের হাতে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ডিলিট করার ক্ষমতা থাকবে। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে কোনোভাবে শিশুদের ব্যবহার করা যাবে না। তারকা প্রচারে নামলে তাকেও নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইনের নোটিশ দিতে হবে। ইস্যুভিত্তিক প্রচার হোক, কিন্তু ঘৃণামূলক মন্তব্য, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আক্রমণ করা চলবে না।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন থেকে ৫৩৭ দলকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যার প্রার্থী দেওয়ার পাশাপাশি অন্য দলের গাড়ি ব্যবহার করত। এমন দল-কে এবার নির্বাচন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আর্থিক লেনদেনের ডিজিটাল রেকর্ড থাকবে কমিশনের কাছে।
আচরণবিধিতে আরও বলা হয়েছে, কোনো বিনামূল্যে উপহার দেওয়া চলবে না। টাকা, মদ, শাড়ি, প্রেসার কুকারের মতো জিনিস দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করলেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জিএসটি-র মাধ্যমে নজর রাখা হবে যে কোনো পণ্যের হঠাৎ চাহিদা বাড়ছে কি না। বিমানবন্দরে কড়া নজরদারি চালানো হবে। যে রাজ্যে হেলিকপ্টার অবতরণ করে, সেখানেও চেকিং হবে। রেল ও সড়কপথেও কড়া নজরদারি চালানো হবে।
নির্বাচনে হিংসার কোনো জায়গা নেই উল্লেখ করে বলা হয়, লোকসভা নির্বাচনে যেন রক্তগঙ্গা না বয়- তা নিয়ে কড়া সতর্কবার্তা মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের। অভিযোগ পেলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা শাসকদের। প্রার্থীর অপরাধের ইতিহাস বা ক্রিমিনাল ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে, তাকে তিনবার সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক দলকেও জানাতে হবে, কেন অপরাধের ইতিহাস থাকা কাউকে প্রার্থী করা হলো, অন্য কেউ কেন প্রার্থী হলেন না।
ভারতে এবার নারী ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে ৯৭ শতাংশ। এ মুহূর্তে দেশে প্রায় ৯৬ কোটি ৮০ লাখ ভোটার রয়েছেন। নতুন ভোটার প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। যুব ভোটারের (২০-২৯ বছর বয়সী) সংখ্যা ১৯.৭৪ কোটি। মোট পুরুষ ভোটার ৪৯ কোটি ৭০ লাখ। এ বছর নারী ভোটার ৪৭ কোটি ১০ লাখ। তৃতীয় লিঙ্গ বা ট্রান্সজেন্ডার ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ। ভারতের নির্বাচনে এ বছর ইভিএম ব্যবহার হবে ৫৫ লক্ষ।
বিহার, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক, তামিলনাড়ুতে উপনির্বাচন হবে। লোকসভার সঙ্গেই সেই উপনির্বাচন হবে। সিকিম, ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ- চার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে লোকসভার সঙ্গে।