বিডি ঢাকা ডেস্ক
বাস টার্মিনালের অদূরবর্তী কাটাপাহাড় নামক এলাকায় পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রশাসন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী। গত শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাহাড়কাটা রোধকল্পে অভিযান চালানো হয়।
জানা যায়, পাহাড় কাটা বন্ধকল্পে অভিযানে গেলে উপজেলা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বলেন, ওই পাহাড়খেকো এবং মাটি বিক্রয়কারীদের অসংখ্য ডাম্পারের কারণে সঠিকভাবে রাস্তায় চলাচল করাটাও মুশকিল হয়ে পড়ে। পাহাড় নিধন বন্ধে তারা ভবিষ্যতেও প্রশাসনকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
অভিযানে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আরডিসি মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান এবং কক্সবাজার সদর থানার এস আই জহিরুল ইসলাম সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের একটি টীম উপস্থিত ছিলেন। অভিযানকালে ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরিবেশ অদিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অভিযানে আসছেন জেনেই পাহাড় কর্তনকারীরা পালিয়ে যায়। এসময় পাহাড় কাটার শাবল, কোদাল, পানির পাইপ জব্দ করা হয়। পাহাড় কেটে সমতল করা স্থানে কলাগাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব পাহাড়কর্তনকারীর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে নিয়মিত অভিযান অব্যহত থাকবে এবং নিয়মিত মামলাসহ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এদিকে, পর্যটন শহর কক্সবাজারে পাহাড় কাটা যেন থামছেই না। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে হুহু করে দিনদিন জমির মূল্য বাড়ছে দেখে একশ্রেণীর ভূমিদস্যু পাহাড় দখল ও রাতারাতি তা সমতল করে চলছে। সাপ্তাহিক বন্ধের সময় দিনের বেলায় পাহাড় কাটা হয়ে থাকে। পাহাড় কাটা কাজে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। তারা সারা রাত জেগে পাহাড় কেটে সাবাড় করছে। অনেক সময় দিনেও কাটছে পাহাড়।
জানা যায়, কক্সবাজারের কলাতলী বাইপাস সড়কের দক্ষিণ আদর্শ গ্রাম সংলগ্ন বিকাশ বিল্ডিং এর পিছনে জোবাইর ও সাজ্জাদের নেতৃত্বে একটি পাহাড় খেকো চক্র প্রকাশ্যে দিন দুপুরে পাহাড় কাটলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অপর পাশে টিএন্ডটি পাহাড় নাম স্থানে কোটি কোটি টাকার পাহাড় শ্রেণির সম্পদ দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করছে ইলিয়াছ ওরফে টোঁয়া ইলিয়াছ নামে এক ব্যক্তি। প্রশাসনের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে চলছে এই ইলিয়াছ। তিনি ওই জায়গায় কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসিসহ একাধিক কর্মকর্তাকে ফ্রি’তে প্লট দিয়ে পাহাড় দখল জায়েজ করে রেখেছেন বলে জানা গেছে।
বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাকে বশে এনে এসব পাহাড় দখল, প্লট বিক্রয় ও নির্বিঘ্নে পাহাড় কেটে চলছে ভূমিদস্যু ইলিয়াছরা। এ কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের ওই অসৎ কর্মকর্তাগণ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাহাড় দখল-প্লট আকারে বিক্রয় ও পাহাড় কাটা বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি এইচএম এরশাদ, সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কক্সবাজারের প্রবেশ মূখ বাস টার্মিনাল হয়ে কলাতলীর দিকে যেতেই সবার চোখে পড়ে ইলিয়াছ, জোবাইর ও সাজ্জাদের নেতৃত্বে পাহাড় কাটার পৃথক দৃশ্য। দিবালোকের মত সত্য হলেও পাহাড় কাটার বিষয়টি বনকর্মী ও পরিবেশ অধিদপ্তরের চোখে পড়ে না। অভিযোগ রয়েছে, ওই অসৎ কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের টাকায় ম্যানেজ করে সরকারের পৃথক এই পাহড়গুলো নির্বিচারে কাটা হচ্ছে। পাহাড় কাটা ও দখলের বিষয়টি সত্য নয় দাবি করেছেন অভিযুক্ত ইলিয়াছ, জোবাইর ও সাজ্জাদ। ওই পাহাড়ের মালিকানা তাদের বলে দাবী করেন তারা।
অপরদিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া শামলাপুর ঢালার মুখ নামক স্থানে স্কেভেটর দিয়ে দিনদুপুরে পাহাড় কাটছে ভূমিদস্যু একটি চক্র। বনবিভাগ বাঁধা দিলেও পাহাড়টি তাদের খতিয়ানি জমি দাবি করে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে। পাহাড়কাটা বন্ধে স্থানীয়রা সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।