বিডি ঢাকা ডেস্ক
ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে সীমিত জোগানের কারণে গ্যাস সংকটের মধ্যে আছে দেশ। গ্যাস সরবরাহের অভাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। শিল্পাঞ্চলগুলোতে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন অব্যাহত রাখা যাচ্ছে না। রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিতই আবাসিক গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আসছে শীত। এ সময়কালে একদিকে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যায় অন্যদিকে কারিগরি কারণে সংকটও বেড়ে যায়।
এ ক্ষেত্রে সংকট সমাধানের সাময়িক উপায় হচ্ছে এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ বাড়ানো। তবে আর্থিক সংকটের কারণে এলএনজি আমদানিও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। কিন্তু এলএনজি আমদানি অব্যাহত রাখা না গেলে আগামী শীতে গ্যাস সংকট আরও প্রকট হতে পারে।
পেট্রোবাংলা বলছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ১১ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১০৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। তবে এ পরিমাণ এলএনজি আমদানি করতে হলে সরকারকে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।
গ্যাস উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারের একাধিক সংস্থা ও কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের সঙ্গে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে সেটা গড় গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য। এই আমদানির মাধ্যমে দেশে গ্যাসের যে চাহিদা রয়েছে, তা পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব হবে না।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা রয়েছে অন্তত ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলন ও আমদানিকৃত এলএনজি মিলিয়ে প্রতিদিন ২৯শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে। ফলে দৈনিক প্রায় ১১শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকছে। শীত এলে গ্যাসের চাহিদা আরও বাড়বে। কাজেই সরবরাহ না বাড়ালে ঘাটতি আরও বাড়বে।
দেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহৎ এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ করে থাকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (তিতাস)। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ‘গ্যাস পাচ্ছে না’, ‘গ্যাসের সংকট’ এ ধরনের অভিযোগ অন্তহীন। প্রতিদিনই কোনো না কোনো
এলাকা থেকে মানুষ গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ আসছে। কোনো কোনো শিল্পাঞ্চল থেকেও এমন অভিযোগ আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এক্ষেত্রে তিতাসের কিছুই করার নেই। পেট্রোবাংলা থেকে সরবরাহ না পেলে গ্যাস দিতে পারবে না তিতাস। পেট্রোবাংলা থেকে গ্যাসের সরবরাহ বাড়লে তিতাসও সরবরাহ বাড়াতে পারবে।
পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, গতকাল রবিবার ২৮শ ৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় উৎসগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের আওতাধীন গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে ৫৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, সিলেট গ্যাস ফিল্ডের আওতাধীন গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে ১২৮ মিলিয়ন ঘনফুট, বাপেক্সের আওতাধীন গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এবং আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে উত্তোলিত গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে ১১শ ৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেভরন জালালাবাদ, বিবিয়ানা, ও মৌলভীবাজার গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস সরবরাহ করেছে। এছাড়া তাল্লু গ্যাসক্ষেত্র থেকেও গ্যাসের সরবরাহ করা হয়েছে। এদিকে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করেছে।
আসন্ন শীতে গ্যাস সরবরাহের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশনস) মো. কামরুজ্জামান বলেন, চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য থাকায় মূলত গ্যাসের সংকট আছে। আর শীতে সব সময়ই গ্যাসের চাহিদা বেশি থাকে। গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে যায়। ফলে শীতে সংকটটা প্রকট মনে হয়। তিনি বলেন, সরকারের পরিকল্পনার মধ্যে আছে দেশি গ্যাসের সরবরাহের সঙ্গে বিদেশ থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ১১ কার্গো এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের জোগান নিশ্চিত করা হবে। তবে সেটাও হয়তো চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত হবে না। তিনি বলেন, আশা করছি অন্যান্যবার শীতে গ্যাসের সরবরাহ যেমন থাকে এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।