বিডি ঢাকা ডেস্ক
শোলমারীর এস্কেবেটর একদিন চালু থাকলে বন্ধ থাকছে দু’ দিন। বার বার তাগাদা দেওয়ার পরেও নেই জোয়ারের পানি বন্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। ময়ুর নদী হয়ে আলুতলা স্লুইচ গেট দিয়ে পানি নামাতে দু’ গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে ফলে বন্ধ রয়েছে ৩টি গেট।
দু’মাস ধরে বিলডাকাতিয়া, মাধবকাঠী, সিংগা, মির্জাপুর উত্তর বিলসহ ২৪ বিলের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী। অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে তাদের জীবন। স্থায়ী জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়েছে দুই শ’ কোটি টাকার সবজী, দেড়শ কোটি টাকার মৎস্য ঘেরের মাছ। পানি না নামলে আসন্ন বোরো মৌসুমেও এসব বিলে হবে না ধান। মিলছে শুধু আশ্বাস। নেই কার্যকরী কোন পদক্ষেপ। চলতি সপ্তাহে কোন প্রকার সুরাহা না হলে হাজার হাজার কৃষক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে নামার ঘোষনা।
সরেজমিন যেয়ে এবং বিভিন্ন দপ্তর সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া, কেশবপুর, মনিরামপুর, ফুলতলা ও অভয়নগরের ২৪ বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হচ্ছে শোলমারী ১০ বেণ্টের স্লুইচ গেট। পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় এবং এক শ্রেণীর অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের কারণে এ গেট দিয়ে পানি অপসারণ বন্ধ হয়ে যায়।
শোলমারী দিয়ে পানি বের না হওয়ায় এবং চলতি বছর অতিবৃষ্টিপাতের কারণে ডুমুরিয়ার অধিকাংশ এলাকায় দেখা দেয় স্থায়ী জলাবদ্ধতা। অতিবৃষ্টিতে প্রথমে নষ্ট হয়েছে সবজি। কৃষি বিভাগের দাবি ২শ’ কোটি টাকার সবজির ক্ষতি হয়েছে। এদিকে হাজার হাজার মৎস্য ঘের ভেসে যাওয়ায় মাছের ক্ষতি হয়েছে দেড়শ কোটি টাকা বলে মৎস্য বিভাগ দাবি করেছে।
জলবদ্ধতা নিরসনে এলাকার জনগন দীর্ঘদিন সেচ্ছাশ্রমে শোলমারী গেটে পলি অপসারণে কাজ করে। তবে বালু ব্যবসায়ীদের চালাকিতে কোন পানি অপনারিত হয় না। পরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডেও সহযোগিতায় ৩ টি এস্কেবেটর দিয়ে পলি অপসারণের কাজ করা হয়। গত ১ মাস ধরে পলি অপসারণ করায় পানি এখন বের হচ্ছে। তবে জোয়ারের সময় পানি ভেতরে প্রবেশ করছে। এলাকাবাসী জোয়ারের পানি বন্ধে বিকল্প হিসেবে কাঠের কপাট বা স্পাতের সীট দিয়ে কপাট তৈরি করে বাহির কপাট করার প্রস্তাব দিলেও গত ২০ দিনে তার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ হচ্ছে না। গত ১০ দিন বড় এস্কেবেটরটি চালক নানা অযুহাত দেখিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে কাজে বেশ ধীর গতি।
এদিকে রায়েরমহল গেট দিয়ে ময়ূর নদী হয়ে আলুতলা গেট দিয়ে ভৈরব নদে পানি অপসারণের আরও একটি রুট রয়েছে এ ২৪ বিলের। কিন্তু লতা, খামারবাড়ি, দাইগা, বিলপাবলা, কুলটি, পঞ্চুসহ বেশ কিছু গ্রামের বাসিন্দা শলুয়ার পাশখালী, কালিতলা ও খয়রাতলা গেট বন্ধ করে দেওয়ায় এসব বিলের পানি ওই রুট দিয়ে নামতে পারছে না।
গত বুধবার জেলা পর্যায়ের একটি সভায় কারও কোন ক্ষতি না করে অল্প অল্প করে ওই গেট গুলো দিয়ে পানি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি বৃহস্পতিবার ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন ওই গেট ৩ টি সরেজমিনে দেখতে যান।
এ সময় দু’গ্রুপের হাজার হাজার কৃষক হাজির হয়। একটি পক্ষ গেট খোলার পক্ষে অবস্থান নেয়। আর একটি পক্ষ বন্ধ করার পক্ষে। অবশেষে কাল শনিবার দু’গ্রুপ নিয়ে উপজেলায় বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি উপস্থিত সকলকে জানিয়ে স্থান ত্যাগ করেন।
এদিকে এসব রশি টানাটানির ফলে জলবদ্ধ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। এলাকাবাসী সকল দপ্তরকে এক হয়ে জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের পানি নিস্কাসনে আন্তরিক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।