বৃহস্পতিবার (০৭ নভেম্বর) এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
রেলপথ উপদেষ্টা বলেন, ‘বৈঠকে রেলের টিকিট বিক্রির পদ্ধতি আরো সহজলভ্য করার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। টিকিট প্রাপ্তি ও ভ্রমণে যাত্রীদের সন্তুষ্টি অর্জন করা হবে এবং যাত্রীরা যেন সহজে টিকিট কিনতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। শিগগিরই এর সুফল পাওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘টিকিটের ক্রয় প্রক্রিয়ায় যাত্রীরা কতটুকু সন্তুষ্ট হতে পারছে তা বিবেচ্য। অনেক ক্ষেত্রে অনলাইনে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের টিকিট না পেয়ে যাত্রীরা হতাশ হন। সেক্ষেত্রে নিকটস্থ কোনো স্টেশনের কোনো সময়ের জন্য টিকিট অবশিষ্ট রয়েছে সার্চ অপশনে যাত্রীর নিকট যেন তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপস্থাপিত হয় সে ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এ ব্যাপারে প্রয়োজনবোধে রেলওয়ের বাইরের এক্সপার্টদের পরামর্শ নেয়া হবে।’
সরকারি কর্মকর্তাদের নামে টিকিট বরাদ্দ বন্ধ:
উপদেষ্টা বলেন, ‘ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত কোটার টিকিট বিক্রি বন্ধ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রেলের সচিব বা কর্মকর্তাদের কাছে অনেক টিকিটের তদবির আসে। সরকারি কর্মকর্তারাও করেন। এজন্য কিছু টিকিট আগেই বুক করে রাখা হয়। এটা চলবে না। কোনো সচিব বা কর্মকর্তার কথায় টিকিট রাখা যাবে না। সবার আগে সাধারণ জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
লোকোমোটিভ ও ক্যারেজ সংগ্রহ:
অধিক পরিমাণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য বাড়তি ট্রেন সার্ভিস চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় লোকোমোটিভ ও ক্যারেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। আমরা এটি দ্রুত সময়ে করতে পারবো আশা করছি। সে বিষয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও মন্ত্রণালয়।
রুট রেশনালাইজেশন:
উপদেষ্টা বলেন, ‘যেখানে যাত্রী নেই সেখানে ট্রেন যাচ্ছে। আবার যেখানে যাত্রী আছে, সেখানে ট্রেন নেই। প্রবাসীরা যেসব জায়গা যায় যেমন ঢাকা-সিলেট, ঢাকা চট্টগ্রাম এসব রুটে আলাদা ব্যবস্থা নেব।’
তিনি আরো বলেন, ‘যেসব পথে চলাচলরত ট্রেনের যাত্রী চাহিদা কম, সেখান থেকে চাহিদা বেশি থাকা পথে ট্রেন বাড়ানো হবে। রেলের টিকিটের সংখ্যা বাড়াতে প্রধান বাধা ইঞ্জিন-কোচের সঙ্কট। নতুন ইঞ্জিন-কোচ কিনতে চেষ্টা অব্যাহত আছে।’
টিকিট কালোবাজারি বন্ধ:
তিনি বলেন, ‘টিকিট কালোবাজারি ও রুট রেশনালাইজেশনের জন্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রসাশন) প্রধান করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে তরুণদেরৎ সম্পৃক্ত করতে হবে। যারা কালোবাজারি করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এরপরও কালোবাজারি কিংবা অস্বচ্ছতা দেখলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
রেলওয়ে প্রকল্প:
উপদেষ্টা বলেন, ‘আগে অনেক প্রকল্প নেয়া হয়েছে যেগুলো ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’। রেলের প্রকল্পগুলো নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।
তিনি বলেন, সামনে রেলের প্রকল্প নিয়ে আমরা আরো বেশি সতর্ক আছি। আমরা সামনে বসব। কোন প্রকল্প কেন বাদ দেয়া হয়েছে সেটা আমরা জানাবো।
ঘুরেফিরে কিছু ঠিকাদারের কাজ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আর আগের মতো পরিবেশ নেই। যে কেউ বিড করতে পারেন। সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে। যে দুই-তিনজন ঘুরেফিরে কাজ পাচ্ছেন, এটা আর হবে না। সবাই কাজ পাবেন। রেল ও সড়ককে সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে।
অনলাইনে টিকিট:
ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘অনলাইনে রেলের টিকিট কাটার নানা ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো ঠিক করার জন্য টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজ ডটকমকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট পাওয়া যায় না, কিন্তু কালোবাজারে ২০০ বা ৩০০ টাকায় টিকিট পাওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সমস্যার গোড়ায় যেতে চাই। সবাই বলে এই সরকার কিছু করে না। কিন্তু এটা সময় লাগবে। আমরা গত আড়াই মাসে সমস্যার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন থেকে গ্রাহক যাতে সম্ভাব্য বিকল্প কী করণীয় সেই তথ্য অ্যাপ থেকে জানতে পারেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত সহজ ডটকমকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তদারকির জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও করে দেয়া হয়েছে।’
ট্রেন সময়মতো ছাড়া:
উপদেষ্টা বলেন, ‘সময়মতো ট্রেন ছাড়ার বিষয়ে খুবই সিরিয়াস। যাত্রীরা যথাসময়ে যেতে না পারলে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দশনা দেয়া হয়েছে।’ সূত্র : ইউএনবি