শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

ঠাকুরগাঁওয়ে হলুদের সাথে পেঁপে চাষ করে সকলের নজর কেড়েছেন রবিউল

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১১ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিণ ঠাকুরগাঁওয়ের আকচা ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের মৃত গিয়াসউদ্দিনের ছেলে মো. রবিউল ইসলাম (রবি)। পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি কৃষিতে ঝুঁকে পড়েছেন। অনাবাদি উচুঁ প্রকৃতির জমি লিজ নিয়ে করছেন বিভিন্ন ফসল চাষ। অন্যান্যবারের মতো এবারও ২৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন হলুদ। তার মধ্যে ১০ বিঘা জমিতে হলুদের সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেছেন পেঁপে।
পেঁপে গাছ রোপণের মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই পেয়েছেন ফলন। ইতিমধ্যে প্রায় ৪ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। এখান থেকে আরও প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার ফল বিক্রয়সহ মোট ২০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি। তার বাগানের পেঁপে এখন স্থানীয় বাজারসহ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে। এতে এলাকার কৃষকদের মাঝে বেশ সারা জাগিয়েছেন। তারাও আগ্রহী হচ্ছেন পেঁপে চাষে।
জানা যায়, ব্যবসার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের আশায় জেলা সদরের বিভিন্ন জায়গায় জমি লিজ নিয়ে মসলা জাতীয় ফসল থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকার সবজি, আখঁ, বাদাম ও পুকুরে মাছ চাষ করে ইতিমধ্যে রবিউল ইসলাম রবি ব্যাপক সাফল্য পান। তাই এবার আন্তঃ ফসল হিসেবে হলুদের সাথে টপলেডি ও শাহি জাতের ৬ হাজার পেঁপে গাছ রোপন করেন ফেব্রুয়ারি মাসে। জুন থেকে গাছে ফুল ও ফল ধরা শুরু করে। অক্টোবর মাসে প্রতিদিন তার বাগান থেকে কাঁচা ও পাকা মিলে প্রায় ৫০ মণ পেঁপে বিক্রয় হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের গাছ থেকে কেউ পেঁপে তুলে বস্তায় ও চটে তুলছেন। কেউ আবার সেগুলোকে একটি নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার বস্তাগুলো ওজন করে গাড়িতে তুলছেন। অনেকে আবার হলুদ বর্ণের পেঁপে গুলোকে পেপার দিয়ে মুড়িয়ে রাখছেন। এ যেন এক বিশাল কর্মজ্ঞ। রবিউলের এই উদ্যোগ একদিকে যেমন, সবজিসহ মানবদেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখচ্ছে, তেমনি স্থানীয় শ্রমজীবী মানুষদের আয়েরও সুযোগ তৈরি হয়েছে।
প্রতিদিন তার কৃষি খামারে কাজ করে আয় করে সংসার চালাচ্ছেন প্রায় ২০ জন মানুষ। তেমনি একজন বিলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি পেঁপে বাগানে শুরু থেকে কাজ করছি। রবিউলের কৃষি খামারে প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ জন মানুষ কাজ করি। ধরতে গেলে, এখানে আমরা স্থায়ীভাবে কাজ করতে পারছি। কারণ তার বিভিন্ন ধরনের আবাদ রয়েছে। সেসব ফসলের যত্ন নিতে প্রতিদিন কাজের মানুষের প্রয়োজন হয়। তাই আমাদেরও আর অন্য জায়গায় কাজ খুঁজতে হয় না।’
বাগানে কাজ করছিলেন নজরুল ইসলাম তিনি বলেন, আমরা ‘টানা কয়েক বছর ধরে রবিউলের কাজ করছি। এখন হলুদের সাথে পেঁপের বাগান করেছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ মণ করে পেঁপে তুলতে হয় আমাদের। আর বাগান দেখতে প্রতিদিন অনেক লোকজন আসেন। তারাও এমন করে পেঁপে চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
কৃষি উদ্যোক্তা যুবক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘মূলত আমি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাশাপাশি চেষ্টা করি বাড়তি কিছু আয় করার। তাই আমি কৃষিকে বেছে নিয়েছি। বিগত কয়েক বছর ধরে আমি নিজের জমির পাশাপাশি ও অন্যের জমি লিজ নিয়ে হলুদসহ বিভিন্ন ধরণের ফসল আবাদ করে আসছি। এছাড়াও আমাকে ব্যবসায়ীক কাজে অনেক সময় বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়। অনেক জেলায় দেখেছি অনেক ফসলে সাথে সাথী ফসল চাষ করতে। তাই আমি এবার পরিকল্পনা করি হলুদের সাথে পেঁপে চাষ করার। গত বছর ২৫ বিঘা জমিতে হলুদ করেছিলাম। এবারও ২৫ বিঘাতে হলুদ লাগিয়েছি। তার মধ্যে ১০ বিঘা জমিতে হলুদের সাথে পেঁপের গাছ রোপন করি ফেব্রুয়ারি মাসে। শাহী ও টপলেডি এই দুই জাতের মোট ৬ হাজার গাছ লাগিয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন কারণে প্রায় ২ হাজার গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বাগানে ৪ হাজার পেঁপের গাছ আছে। এতে পেঁপে চাষ করতে আমার প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’
জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন ‘ফেব্রুয়ারিতে গাছ রোপনের পর জুন মাসেই ফুল ও ফল ধরতে শুরু করে ও জুলাই মাস থেকে আমি পেঁপে বিক্রয় করতে শুরু করি। প্রথম দিকে কয়েকদিন পর পর পেঁপে বিক্রি করতে পারতাম ও কম পেঁপে বের হতো কিন্তু বর্তমানে অক্টোবর মাস থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ মণ করে পেঁপে বিক্রি করতে পারছি।
মূলত প্রথম দিকে শুধু পাকা পেঁপে বিক্রি করতাম আর এখন সবজি হিসেবে কাচা পেঁপেও বিক্রি করছি। বর্তমানে প্রতিমণ কাঁচা পেঁপে ৮শ’ টাকা ও প্রতিমণ পাকা পেঁপে ১ হাজার ৬শ’ টাকা দরে বাগান থেকেই ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে প্রায় ৮ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একেকটি গাছে ২০ কেজি থেকে শুরু করে ৪০ কেজি পর্যন্ত ফল ধরেছে। আমি যদি প্রতি গাছে মাত্র ৫শ’ টাকা করে পেঁপে বিক্রি করতে পারি তাহলে ৪ হাজার গাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারবো। এবার লাভবান হলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে পেঁপের বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে আমার।’ এখানকার এসব পেঁপে ক্রয় করে ঢাকা, চট্ট্রগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে পাঠানো হচ্ছে। তবে বাজারে কাঁচা পেঁপের থেকে পাকা পেঁপের দাম ও চাহিদা বেশি বলে জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ী জবায়দুর রহমান।এছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন জায়াগা থেকে প্রতিদিন তার এই বাগান দেখতে ও পরামর্শ নিতে ছুটে আসছেন অনেক কৃষি উদ্যোক্তাসহ জনসাধারণ। তেমনি একজন স্থানীয় কৃষক মতিউর রহমান। এসেছেন পেঁপের বাগান দেখতে। তিনি বলেন ‘এর আগে আমাদের এই দিকে হলুদ আর পেঁপে একসাথে চাষ করতে কাউকে দেখিনি। এবার প্রথম দেখছি। এই বাগানের প্রতিটি গাছে অনেক পেঁপে ধরেছে ও হলুদ গাছের চেহারা অনেক ভালো আছে। তাই আমরাও আগামীতে এভাবে পেঁপে চাষ করার চিন্তা-ভাবনা করছি।’
ইব্রাহিম নামে স্থানীয় এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, ‘আধুনিক ও নতুন পদ্ধতিতে এমন একটি বাগান দেখে আমরা অত্যান্ত আনন্দিত ও অভিভূত। এত সুন্দর একটি বাগান করে দেখানোর জন্য আমরা রবিউলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। পেঁপে এমন একটি ফল যেটা আমাদের সবজি ও ফলের চাহিদা পুরণ করে। এতে প্রচুর পুষ্টি আছে। যা খেলে মানুষ অনেক উপকৃত হয়। এছাড়াও দর্শনের মাধ্যমে মানুষের অনেক অভিজ্ঞতাও হয়। যার কিছুটা হলেও এই বাগানটিতে এসে ধারণা পাওয়া যায়। এজন্য আমিও আগামীতে এভাবে পেঁপের চাষ করবো বলে আশাকরছি।’
আকচা ইউনিয়নের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘রবিউল ইসলাম একজন আদর্শ কৃষক। আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তিনি নতুন নতুন চাষাবাদ করতে খুব উৎসাহী। তাই সমন্বিত চাষ হিসেবে হলুদ ও পেঁপে চাষ করেছেন। তার বাগানের ফলন ভালো হওয়ায় এলাকার কৃষকদের মাঝে বেশ সারা ফেলেছেন তিনি। সাথী ফলস হিসেবে পেঁপে চাষ করলে পোকামাকড়ের উপদ্রবও কম হয়। এছাড়াও পেঁপে একটি ফল ও সবজি বটে। যা খেলে মানুষ এসিডিটির বা গ্যাসট্রিকের সমস্যা থেকে পরিত্রণ পায়।’
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক কারিগরি সহায়তাসহ পরার্মশ প্রদান করা হচ্ছে উল্লেখ করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যতিক্রমি উদ্যোগে এবার একসাথে হলুদ ও পেঁপে চাষ করেছেন রবিউল। ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষির পরিবর্তনের যে হাতিয়ার, তার একজন রবিউল ইসলাম। তার মতো কৃষকের মাধ্যমে জেলার সুযোগ ও সম্ভাবনাগুলো আরও সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তার তথ্য মতে, জেলায় এবছর ২শ’ ৩৫ হেক্টর জমিতে হলুদ ও ১৬ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com