সালটা তখন ১৯৮৯, সেই শেষবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ব্যালটে সীল ঢুকেছিল শিক্ষার্থীরা। তারপর কেটে গেছে একে একে ৩৪টি বছর। আলাপ-আলোচনা, সচেতনতা-সতর্কতা, আন্দোলন-সংগ্রাম কিংবা আল্টিমেটামের ফুল ছুড়িও কম ছুটেছি এ বছরগুলোতে। কেবল শিক্ষার্থীদের কপালে জুটেনি ফের ছাত্র সংসদ নির্বাচন। জুলাই বিপ্লবের পর নানা সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে পূনরায় আশায় বুক বাঁধছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। এবার বুঝি নেতা নির্বাচনের সুযোগ পাবেন তারা। এদিকে কাজ এগিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে হাত দিয়েছেন রূপরেখা প্রণয়ন কার্যে।
অন্যদিকে রিজভী-হারুন পরিষদের জয়ের মাধ্যমে বন্ধ হওয়া নির্বাচন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এবিষয়ে জানা শোনার পরিধি নিতান্তই কম সাধারণ শিক্ষার্থীদের। কেবল শিক্ষার্থীরাই নন অনেক শিক্ষকও জানেন না রাকসু গঠনতন্ত্রসহ নানা বিষয়াদি সম্পর্কে। ফলে ধোঁয়াশার বেড়াজালে বন্দী এক নাম রাকসু।
শিক্ষার্থীদের মনে-মগজে চলছে একগুচ্ছ এলোমেলো প্রশ্ন। যা শুরু হয় রাকসু কি প্রশ্নের মাধ্যমে। এরপর রাকসু কেন এবং কিভাবে গঠিত হয় প্রশ্নকারীর সংখ্যাও নিতান্তই কম নয়। এদিকে রাকসু কি আসলেই হবে কি না? গঠনতন্ত্র সেকেলে এটা বর্তমানে যায় না এটার সংস্কার করবে কি-না সংশ্লিষ্টরা? নির্বাচন কি প্যানেলে ভিত্তিক হবে নাকি স্বতন্ত্র? দলীয়ভাবে প্যানেল হতে পারে কি-না? গঠনতন্ত্র বলে যারা ৪বছর রাকসু ফি দিয়েছেন তিনি নির্বাচন করতে পারবেন তবে কি সাবেকরাও নির্বাচন করবেন? রাকসুর ইতিহাস রক্তাক্ত তবে কি এবারও প্রতিহিংসার বলিদান হওয়ার সম্ভাবনা আছে কোনো ভাই-বোনের? সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া কি সম্ভব? এমন শতশত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরেছেন উৎসুক শিক্ষার্থীরা।
রাকসু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদ সাকী বলেন, “৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের জন্য ছাত্র সংসদ চালু রাখার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদেরই সংক্ষিপ্ত রূপ হলো রাকসু।
এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি এক বছর পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে তাদের ২১ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে। প্রতিনিধিরা প্যানেল দিয়ে অথবা স্বতন্ত্রভাবেও সে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। ভোটের সর্বোচ্চ সংখ্যার উপর ভিত্তি করে উপাচার্য অর্থাৎ রাকসুর সভাপতি অন্যান্য পদগুলোর নির্বাচিত নেতাদের নাম ঘোষণা করেন।
রাকসু আসলে কেন প্রয়োজন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সাধারণত রাকসুর কাজ হলো শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার অধিকার ও সমস্যাবলী নিয়ে কাজ করা। সিনেটে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করা। সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা ইত্যাদি।
অন্যদিকে রাকসু নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে তা হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ বহুবছর পর ঢাবির ডাকসু নির্বাচনের যে খারাপ অভিজ্ঞতা তা গোটা জাতির মনে গেঁথে আছে। সেখানে ভোট কারচুপি ও প্রশাসনের দায়হীন আচরণগুলো সবারই জানা। এবং সর্বোপরি নিয়মিত নির্বাচন আর হয়নি।
অপরদিকে রাবিতে বারংবার আশ্বাস দিয়েও নির্বাচন না করার যে পূর্ব অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের রয়েছে তা থেকেই মূলত রাকসু হবে কি-না এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মন-মগজে। এছাড়াও নির্বাচন ঘিরে নানান নৈরাজ্য সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টা মাথায় রেখে এগোতে হবে।
সর্বোপরী রাকসু হওয়াটা অত্যন্ত জরুরী। একজন সাবেক শিক্ষার্থী ও রাকসু আন্দোলনের সদস্য হিসেবে আমি এই প্রশাসনের কাছে আশাবাদী যে, তারা অবশ্যই বর্তমান শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়া ও সময় বিবেচনায় এর গঠনতন্ত্র পরিবর্তন পরিমার্জন করে একটা সুস্থ ও সুন্দর ভোটের আয়োজন করবেন।
এবিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ফাহিম রেজা বলেন, রাকসু নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমরা বিশ্বাস করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথেষ্ট সদিচ্ছা রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী কারণ শিক্ষার্থীদের সকলেই এ বিষয়ে সচেতন। রাকসু নির্বাচন না হলে শিক্ষার্থীরা বসে থাকবে না এটা আমাদের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা। পাশাপাশি আমাদের গঠনতন্ত্র একটি বড় সংকট, নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্যতম সংকট ও চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন থেকে যেসব পরামর্শ এসেছে সেগুলোর আলোকে কিভাবে রাকসু নির্বাচন সাজানো যায় সেটার কাজ চলছে। পাশাপাশি অর্ডিনেন্সের সংস্কার কাজও চলমান রয়েছে।
নির্বাচন কেন্দ্রিক সংকট ও সম্ভাবনার ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, নানা সংকট ও সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্যই এটা অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে চাই।