বিডি ঢাকা ডেস্ক
চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পলাশপুর এলাকার কালার মোড়ে বসেছে সাত দিনব্যাপী এই জামাই মেলা। মেলায় হরেক রকমের মিষ্টান্ন, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, ছোটদের নানা প্রকার রাইড ও কাঠের আসবাবপত্র রয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই মেলা আগামী ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
মেলা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, মেলার সময় এই এলাকার মেয়েরা তাদের স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর জামাইকে আপ্যায়নের জন্য শ্বশুর-শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নানা প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। এই মেলা থেকে কেনাকাটার জন্য জামাইয়ের হাতে টাকা দেন শ্বশুর-শাশুড়িরা। আর সেই টাকার সঙ্গে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা থেকে মিষ্টি, জিলাপি, মাছ, পান-সুপারিসহ বিভিন্ন দ্রব্য কিনে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যান। ২০২২ সাল থেকে শুরু হয় এই মেলা।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এই জামাই মেলাকে ঘিরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নারী-পুরুষ, বয়োবৃদ্ধ, শিশু-কিশোরসহ হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত মেলার আশপাশের এলাকা। প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক দোকান বসেছে এই মেলায়। বালিশ মিষ্টি, মাছ মিষ্টি, রসগোল্লা, চমচম, সন্দেশ, হাসিখুশি মিষ্টি, খাজা, জিলাপিসহ নানা ধরনের রকমারি মিষ্টির পসরা বসিয়েছেন দোকানিরা। বিভিন্ন রকমের কসমেটিক্স সামগ্রীর দোকানও রয়েছে মেলায়। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছসহ চিতল, কোরাল, বোয়াল, আইড়, কালবাউশ, রুই-কাতলা, রুপচাঁদা, গুলসা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ।
এবারের মেলায় হরেকরকম পণ্যের পাশাপাশি বিনোদনের জন্য রয়েছে ঘোড়দৌড়, মইদৌড়, লাঠিখেলা ছাড়াও শিশুদের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, চরকি, দোলনাসহ নানা আয়োজন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও আশপাশের জেলা থেকেও অনেক দর্শনার্থীরা মেলায় যোগ দিয়েছেন। প্রতিদিন মেলায় র্যাফেল ড্র এবং খ্যাতিমান শিল্পীদের নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মেলা কর্তৃপক্ষ।
মেলায় ঘুরতে আসার হাদিয়া জাহান ভাবনা বলেন, আমার বাবার বাড়ি এই এলাকায়। এখানে ছোট থেকে বড় হয়েছি। আমাদের এলাকায় অনেক বড় মেলা হয়, শীতের সিজনে ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা শেষে এভাবে আনন্দ উল্লাস করার জায়গা খুব কম। এই মেলাটি হয়ে বিনোদনের একটি নতুন মাধ্যম যুক্ত হয়েছে। শীতের জন্য অনেক ছেলে-মেয়ে শহর থেকে তাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে। মেলা উদযাপন কমিটিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
নতুন জামাই নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসা জেসমিন আক্তার বলেন, জামাই নিয়ে জামাই মেলা ঘুরে অনেক আনন্দ অনুভব করছি। এখানে নানা রকম জিনিসপত্রের দোকান, অনেক লোকজন আর লাইটিং সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগছে। মেলা থেকে অনেক কিছু কিনেছি, আরও ঘুরে দেখার ইচ্ছা আছে।
ওই এলাকার জামাই কবির মিয়া বলেন, আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে দাওয়াত করেছে। তাই মেলায় এসে মাছ, মাংসসহ যাবতীয় যা কিছু প্রয়োজন বাজার করছি। এত সুন্দর একটি মেলায় এসে আমার খুব আনন্দ লাগছে।
মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি খালেদ মাসুদ তালুকদার বলেন, এবার মেলায় অন্যান্য বারের তুলনায় এবার অনেক বেশি মানুষের সমাগম ঘটছে। মেলায় প্রায় সব ধরনের জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে নানা বয়সের মানুষ এ মেলায় আসছে এবং নিজের পছন্দমতো মাছসহ বিভিন্ন পণ্য কিনছে। আমরা ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আগামীতে মেলার গুণগতমান আরও উন্নত করার কথা জানান তিনি।