বিডি ঢাকা ডেস্ক
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাশদিয়ে প্রভাহিত এক সময়ের খরস্রোতা মহানন্দা নদীর পাড় ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। নদীর পাড়ে হাসপাতাল রোডের বাসাবাড়ি , কাঁচা বাজারসহ শত শত ব্যবসায়ীদের আবর্জনা ও পলিথিনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে সদর ঘাট ও আশপাশের বিশাল এলাকা। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু থেকে খালঘাট ঈদগাহ পর্যন্ত প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে পরিবেশ ও নদীর পানি।
এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করলেও কোনো রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু থেকে খালঘাট পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক দোকানপাট, বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালের বর্জ এনে স্তুপাকারে রেখে যাচ্ছে মহানন্দা নদীর পাড়ে। সদর ঘাট এলাকায প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে সদর ঘাট পর্যন্ত শত শত ব্যবসায়ীদের পলেথিন পচাঁগলা আলু পেয়াজ ফলমুলসহ নানান ধরনের বর্জ্য নদীর পাড়ে এবং নদীতে সরাসরি ফেলা হচ্ছে। নদীর পাড়েও জমা হয়েছে পলিথিন ও ময়লার বিশাল স্তুপ। পাশেই রয়েছে সদর খেয়াঘাট।
সরেজমিনে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ঘাট বাজারের মুদি দোকান থেকে শুরু করে স্টেশনারি পর্যন্ত সব ধরনের দোকানে অবাধে নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি হচ্ছে। পলিথিনের কারখানাগুলো বন্ধ না হওয়ায় অবাধে ক্রয়বিক্রয় হচ্ছে। ফলশ্রতিতে অনায়াসে মানুষের অব্যবহার যোগ্য পলেথিন নদীর পানির সাথে মিসে যাচ্ছে।
সদর খেয়াঘাটে আসা বালিয়াডাঙ্গার কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শহরে প্রবেশ করার সময় নাকে রুমাল ধরে আসতে হয়। উদভট দুর্গন্ধে কাঁচাবাজার এলাকায় যাওয়া যায় না। এসব ময়লা-আবর্জনায় রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা নদীর পাড়ে ফেলা হয় প্রতিনিয়ত।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনজীবী হামিদুল হক জানান আগে তারা এই মহানন্দা নদীর পরিষ্কার পানিতে গোসল করতেন। বর্তমানে সদর ঘাট বাজারের ময়লা-আবর্জনা মহানন্দা নদীর পানির সাথে মিশে কালো রং ধারণ ও পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়েছে।নদীতে নামলেই শরীর চুলকায় এবং শরীরে বিভিন্ন খোশ-পাচড়া বের হয়।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বাবের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন সদরঘাট বাজারের ব্যবসায়ীসহ সাধারন মানুষ নদীর তীরে বর্জ্যসহ আবর্জনা ফেলছে যা ওপেন সিক্রেট। এটি বন্ধ করার দায়িত্ব পৌরসভার কর্তৃপক্ষের। বাজারের ময়লা-আবর্জনা নদীর তীরে ফেলার বিষয়ে আরো বলেন, বাজারের ময়লা-আবর্জনা রাখার মতো নির্দিষ্ট কোন যায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে নদীর পাড়েই এসব ফেলা হচ্ছে। বৃষ্টির সময় এই ময়লা-আবর্জনা হইতে দুষিত পানি মহানন্দা নদীতে যায়। ফলে নদীর পানি অনেকটা দুষিত হচ্ছে।প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদী এই ব্যবসায়ী নেতার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ বাদী আন্দলনের নেতা ও নাগরিক কমেটির সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান মনির বলেন অপচনশীল প্লাস্টিক আর পলিথিন বর্জ্যে ঢেকে গেছে মহানন্দা নদীর পানি। শুনেছি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল সংলগ্ন প্রায় দশটি বেসরকারী ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রাতের অন্ধকারে ক্লিনিকের বর্জ্য নদীতে ফেলে দেওয়ায় গোসল করতে আশা মানুষ জনের শরীর চুলকায় এবং শরীরে বিভিন্ন খোশ-পাচড়া বের হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা ও জেলা প্রসাশনের এবিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকতা মামুনুর রশিদ বলেন, মহানন্দা নদীর এ দুরবস্থা অনেকদিন আগের।নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এসে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। হাসপাতাল রোড এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে একটি ডাস্টবিন করা জরুরি। মানুষজন ডাস্টবিন করার কথা দাবি করলেও বাডির সামনে কেউ করতে দেয় না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. তাছমিনা খাতুন বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার আছে তবে তারা ব্যবহৃত পলিথিন রিসাইকেল করে আবার ব্যবহার করে। বাংলাদেশের মানুষ পলিথিন ব্যবহার করে যেখানে-সেখানে ফেলে দেয়। সমস্যা যেখানে আছে সেখানে সমাধানও আছে। মাথাব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলার কোনো প্রশ্নই আসে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোনো মনিটরিং নেই। ফলে সবাই পলিথিন ব্যবহার করে যেখানে-সেখানে ফেলে রাখে। তিনি আরো জনান প্রয়োজনে মোবাইল কোটের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ বলেন, ব্যবসায়ী ক্রেতাসাধারণ বেশি বেশি পলেথিন ব্যবহার করার কারনে অনেক ধরনের বর্জ্য হ্রাস করা যাচ্ছে না। পলিথিন উৎপাদন এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীতিমালা ও আইন আছে। আইনে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে। বিকল্প উপায় না থাকায় সবাই পলিথিন ব্যবহার করছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরবেষ্টিত মহানন্দা নদীর পানি কোন ভাবে নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..