বিডি ঢাকা ডেস্ক
ব্যাংক ঋণ নয়, গ্যাস বিলের ৫৬ কোটি টাকা বকেয়াকেই মূলধন বানিয়ে ফেলেছেন। বছরের পর বছর যায় প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া পরিশোধ করে না, একেক সময় একেক কৌশল অবলম্বন করে মাহিদ অ্যাপারেলস লিমিটেড।
মাধবদী উপজেলার নওয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত কোম্পানিটির কৌশলের কাছে অনেকটা অসহায় তিতাস গ্যাস, এমনটাই তিতাসের একজন কর্মকর্তা। তারা বলছে, বকেয়া বিল ঝুলিয়ে রাখতে কোম্পানিটি নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে থাকে।
তিতাসের তথ্যমতে, তাদের সরবরাহ করা গ্যাসের বিল বকেয়া রাখা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষ রয়েছে আরএকে সিরামিকস। কোম্পানিটির ৬টি ইনভয়েসের বিপরীতে ৫৯ কোটি টাকার ওপরে বকেয়া পড়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মাহিদ অ্যাপারেলসের ২৫টি ইনভয়েসের বিপরীতে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা বকেয়া।
বেসরকারি খাতে বকেয়ার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সামিট মেঘনাঘাট পাওয়ার কোম্পানির ৬২০ কোটি টাকা। সামিট গ্রুপের ৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে তিতাস গ্যাসের বকেয়া পড়েছে ৯৩৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
তিতাস গ্যাস সূত্র জানিয়েছে, মাহিদ অ্যাপারেলস লিমিটেডের (গ্রাহকসংকেত ৮/৩৩৬-৩৫৬) শিল্প রানে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে শিল্পরানে ৩০ কোটি ১৮ লাখ, ক্যাপটিভ পওয়ার রানে, ২৬ কোটি ২৬ লাখ। কয়েকদিনের মধ্যে আরও এক মাসের বিল যুক্ত হতে যাচ্ছে। তবে গ্যাসের স্বল্পচাপ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে ৬ কোটি ৫ লাখ টাকার বিল বিইআরসির নিস্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাবেক একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, কোম্পানিটির তদবিরের যন্ত্রনা ছিল খুবই অস্বস্তিকর।
তিতাস গ্যাসের হিসাব বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, গত অক্টোবর মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার দফতরের এক কর্মকর্তার তদবিরে কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধের সুবিধা দেওয়া হয়। ৪০ কোটি টাকা বকেয়ার বিপরীতে ৩০ শতাংশ এককালীন পরিশোধ এবং অবশিষ্ট বকেয়া ছয়টি কিস্তিতে পরিশোধ সুযোগ প্রদান করা হয়। কোনো কারণ ছাড়াই নিয়মিত বিল পরিশোধ থেকে বিরত রয়েছেন। গ্রাহক আজ পর্যন্ত বকেয়ার ৩০ পার্সেন্ট এমনকি নিয়মিত বিলের একটি টাকাও পরিশোধ করেনি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের অনুরোধে এ পর্যন্ত কয়েকবার সময় বৃদ্ধি করাহয়। কোম্পানিটির এক মাসের বিলের পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি টাকার মতো। সে হিসেবে তাদের বর্তমান বকেয়া ১৯ মাসের সমান দাঁড়িয়েছে।
তিতাস গ্যাসের একজন কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ৫৬ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিতে গেলে মাসে মাসে সুদ গুণতে হবে। আর ঋণ পেতে গেলে অনেক কাগজপত্র দরকার। প্রতিষ্ঠানটি ঋণ নেয়া ছাড়াই সুদবিহীন ঋণের সুবিধা নিচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সর্বশেষ চিঠি অনুযায়ী মে মাস পর্যন্ত বিল পরিশোধের জন্য সিডিউল করে দিয়েছে তিতাস। আমরাতো কোনো অনিয়ম করিনি। তিতাস থেকে সেবা নিয়েছি, নিচ্ছি এবং বিলও পরিশোধ করছি। তারা বলছে, ৫৬ কোটি টাকা বকেয়ার তথ্যও সঠিক নয়। ৫৬ কোটি টাকার মধ্যে ২৩ কোটি টাকার বেশি আমরা তিতাসের কাছে পাব। আমরা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি। ওই অংশ বাদ দিলে বকেয়া দাঁড়ায় ৩৩ কোটি টাকার মতো।