বিডি ঢাকা ডেস্ক
রাজশাহীর দুটি উপজেলার পাঁচটি সরকারি খাদ্য গুদামে সরবরাহ করা হয়েছিল হাজার বস্তা খাওয়ার অনুপযোগী চাল। এরই মধ্যে পাঁচ গুদামের ৯৫৪ বস্তা পচা চাল অপসারণ করা হয়েছে। যা শুরু হয়েছে গত ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে, গত ১০ সেপ্টেম্বর বুধবারও গুদামগুলো থেকে পচা চাল অপসারণ করা হয়। তবে এই চাল কে সরবরাহ করেছে তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বা এই চাল কী ভাবে গুদামজাত করা হলো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সরবরাহকারীদের তালিকাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুদামগুলোতে যে পরিমাণ পচা চাল মজুত রয়েছে তা যাচাই-বাছাই করে অপসারণ করতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগে যাবে। অপসারণ করা পচা চাল খাদ্য বিভাগের পরিত্যক্ত কোনো গুদামে স্থানান্তর করা হচ্ছে বলে খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে পাঁচ গুদামে হাজার হাজার বস্তা পচা চাল কাদের মাধ্যমে গুদামগুলোতে ঢুকেছে তাদের খুঁজে বের করতে খাদ্য বিভাগ রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি চাল সরবরাহ সংক্রান্ত রেজিস্টার ও পরিদর্শন বহি গুদামগুলো থেকে উধাও হয়ে গেছে। এ কারণে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি এসব নথিপত্র খুঁজে পাচ্ছেন না।
গত ২৬ আগস্ট জেলার দুর্গাপুর খাদ্য গুদামে রক্ষিত ১৩২ বস্তা খাওয়ার অনুপযোগী পচা চাল জব্দ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন। এই চাল কী ভাবে গুদামে এলো তার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছেন তিনি। গত ৪সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে ভবানীগঞ্জ খাদ্য গুদামের চারটি সংরক্ষণাগারে অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে চারটি খাদ্য গুদামই সিলগালা করে দেওয়া হয়। তবে এই চাল কয়েক হাজার বস্তা হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। পচা চাল জব্দের পর জেলার বাকি খাদ্যগুদামের মজুত চালের মান পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন উপকারভোগীরা।
রাজশাহী জেলায় খাদ্য বিভাগের ১২টি গুদাম (এলএসডি) রয়েছে। এগুলোর অবস্থান রাজশাহী সদর, পবার নওহাটা, তানোর ও কামারগাঁও, ভবানীগঞ্জ, মোহনপুর, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, বাঘা, চারঘাট, গোদাগাড়ীর রেলবাজার ও প্রেমতলীতে। এসব গুদাম থেকে খাদ্য বিক্রি ও বিতরণ কর্মসূচির আওতায় প্রতি মাসে ৯৮ হাজার ১৬৬ জন উপকারভোগীর মাঝে চাল সরবরাহ করা হয়।
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম জানান, গুদামে চাল সরবরাহের রেজিস্টার ও এসব চালের মান যাচাই বাছাই সংক্রান্ত পরিদর্শন বহিগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কারা বা কাদের মাধ্যমে এসব পচা চাল গুদামে ঢুকেছে তাদের নাম ঠিকানা কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া এসব চাল গুদামে গ্রহণের সময় খাদ্য বিভাগের কারা চালের ফিজিক্যাল ও গুণগত মান যাচাই করেছেন সেই পরিদর্শন বহিও পাওয়া যায়নি। এ কারণে সরবরাহকারীদের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি।
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম আরও জানান, পচা চাল যাচাই-বাছাই করে অপসারণে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। কারণ পচা চালের পরিমাণ অনেক।
বাগমারার ভবানীগঞ্জের চার গুদামে ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন মজুত চালের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই খাওয়ার অনুপযোগী বা পচা চাল বলে জানা গেছে। এই বিপুল পরিমাণ পচা চাল গত জুন ও জুলাই মাসে গুদামগুলোতে ঢুকানো হয়।
খাদ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিভিন্ন চালকল মালিকের কাগজপত্রে এসব পচা চাল গুদামে ঢোকায় স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা। যারা আগে কোনোদিন ধান চালের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। পরিত্যক্ত এসব চাল তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০ থেকে ২৫ টাকা করে কিনে সরকারি গুদামগুলোতে ৪৯ টাকা কেজি দরে সরবরাহ করেন। গুদাম কর্মকর্তাদের হাত করে তারা বিপুল পরিমাণ টাকাও উত্তোলন করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক সর্দার বলেন, উপজেলার চুক্তিবদ্ধ মিলারদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে পচা চাল সরবরাহকারিদের চিহ্নিত করা যাবে।
এদিকে বিপুল পরিমাণ পচা চাল মজুত ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িতদের অন্যতম ভবানীগঞ্জ গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও দুর্গাপুর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলা খাদ্য বিভাগ।
রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (ডিসি ফুড) ওমর ফারুক জানান, খাদ্য বিভাগের পৃথক একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তারাই পচা চালগুলো গুদামে আলাদা করে রাখছে। সিলগালা করা খাদ্য গুদামগুলো বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এসব পচা চাল কারা কিভাবে সরবরাহ করেছে তা তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রকাশ করা হবে।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফিয়া আকতার জানান, জেলার কয়েকটি গুদামে বিপুল পরিমাণ পচা চাল পাওয়ার বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতরকে অবহিত করা হয়েছে। পচা চাল গুদামে মজুত ও উপকারভোগীর জন্য সরবরাহের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ও পৃথকভাবে তদন্ত করছে। বিপুল পরিমাণ পচা চাল সরবরাহ ও মজুতের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের উপকারভোগীদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও বিক্রয় কার্যক্রম বিকল্প উপায়ে অব্যাহত রাখা হয়েছে।