ফয়সাল আজম অপু : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্টার অফিসে চলছে ঘুষ বানিজ্যের মহৎসব। এই সব ঘুষ প্রকাশ্য দলিল প্রতি বাইন্ডিংনরেখে টাকা আদায় করছে ঘুষ বানিজ্যের নাটের গুরু অফিস স্টাফ মোহরা সেলিম রেজা। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারী) সরজমিনে সাব-রিজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, প্রবীণ দলিল লেখক (মোহরি) তসলিম উদ্দীনের সাথে ঘুষ লেন-দেনের দরকষাকষি চলছে অফিস স্টাফ সেলিম মোহরার সাথে। ৫ হাজার টাকা দাবি করলে দলিল লেখক তসলিম উদ্দীন ২ হাজার টাকা দিতে চাই। এক পর্যায়ে ২ হাজার টাকায় দফারফা হলে দলিল ছেড়ে দেয় ঘুষখোর মোহরা সেলিম। এ নিয়ে বুধবার (২০ জানুয়ারী) দলিল লেখক সমিতি কলম বিরতি পালন করেন এবং সন্ধ্যায় উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি তোবজুল হক ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সাব-রেজিস্টার ইউসুফ আলি যোগদান করার পর থেকেই দলিলের বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে মোহরা সেলিমের মাধ্যমে রমরমা ঘুষ বানিজ্যে শুরু করে। প্রতিটি দলিলে কোন না কোন সমস্যা সৃষ্টি করে ঘুষের টাকা দাবি করে। এমনকি ইচ্ছেকৃত ভাবে দলিল রেজিস্ট্রী করিতে কালক্ষেপণ করে এবং অনেক রাত পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রাখে। বাংলাদেশ সরকারের আইন অনুযায়ী ওয়ারেশ সুত্রে খারিজ হবেনা, খারিজ করতে হলে বন্টননামা দলিলের প্রয়োজন। ওয়ারেশ সুত্রে আয়কর ছাড়া অথবা আয়কর বন্টননামা করলে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ লাগবে প্রকাশ্যে জানান সেলিমের মাধ্যমে সাব-রেজিস্টার ইউসুফ আলি। প্রবীণ দলিল লেখক তসলিম উদ্দিন ও একরামুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, অফিস স্টাফ মোহরা সেলিম প্রত্যেকটা দলিলের বিষয়ে টাকা আদায় করে থাকেন। না দিলে বিভিন্ন ভুল-ভাল দেখিয়ে সময় ক্ষেপন করেন। আজকে দলিল দাতা সিলেট যাওয়ার জন্য টিকিট কেটে রাখার সুযোগ নিয়ে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। এই টাকা না দিলে দলিল ছাড়া হবেনা সাফ জানিয়ে দেয় মোহরা সেলিম রেজা। তিনি আরও জানান, প্রতিটি দলিল লেখককে জিম্মি করে সাব-রেজিস্টারের কথা বলে, ভুক্তভোগীর নিকট থেকেই টাকা আদায় করে থাকে মোহরা সেলিমের মাধ্যমে সাব-রেজিস্টার ইউসুফ আলি। একইভাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে আরেক দলিল লেখক আব্দুল মালেক জানান, কয়েক দিন আগে আমি দলিল করতে গেলে মোহরা সেলিম, সাব-রেজিস্টার ইউসুফ আলির সামনেই খাস কামরায় ডেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি না হলে ১০ হাজার টাকা হলে করা যাবে বলে জানান। সেই টাকা দিতে অপারগতা জানালে, সন্ধ্যা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে দলিল সম্পাদন করে দেয়নি বলে জানান ভুক্তভোগী দলিল লেখক আব্দুল মালেক। এ বিষয়ে সাব-রেজিস্টার ইউসুফ আলির নিকট জানতে গেলে মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারী) বিকেল ৫ টার দিকে সেলিমের নেতৃত্বে ৮/১০ জন নকলনবিশ ও গুন্ডাবাহিনী নিয়ে এজলাসে বসা সাব-রেজিস্টারের সামনেই এই প্রতিবেদকের উপর চড়াও হয় এবং ক্যামেরা মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। একইদিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে এ বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা সাব-রেজিস্টার ইউসুফ আলির নিকট অভিযোগ করতে গেলে একইভাবে তাদের উপরও হামলা করেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন তারা। মোহরা সেলিম রেজা জানান, আমি যা করেছি সাব-রেজিস্টার স্যারের কথা মতোই করেছি, কারন উনি আমার উর্ধতন কর্মকর্তা, তার নিকট বিস্তারিত জানতে বলেন। সাব-রেজিস্টার ইউসুফ আলি ঘুষ বানিজ্যের কথা অস্বীকার করে জানান, এবিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। টাকা লেনদেন হয়ে থাকলে আমার অগোচরে হয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে মুঠোফোনে, জেলা রেজিস্ট্রার আলি আকবরের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে অবগত নন। তবে কেউ অভিযোগ করলে শক্ত ভাবে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। অপরদিকে, শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব-আল-রাব্বির মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।