শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ অপরাহ্ন

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকর্মীরা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৪৬৫ বার পঠিত

বাস্থ্যসেবা কর্মী ইয়োচুঙ্গু মারমা গত দশ বছরে গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন।এতো উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও, প্রত্যন্ত কমিউনিটির কাছে জীবন রক্ষাকারী উপকরণ পৌঁছে দিতে ইয়োচুঙ্গু এবং তার টিকা-প্রদানকারী দলকে পাবর্ত্য চট্রগ্রামের অনেক অঞ্চলে এখনও পায়ে হেঁটে যেতে হয়।

মারমা পাহাড়ি সম্প্রদায়ের সদস্য ইয়োচুঙ্গু বলেন, “এখন অনেক রাস্তা হয়েছে। তবে, এখনও টিকাদান কর্মসূচি  শুরুর আগের দিন আমাদের শহর থেকে যেতে হয়। ধূলাবালির রাস্তা শেষ হওয়ার পরে আমরা কয়েক ঘন্টা হাঁটি। তারপর, আমরা গ্রামের বয়স্ক কাউকে খুঁজে বের করি এবং তার বাড়িতে রাত্রি যাপনের অনুমতি নেই। পরের দিন সকাল ৯ টায় টিকা দেওয়া শুরু হয়।”

সঠিক তাপমাত্রায় ভ্যাকসিনগুলোর সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে ইয়োচুঙ্গু এবং তার দল ভ্যাকসিন বহনকারী ক্যারিয়ারগুলোতে বরফের খণ্ড দিয়ে প্যাক করেন। শিশুদেরকে টিকা দেওয়ার আগে ভ্যাকসিনগুলো যেন সম্পূর্ণ কার্যকর থাকে তা নিশ্চিত করতে তাপমাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

ইয়োচুঙ্গু আরও বলেন, “বিকেল বেলা টিকা দেওয়া শেষ হলে বরফ খণ্ডগুলো গলে যায় এবং ভ্যাকসিনের অবশিষ্ট ডোজগুলোকে অপসারণের জন্য চিহ্নিত করা হয়।”

সম্প্রতি দেশজুড়ে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ শিশুকে হাম ও রুবেলার টিকা দেওয়ার বিশাল কাজটি যারা সম্পন্ন করেছেন এমন হাজার হাজার বাংলাদেশি স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে ইয়োচুঙ্গু একজন।

অভিযোজনে প্রত্যাশিত ফলাফল

ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী ২০২১ পর্যন্ত জাতীয় হাম-রুবেলা টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে। মূলত ২০২০ সালের মার্চ মাসের জন্য পরিকল্পনা করা হলেও, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারির কারনে এই কর্মসূচিটি স্থগিত করা হয়েছিল।

আগের বছরগুলোর তুলনায় এই কর্মসূচি সম্পূর্ণ আলাদা ছিল।সাধারণত হাম-রুবেলা কর্মসূচি তিন সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তবে, টিকা দেওয়ার স্থানগুলোতে জনসমাগম এড়াতে এবারের হাম-রুবেলা কর্মসূচিটি ছয় সপ্তাহ ধরে চলেছে।

ইউনিসেফের সহায়তায় টিকা দেওয়ার স্থানে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা অনুসরন করা হয় যা স্বাস্থ্যকর্মী, অভিভাবক এবং শিশুরা অনুসরণ করেছে। মাস্ক ব্যবহার, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হাত ধোঁয়ার বিষয়গুলো তাদের কঠোরভাবে অনুশীলন করতে দেখা গেছে।

কোভিড-১৯ এর কারনে সৃষ্ট ভীতি ও দ্বিধা কাটিয়ে নিজেদের শিশুদের টিকা দিতে ও অন্যান্য ক্ষতিকারক রোগ থেকে তাদেরকে দূরে রাখতে বিশাখা চাকমার মতো অনেক অভিভাবকই দীর্ঘ পথ হেঁটে তাদের নিকটস্থ স্বাস্থ্য ক্লিনিকে এসেছিলেন।

বিশাখা চাকমা দুই সন্তানের মা। তাদের একজনের বয়স ৭ বছর এবং অন্যজনের বয়স ১০ বছর। তারা পাহাড়ের উপর বনের মধ্য দিয়ে পায়ে হেঁটে নিকটস্থ স্বাস্থ্য ক্লিনিকে পৌঁছেছিলেন।

বিশাখা বলেন, “টিকাদান কর্মসূচির বিষয়টি আমি আমার এক প্রতিবেশির কাছ থেকে শুনে আমার ছেলেদের টিকা দিতে নিয়ে এসেছি। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন হামের ঘটনা দেখেছি। বিষয়টি এখনো আমার মনে আছে। এটি খুব মারাত্মক রোগ এবং অত্যন্ত দ্রুত এটি ছড়ায়।”

সাফল্যের মূলে রয়েছে সুপরিকল্পিত কোল্ড চেইন

ইউনিসেফ গত চার বছরে রেফ্রিজারেশন সরঞ্জাম, যেমন কোল্ড রুম, কোল্ড বক্স এবং টিকা বহনকারী ক্যারিয়ার সংগ্রহের পাশাপাশি লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত তথ্য প্রবাহ উন্নত করা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশে কোল্ড চেইন সক্ষমতা জোরদার করতে ১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোল্ড চেইনে যে কোনও সমস্যা নেই এই বিনিয়োগ সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সহায়তা করেছে। এছাড়াও, নিরাপদ ও কার্যকর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত টিকা প্রদানে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ইয়োচুঙ্গু’র মতো স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে সহজলভ্য করতেও এটি সহায়তা করেছে।

ইউনিসেফের সহয়তা কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপশি সকল ভ্যাকসিন প্রদানে বাংলাদেশের সক্ষমতাকে জোরদার করেছে।

পরবর্তী লক্ষ্য

হাম-রুবেলা কর্মসূচির সাফল্য বাংলাদেশের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি টিকাদান কর্মসূচি এবং সন্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের সক্ষমতাকেই প্রমাণ করে।

ইয়োচুঙ্গু গর্ব করে বলেন, “যদি হাম-রুবেলা টিকাদান কর্মসূচিকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পরীক্ষা হিসাবে ধরা হয়, তবে আমি বলবো এক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট সফলতার সাথেই পাশ করেছি।”

তবে, কাজ এখনও শেষ হয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীদের অসাধারণ প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ, দেশজুড়ে কোভিড-১৯ এর টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে, যদিও নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি আগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ রয়ে গেছে।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চন্দ্রসেগারার সলোমন বলেন, “কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই যেন অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটাতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিকে ছড়িয়ে দেওয়ার সময় আমরা সমান্তরালভাবে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার দিকে আলোকপাত করছি। এটি একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। কিন্তু, সন্মূখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত রয়েছি।”

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com