চতুর্থ ধাপে রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ৫৫ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট চলবে। এসব পৌরসভায় ভোটগ্রহণের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই ধাপে প্রায় অর্ধেক পৌরসভায় ব্যালট পেপারে এবং অর্ধেক পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হবে।
ইসির যুগ্ম-সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘চতুর্থ ধাপে ৫৫টি পৌরসভায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ভোটের সবধরণের প্রচারও শেষ। নির্বাচনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।’
ইসি সূত্র জানায়, চতুর্থধাপের নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য ৫০১ জন নির্বাহী ও ৫৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকছেন। পুলিশের ১৬৭টি মোবাইল ও ৫৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং র্যাবের ১৬৭টি টিম মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেক পৌরসভায় গড়ে দুই প্লাটুন বিজিবি ও উপকূলীয় এলাকায় প্রতি পৌরসভায় এক প্লাটুন কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি পৌরসভায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে অতিরিক্ত র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
গত ৩ জানুয়ারি চতুর্থ ধাপে নির্বাচনের জন্য ৫৬টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করে ইসি। পরে সোনাইমুড়ি ও ত্রিশাল পৌরসভা এ ধাপে যুক্ত হয়। অন্যদিকে হাইকোর্টের আদেশে নাটোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ফেনীর পরশুরাম পৌরসভায় সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় এখানে ভোটের প্রয়োজন হবে না। জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভা নির্বাচন কার্যক্রম বন্ধের পর ফের তা চালু হয়। এছাড়া সহিংস ঘটনায় মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ভোট স্থগিত করে ইসি। এজন্য সব মিলিয়ে আগামীকাল ৫৫ পৌরসভায় ভোট হচ্ছে।
ইসি সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত পাঁচ ধাপে পৌরসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে কমিশন। ইতিমধ্যে তিন ধাপের পৌরসভা নির্বাচন সম্পৃন্ন হয়েছে। রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) চতুর্থ ধাপের ৫৫টি পৌরসভায় ভোট হবে। এর আগে প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় গত ২৮ ডিসেম্বর এবং গত ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভায় ভোট হয়। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে ৬৩টি পৌরসভার ভোট হয়। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম ধাপের ৩১ পৌরসভায় ভোট হবে।
যেসব পৌরসভায় রোববার ভোট হবে
ঠাকুরগাঁও সদর ও রাণীশংকৈল; রাজশাহীর নওহাটা, গোদাগাড়ী ও তাহেরপুর; লালমনিরহাট সদর ও পাটগ্রাম, নরসিংদী সদর ও মাধবদী, রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ, বরিশালের মুলাদী ও বানারীপাড়া, শেরপুর সদর ও শীবরদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, নাটোর সদর ও বড়াইগ্রাম, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, বান্দরবান সদর, বাগেরহাট সদর, সাতক্ষীরা সদর। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, কুমিল্লার হোমনা ও দাউদকান্দি, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও পটিয়া, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, হোসেনপুর ও করিমগঞ্জ, টাঙ্গাইলের গোপালপুর ও কালিহাতী, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও আলমডাঙ্গা, ফেনীর পরশুরাম, চাঁদপুরের কচুয়া ও ফরিদগঞ্জ, নেত্রকোনা সদর, যশোরের চৌগাছা ও বাঘারপাড়া, রাঙ্গামাটি সদর, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, জামালপুরের মেলান্দহ, ময়মনসিংহের ফুলপুর, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ও কালাই, নোয়াখালীর চাটখিল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, ফরিদপুরের নগরকান্দা এবং সিলেটের কানাইঘাট পৌরসভায়।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে ৩২৯টি পৌরসভা রয়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচ ধাপে ২৩৪টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্য তিন ধাপে ১৪৮টি পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ। গত ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ৬১ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং গত ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ ভোট পড়ে। আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যেই পৌরসভার ভোট করতে হয়। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়।