নিজস্ব সংবাদদাতা : করোনা টেস্ট জালিয়াতিতে জেকেজি’র সাবরিনা ও রিজেন্টের শাহেদ কাণ্ডের পর দ্বিতীয় ঢেউয়ে এবার উঠে এসেছে আরেক ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারির ঘটনা। প্রাতিষ্ঠানিক নাম ব্যবহার করে ৩ টি জালিয়াত চক্রের সরবরাহ করা কিট দিয়ে ইতোমধ্যেই দেশে অগণিত করোনা ভাইরাস সনাক্তের টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঠিক কতো মানুষ এমন নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ কিটের মাধ্যমে টেস্ট করিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রতারণায় অভিযুক্ত ৩ টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেবল বেসরকারিতে নয়, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালেও টেস্ট কিটগুলো সরবরাহ করা হতো।
দেশে কতোগুলো হাসপাতালে এবং কি পরিমাণে নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও মানহীন কিট সরবরাহ করা হয়েছে তার উত্তর খুঁজতে গভীর অনুসন্ধানে নেমেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ইন্টেলিজেন্স টিম।
অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে র্যাব ইতোমধ্যে ওই ৩ জালিয়াত প্রতিষ্ঠানের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। হেফজতে নেওয়া হয়েছে বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী মো. শামীম মোল্লাসহ আরও ৮ জনকে। জব্দ করেছে ৪ ট্রাক অননুমোদিত মেডিকেল পণ্য, মেয়াদোত্তীর্ণ করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার টেস্টিং কিট এবং রি-এজেন্টের মোড়কে নতুন করে মেয়াদ বসানো পণ্য।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে গ্রেপ্তারকৃততের জিজ্ঞাসাবাদ ও জব্দকৃত নথী পর্যালোচনা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা যাচ্ছে। এই ৩ জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে ইতোমধ্যে একাধিক সরকারি ও বেসরকরি প্রতিষ্ঠান কিট সংগ্রহ করে মানুষের করোনা টেস্ট করেছে। তবে, ওই কিটগুলো তারা জেনে নিয়েছে নাকি না জেনে নিয়ে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আজ শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, বনানী ও মোহাম্মদপুরের ৩টি প্রতিষ্ঠানে রাতভর অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-২। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল, হাইটেক হেলথ কেয়ার ও এক্সন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড।
তিনি আরও বলেন, ৪ ট্রাকে প্রায় ১২ টন পণ্য জব্দ করা হয়। করোনাভাইরাস, এইচআইভি ও রক্তসহ সব পরীক্ষার রি–এজেন্ট ছিল সেখানে। অনেকগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ, অনেকগুলো টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এবং কিছু অনুমোদনহীন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী মো. শামীম মোল্লা (৪০), ব্যবস্থাপক মো. শহীদুল আলম (৪২), প্রধান প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল বাকী ছাব্বির (২৪), অফিস সহকারী মো. জিয়াউর রহমান (৩৫), হিসাবরক্ষক মো. সুমন (৩৫), অফিস ক্লার্ক ও মার্কেটিং অফিসার জাহিদুল আমিন পুলক (২৭), সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার মো. সোহেল রানা (২৮), এক্সন টেকনোলজিস্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি মো. মাহমুদুল হাসান (৪০), হাইটেক হেলথ কেয়ার লিমিটেডের এমডি এস এম মোজফা কামাল (৪৮)।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছর করোনা টেস্ট সংক্রান্ত জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো: শাহেদ ওরফে শাহেদ করিম এবং জেকেজি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ।