ফয়সাল আজম অপু : চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মুন্সিগঞ্জ থেকে পোল্লাডাঙ্গা ঘাট এলাকার মহানন্দা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ না হওয়ায় প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধ একটু একটু করে দেবে গিয়ে সিসি ব্লক ও ইটের ম্যাট্রেসিং নদীতে বিলীন হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নদী সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও শহর সংরক্ষণ প্রকল্পের (১ম পর্যায়) মহানন্দা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ উপ-প্রকল্পের আওতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ঘাট হতে পোল্লাডাঙ্গা পর্যন্ত ৩১০০ মিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ ১৯৮৯ -১৯৯০ হতে ২০০০-২০০১ পর্যন্ত সময়ে ১০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ইট ম্যাট্রেসিংয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। যার মধ্যে সীমান্ত নদী সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প (৩৫টি উপ-প্রকল্প, ১ম পর্যায়, পার্ট-এ এবং বি) এর আওতায় পোল্লাডাঙ্গা বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ি সংলগ্ন মহানন্দা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ উপ-প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৩-০৪ইং হতে ২০০৮-০৯ইং পর্যন্ত সময়ে ১১৬২ মিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ সিসি ব্লকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। যা গত ১২/১৩ বছর ধরে বন্যায় একটু একটু করে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ১০০০ মিটার ইট ম্যাট্রেসিং কাজও। মুন্সিগঞ্জ ঘাটের মাত্র ১০০ মিটার উজানে ভারত হতে টাঙ্গন নদী মহনন্দা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। ভোলাহাট-ঝাউবোনা এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ কামাল হোসেন জানান, মহানন্দা ও ট্যাঙ্গন নদীর মিলিত প্রবাহ উল্লিখিত বাস্তবায়িত কাজের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যা বন্যার সময় ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ভোলাহাট রামেশ্বর মডেল ইনিস্টিটিউসান শিক্ষক মোঃ রাকিব হোসেন (কামাল) জানান, বাস্তবায়িত নদী তীর সংরক্ষণ কাজ দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর কোনো মেরামত বা সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে সীমান্তবর্তী এ প্রকল্পটি হুমকির মুখে পড়েছে। বন্যা মৌসুমে পানির প্রবল তোড়ে সম্পাদিত কাজের লাঞ্চিং এ্যাপ্রোন দেবে গেছে এবং শ্রোতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে এবং ব্লকগুলো নদীতে বিলীন হচ্ছে। অবিলম্বে লাঞ্চিং এ্যাপ্রোন শক্তিশালী করে মেরামত কাজ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। ভোলাহাট মহানন্দা নদী তীরবর্তী দলদলি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আরজেদ আলি ভুটু বলেন, নদীর পাড় বর্তমানে মেরামত বা সংস্কার কাজ করা না হলে ভেস্তে যাবে পুরো প্রকল্প। হুমকির মুখে পড়বে বিজিবি ক্যাম্পসহ আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা এবং আশপাশের গোটা এলাকা। বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে একটি উপজেলার ইউনিয়ন সহ বৃহৎ এলাকাকে বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী তাঁর। ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রাব্বুল হোসেন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভোলাহাট উপজেলা অফিস থাকলেও তাঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরে থেকে কার্যালয়ের কাজ করেন। সেখানে বসেই কাজ করেন বলে, ভোলাহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে দেখা যায় না। ভোলাহাটের অফিস ভোলাহাটে থাকলে উন্নয়ন গতিশীল হবে। এলাকাবাসীর দাবী কোটি কোটি টাকার প্রকল্প সম্পন্ন যাতে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে না যায় সেজন্য এখনি সংস্করনের দাবী করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভোলাহাট পওর উপ- বিভাগের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী (পুর) মোঃ আসিক আহমেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, খুব শীঘ্রই বাঁধ সংস্কারের কাজ আরম্ভ হবে, ইতিমধ্যে বস্তা এসে পৌঁছেছে এবিষয়ে ভোলাহাট নির্বাহী অফিসারের সাথে কথাও হয়েছে। বিষয় গুলো আরও বিস্তারিত জানতে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। অপরদিকে, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেদী হাসান মুঠোফোনে জানান, গত কয়েকদিন প্রবল বৃষ্টির কারনে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বটে, তবে হুমকির কিছু নেই। মেরামতের জন্য ইতিমধ্যে বালির বস্তা সহ সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, বন্যার সময় বাঁধের বেশ কিছু জায়গা দেবে এলাকা প্লাবিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় স্থানীয় প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ তোড়জোড় লক্ষ্য করা যায়। ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে বস্তা ফেলে অস্থায়ী কাজ করলেও পরবর্তীতে তাদের আর কোন ভূমিকা না থাকায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।