নওগাঁ সংবাদদাতা : আমের কথা ভাবতেই রাজশাহী কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কথা মনে ভেসে উঠে। কিন্তু গত এক দশকে আম চাষে পাল্টে গেছে উত্তরের আরেক জনপদ নওগাঁ। যা আমের নতুন রাজধানী হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে ইতোমধ্যেই। উঁচু ও শুকনো অঞ্চল হিসেবে পরিচিত পত্নীতলা, পোরশা, নিয়ামতপুর, সাপাহার উপজেলাসহ জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গড়ে উঠছে ছোট ছোট আমের রাজত্ব।
জেলার আম চাষিদের দাবি, নওগাঁ জেলা পরিচিতির কারণ পোরশা- সাপাহারের ধান আর আম। তারা বলছেন, ধানের জন্য বিখ্যাত ছিল নওগাঁ। যেদিকে চোখ যায় দেখা যেত শুধু ধানক্ষেত। কিন্ত ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয়েছে আমের বিল্পব। আনাচে-কানাচে গড়ে উঠছে আমবাগান। কৌশলে ধানের জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে আমের চাষ হয়ে উঠছে জনপ্রিয়।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সারাদেশে মোট আমের উৎপাদন ছিলো প্রায় ২৩ লাখ ৭২ হাজার টনের কিছু বেশি। এর মধ্য নওগাঁ থেকে আসে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮৬ টন আম। যেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টন এবং রাজশাহী থেকে এসেছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ টন। চলতি মৌসুমেও আম উৎপাদনে রাজশাহী কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে যেতে পারে নওগাঁ।
পোরশা উপজেলার আমচাষি হাসিবুল এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, জেলায় এখন অনেক আম উৎপাদন হয়। আমার বাড়িতে একটা বাগান ছিল। ভাবলাম আম চাষের জন্য আরেকটা লিজ নিই। এখন দুই বাগানে আম আছে। তবে, এবার করোনায় কি হয় বলা যাচ্ছে না। আর আম সংরক্ষণের উপায় না থাকায় সমস্যা। তার আগেই আম বিক্রি হয়ে যায়।
এই আম চাষি বলেন, আল্লাহর রহমতে এবার গাছে অনেক আম। গত বছর ২৫’শ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এবারও ভালো দামে বিক্রি হবে আশা করছি। বরাবরই ধানের চেয়ে আমের দাম বেশি। ৯’শ টাকা মণের ধানের চাইতে ৩ হাজার টাকা মণের আম চাষ বুদ্ধিমানের।
কয়েক উপজেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ছোট-বড় ২৫০টি আমের আড়ৎ রয়েছে। প্রতি বছর এই আড়তগুলোর অধীনে কাজ করছেন প্রায় ১০ হাজার মৌসুমি শ্রমিক। আম নামানো থেকে শুরু করে পরিবহনে দিনরাত কাজ করেন তারা। এসব শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬’শ থেকে ৮’শ টাকা। আবার মৌসুমের পুরোটাই কাজের জন্য অনেককে কিনে নেওয়া হয়। বাগান দেখাশুনা করা আর আম নামানোই তাদের কাজ।