নিজস্ব সংবাদদাতা : দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙছে। আজও ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এখন পর্য করোনায় মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড। সোমবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ৮টা পর্যন্ত সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় এসব মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ হাজার ৪৯৭ জনে। একই সময়ে আরো ৪ হাজার ২১৭ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৭ লাখ ২৩ হাজার ২২১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, একদিনে আরও ৬ হাজার ৩৬৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৬ লাখ ২১ হাজার ৩০০ জন হয়েছে।
আজকের বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ২৬০ টি ল্যাবরেটরিতে ২৪ হাজার ১৫২ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
আজ মারা যাওয়া ১১২ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৭৫ জন পুরুষ ও ৩৭ জন নারী। তাদের মধ্যে ১০৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, তিনজন বাড়িতে এবং একজন হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন। বয়স বিবেচনায় তাদের মধ্যে ৬৪ জন ষাটোর্ধ্ব ছিলেন। বাকিদের মধ্যে ২৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, ১২ জনের ৪১ থেকে ৫০ এবং ১০ জনের ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল। বিভাগভিত্তিক হিসাবে তাদের ৭১ জন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। বাকিদের মধ্যে ১৯ জন চট্টগ্রাম, ১০ জন খুলনা, ৫ জন রাজশাহী, ৩ জন সিলেট,২ জন রংপুর এবং একজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
আজ পর্যন্ত দেশে মারা যাওয়া ১০ হাজার ৪৯৭ জনের মধ্যে ৭ হাজার ৭৬৯৪ জন পুরুষ এবং ২ হাজার ৭২৮ জন নারী।
দেশে গত বছর ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য জানায় সরকার। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মাত্র ৩ মাসের মাথায় দৈনিক শনাক্ত ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ডিসেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। এমনকি একসময় দৈনিক শনাক্ত ৩০০-রও নিচে নেমে আসে। এরই মধ্যে দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলে কিছুটা স্বস্তি নামে। তবে এই স্বস্তি খুব বেশিদিন থাকেনি। দেশে সংক্রমণের যখন একবছর হতে চলেছে, ঠিক সেসময় নতুন করে বাড়তে শুরু করে সংক্রমণ। প্রায় প্রতিদিনই ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের দিনের সংক্রমণের সংখ্যা। এরই মধ্যে গত সোমবার থেকে সাতদিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে শতাধিক দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে বাংলাদেশ ৩৩তম এবং মৃতের সংখ্যায় ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে।
সরকার ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ হতে সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি ব্যবহার করছে, যা ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট হতে সংগ্রহ করা হয়।
কোভিড-১৯ মহামারির থাবায় বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে প্রাণহানির ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। সোমবার সকালে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় (জেএইচইউ) থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩০ লাখ ১৭ হাজার ৫৫৫ জনে।
এছাড়া, ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ১১ লাখ ২৪ হাজার ৩৭৮ জনে।
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ৩ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮০ জন করোনায় আক্রান্ত এবং ৫ লাখ ৬৭ হাজার ২১৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল আক্রান্তে তৃতীয় ও মৃত্যুর দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। রবিবার দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগী ১ কোটি ৩৯ লাখ ৪৩ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩৫ জনের।
পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে করোনায় আক্রান্ত দেশের তালিকায় দ্বিতীয় এবং মৃত্যু নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ১ কোটি ৪৭ লাখ ৮৮ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মারা গেছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৫০ জন। দেশটিতে গত দুদিন ধরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি।