মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৬ অপরাহ্ন

পশ্চিমবঙ্গে আবারো উঠে দাঁড়ালেন,মমতার হ্যাটট্রিক বিজয়

সত্যনারায়ন শিকদার,পশ্চিমবঙ্গ সংবাদদাতা
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২ মে, ২০২১
  • ৩০২ বার পঠিত

সত্যনারায়ন শিকদার,পশ্চিমবঙ্গ সংবাদদাতা :  উঠে দাঁড়ালেন, যেমন দাঁড়াতেন। চলাফেরায় সেই দৃপ্ত ভঙ্গিমা। চেনা সেই ক্ষিপ্রতা। ৫২ দিন পর তাঁকে হাঁটতে দেখল গোটা দেশ। দীর্ঘ এই সময়ের সঙ্গী হুইলচেয়ার ছেড়ে এমন মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেঁটে সামনে এলেন, যখন নীলবাড়ির লড়াইয়ে তিনিই জয়ী। শুধু জয় নয় দু’শোরও বেশি আসন তখন তাঁর মুঠোয়। রবিবারের বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনুগামীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে সোজা চলে গেলেন সংলগ্ন অফিসে।

১০ মার্চ। নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ায় আহত হয়েছিলেন মমতা। তার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে যেখানেই গিয়েছেন সঙ্গী হুইলচেয়ার। মাঝে এক বারই নন্দীগ্রামে শেষপ্রচারের দিন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় এক পায়ে ভর দিয়ে হুইলচেয়ার থেকে উঠেছিলেন এক বার। কিন্তু রবিবার সেই পরিচিত ভঙ্গিমায় দেখা গেল তাঁকে। দাঁড়িয়ে জরুরি কথাও সারলেন ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তার পর সংক্ষিপ্ত বার্তা অনুগামীদের প্রতি।

নীলবাড়ির লড়াইয়ে এক দিকে একা তিনি। অন্য দিকে, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ। জেপি নড্ডা। যোগী আদিত্যনাথ। ধর্মেন্দ্রপ্রসাদ। কৈলাস বিজয়বর্গীয়… তাঁদের সহযোগী এ রাজ্যেরই দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীরা। ভাইপো অভিষেক অনেকটা সামলেছেন বটে কিন্তু গেরুয়া রথীদের ওই চক্রব্যূহে মমতা ছিলেন একেবারেই কেন্দ্রীয় লক্ষ্য। তবে তিনি যুঝে গিয়েছেন। ‘খেলা হবে’ যখন বলছেন, ময়দানে তখন তিনি সত্যিই একা। তিনি অবশ্য বার বারই বলেছেন তাঁর সঙ্গে আছে বাংলার অগণিত মানুষ। কিন্তু রবিবার যখন তিনি প্রকাশ্যে এলেন, তত ক্ষণে সেই পদ্মচক্রব্যূহ ছারখার। মমতা বিজয়ী। ২৯৪ আসনে তিনিই প্রার্থী, আগে বহু বার বলেছেন। রবিবার সেই ‘বলা’কে সত্যি প্রমাণিত করেছেন যখন, সেই সময়ে নিজের দাঁড়ানো আসন নন্দীগ্রামে মাত্র কিছু ভোটে তিনি হেরে গিয়েছেন। তাকে পরোয়া না করেই জানিয়ে দিলেন, নন্দীগ্রামের রায় মাথা পেতে মেনে নিচ্ছেন। যদিও একই সঙ্গে কারচুপির তত্ত্বও তুলেছেন তিনি। ফলাফল নিয়ে আদালতে যেতে পারেন বলেও জানান।

ততক্ষণে বাড়িতে এসে গিয়েছেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (পিকে)। বিকেলেই কলকাতা বন্দর কেন্দ্রে নিজের জয় নিশ্চিত করে দলনেত্রীর বাড়িতে পৌঁছেছেন ফিরহাদ (ববি) হাকিম। কোভিডবিধি মেনে এ বার আর মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় করতে দেওয়া হয়নি। অতি উৎসাহীরা কিন্তু তত ক্ষণে অল্প অল্প ভিড় জমিয়েছেন ৩০ বি হরিশ চ্যাটার্জি ষ্ট্রিটে। সেই খবর পেয়ে বাইরে এসেছিলেন মমতা। তার কিছু আগেই সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, ১২০০ ভোটে নন্দীগ্রামে জয়ী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

যদিও পরে জানা যায়, শুভেন্দু অধিকারীই ওই কেন্দ্রে জিতেছেন। বাড়ির সামনের তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে ওঠেন মমতা। কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এই জয় আপনাদের জন্য এসেছে। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই বলছি, কোনও ঝুঁকি না নিয়ে বাড়ি যান। ঠিক সময় কোভিড সংক্রমণ কমলে ঘোষণা করা হবে বিজয় মিছিলের দিন। ব্রিগেডে হবে।’’

দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন প্রাপ্তি এবং ভোট শতাংশের হিসেব কষে নির্বাচনী বিশ্লেষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-রও একটা অংশের সমর্থন গিয়েছে মমতার ঝুলিতে। বিজেপি যখন রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের প্রচার চালাচ্ছে, মমতা তখন মধ্যবিত্ত, মহিলা এবং সংখ্যালঘু ভোটারদের একত্রিত করে ফেলেছেন বলেই বিশ্লেষকদের একাংশের মত। তা না হলে এই জয় এবং ভোট শতাংশ তৃণমূলের ঝুলিতে আসা সম্ভব নয় বলেই তাঁদের ধারণা। কারণ, তৃণমূলের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভোট শতাংশপ্রাপ্তি এ বারই।

সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক শেষ করে অভিষেক এবং পিকে-কে নিয়ে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যান মমতা। পয়লা বৈশাখের আগের দিন রাতে ওই মন্দিরেই পুজো দিয়েছিলেন তিনি। পুরোহিতদের বলে এসেছিলেন, জয়ী হলে ফের আসবেন পুজো দিতে। আসন জয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করে তাই মানত পূরণ করতেই কালীঘাট মন্দিরে গিয়েছিলেন মমতা।

বার বার তিন বার তাঁর হাতেই যে গেল রাজ্যের শাসনভার।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com