অনলাইন নিউজ : করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এবং যেকোনো সময় বাংলাদেশে চলে আসতে পারে বলে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন । তিনি বলেছেন, বিশে^র ১১০টির মতো দেশে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পর ইউরোপের বিভিন্ন হাসপাতালের প্রতিবেদন অনুযায়ী সেখানে শিশু ও কমবয়সিদের হাসপাতালে ভর্তির হার বেড়েছে। এ বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সুতরাং এটি নিয়ে একেবারে হেলাফেলা কিংবা তুচ্ছ করার কেনো সুযোগ নেই। রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে এক ভার্চুয়াল বুলেটিনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির মুখপাত্র।
ডা. রোবেদ আমিন বলেন, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য এবং গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ওমিক্রনের বিষয়ে কতগুলো বিষয় জানা গেছে। অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা ২ থেকে ৩ গুণ বেশি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী যেসব ঝুঁকির কারণে কোভিড-১৯-এ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, দেখা গেছে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা ৩০ ভাগ কম। এটা আমাদের জন্য একটা ভালো খবর। ডেল্টা বা আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা ২০ ভাগ কম থাকবে।
আরেকটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে পুনর্বার সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এই ভ্যারিয়েন্ট অন্য রোগের সৃষ্টি করে কি না তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু অথবা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা থাকবে কি না সে সংক্রান্ত বেশি তথ্য নেই। যেটুকু জানা গেছে, দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিনের কিছু কিছু কার্যকারিতা থাকে কিন্তু শতভাগ কার্যকারিতা থাকে না। তবে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরে কেউ যদি বুস্টার ডোজ নিয়ে থাকে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। ৭৫ ভাগের বেশি প্রটেকশন থাকবে এটা প্রমাণিতÑ বলেন তিনি।
ওমিক্রন রোধে করণীয় বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র বলেন, আগে যেসব প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছিল সেগুলোই থাকবে। কাপড়ের মাস্কের চেয়ে মেডিকেল গ্রেডের মাস্ক ব্যবহার করলে ওমিক্রন থেকে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যায়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে, খোলামেলা আবহাওয়ায় থাকলে এবং বারবার হাত ধুতে পারলে আমরা অনেক বেশি ট্রান্সমিশন রোধ করতে পারব।
তিনি বলেন, আগের ভ্যারিয়েন্টগুলো থেকে ওমিক্রনে আক্রান্ত অনেক বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউরোপ এবং আমেরিকায় যেসব কেইস পাওয়া গেছে তাতে হাসপাতালে ভর্তি, সঙ্কটাপন্ন হয়ে যাওয়া, আইসিইউতে থাকার মতো পরিস্থিতি দেখা যায়নি।
ডা. রোবেদ আমিন বলেন, যদি কেউ আগে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং পরবর্তীতে ভ্যাকসিন নেন তাহলে তাদের সংক্রমণের আশঙ্কা কম থাকবে। তবে যেহেতু এটি দ্রুত ছাড়ায় তাই আমরা যদি অসংখ্য রোগী পেয়ে যাই, সে ক্ষেত্রে অন্য রোগের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন লাখ ছাড়াচ্ছে সংক্রমণের হার। সে জন্য তারা বুস্টার ডোজের মাধ্যমে সংক্রমণের হার কমানো যায় কি না সে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আক্রান্ত ও সুস্থতার দিক দিয়ে ঢাকা বিভাগ শীর্ষে রয়েছে। রাজধানীতে কোভিডের জন্য তৈরি করা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৭৪৮টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৪ হাজার ৪২৮টি খালি এবং ৭৭০টি আইসিইউর (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) মধ্যে ৬৮৭টি খালি রয়েছে।
ডা. রোবেদ আমিন জানান, দেশে এ পর্যন্ত করোনা টিকার জন্য এনআইডির মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন ৭ কোটি ৫০ লাখ ৯১ হাজার ১৫২ জন এবং পাসপোর্টের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন ১১ লাখ ৬২ হাজার ১০৬ জন। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি (নিয়মিত মাস্ক পরিধান, সাবানপানি নিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা) এবং শিষ্টাচার মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
এ জাতীয় আরো খবর..