শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন

শতকোটি টাকা নিয়ে উধাও আমার বাজার-ডেসটিনি সিইওর এমএলএম ই-কমার্স ব্যবসা , প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহকের মাথায় হাত

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১
  • ৪৩১ বার পঠিত
শতকোটি টাকা নিয়ে উধাও আমার বাজার-ডেসটিনি সিইওর এমএলএম ই-কমার্স ব্যবসা , প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহকের মাথায় হাত
ফাইল ফটো

প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহকের অর্থ লুটে নিয়ে অফিস বন্ধ করে দিয়েছে আমার বাজার লিমিটেড নামে একটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিংভিত্তিক (এমএলএম) ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার মূল দায়িত্বে রয়েছেন বিতর্কিত ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিনের ভাতিজা আশরাফুল আমিন। আশরাফুল ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি ট্রেনিং সেন্টারের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) ছিলেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক জোগাড় করে আমার বাজার লিমিটেড। সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেন গ্রাহকরা। গত এক মাস আগে অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধাররা।

জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি ট্রেনিং সেন্টারের সাবেক সিইও এবং ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের এমডি রফিকুল আমিনের ভাতিজা মো. আশরাফুল আমিন আমার বাজার লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এমএলএমের আদলে প্রতিষ্ঠানটি ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করত। এর নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ।

গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মো. মামুনুর রশিদ। ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) হিসেবে নাম রয়েছে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের। তারা ওই গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও পরিচালনায় মূল দায়িত্বে ছিলেন আশরাফুল আমিন। প্রতিষ্ঠানটিতে তার পদবি ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর। মূলত ডেসটিনির বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে নিজেকে আড়ালে রেখে আমার বাজার লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন। আমার বাজার লিমিটেডের বেশ কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় আমাদের সময়ের। তারা সবাই বলছেন, আশরাফুল আমিনই এই কোম্পানির প্রধান। কিন্তু ডেসটিনির বিতর্ক ঢাকতে তিনি ডিএমডি পদে থেকে সব কাজ পরিচালনা করেন।

মঞ্জুরুল ইসলাম নামে এক গ্রাহক বলেন, আমরা ফাঁদে পড়ে গেছি। আশরাফুল আমিনই পুরো কোম্পানির দেখভাল করেন। কিন্তু এখন টাকা ফেরত পাচ্ছি না কেউই। কারও ফোন ধরছেন না। এখন আবার অফিসও বন্ধ। জানা যায়, গ্রাহক এবং শেয়ারহোল্ডারদের শতকোটি টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে আমার বাজার লিমিটেডের কাছে। গত মাসের ১৮ তারিখ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় অফিস।

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার পরপর দুদিন সরেজমিন নয়া পল্টনের কাশফিয়া প্লাজার পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় আমার বাজার লিমিটেডের অফিসে গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। নিরপত্তারক্ষীরা বলছেন অফিস বন্ধ।

গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাত্র ১১০০ টাকা দিয়েই আমার বাজার লিমিটেডের সদস্য করা হতো। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক কোনো পণ্য পেত না। তবে পণ্য বিক্রি করে দিলে কমিশন দেওয়া হতো। পণ্যসহ সদস্য হতে জমা দিতে হতো ১৫০০ টাকা। এভাবে পণ্য দেওয়ার কথা বলে নিবন্ধিত গ্রাহকের মাধ্যমে সারাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ সদস্য থেকে টাকা সংগ্রহ করে আমার বাজার লিমিটেড। এ কাজে নানা চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন ও লোভনীয় অফার ঘোষণা দেওয়া হতো। এ ছাড়া মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে নানা ধরনের চুক্তির খবরও জানাতেন শীর্ষ কর্তারা। এতেই গ্রাহকরা প্রলুব্ধ হয়ে যুক্ত হতো আমার বাজার লিমিটেডের সঙ্গে।

টাকা নিলেও গত এক বছর ধরে গড়িমসি শুরু করে পণ্য দিতে। এমনকি গ্রাহকদের ফোন ধরাও বন্ধ করে দেন অফিস কর্মকর্তারা। সর্বশেষ গত মাসের ১৮ তারিখ থেকে অফিস বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরাও। এমনকি বকেয়া রাখা হয় অফিস ভাড়াও।

এ বিষয়ে ভবনের ম্যানেজার জাবেদ হোসেন বলেন, এখনো পাওনার বিষয়টি মেটেনি। তারা অফিস ছেড়ে দেবে। নিচের একটা ফ্লোরের কিছু অংশ রাখবেন বলে কথা হয়েছে।

ভুক্তভোগী গ্রাহক আব্দুর রশিদ রুবেল বলেন, আমার প্রায় দেড় লাখ টাকা পাওনা। নানা সমস্যায় চেষ্টা করলেও টাকা ফেরত পাচ্ছি না। অন্য একজন ভুক্তভোগী আখলাক হোসেন বলেন, আমারও টাকা পাওনা রয়েছে। অনেকবার টাকা ফেরত চেয়েছি। কিন্তু টাকা ফেরত দিচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আশরাফুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু এসব বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। সারাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক রয়েছে, হাজার হাজার টিম রয়েছে। সবার টাকা পাওনা। কিন্তু টাকা ফেরতের কোনো উপায় দেখছি না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে গত দুদিন মো. আশরাফুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তার মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও রিসিভ করেননি। গণমাধ্যমের পরিচয় এবং কথা বলার বিষয় লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি ফোন করেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশিদ আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিষ্ঠান চলমান রয়েছে। কোনো সমস্যা নেই। তবে সরেজমিন দুদিন অফিস বন্ধ দেখার কথা জানালে তিনি বলেন, বাড়িওয়ালার সঙ্গে একটু ঝামেলা আছে। তাই বন্ধ ছিল। এখন থেকে খোলা থাকবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com