শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৬ অপরাহ্ন

নেত্রকোনাবাসীর পরিচিত ঘটক নিজে বিয়ে না করলেও দিয়েছেন ২৫০ বিয়ে!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩
  • ১৭০ বার পঠিত

নিজে বিয়ে না করেও দিয়েছেন আড়াইশর মতো বিয়ে। বিয়ে দেয়ার এ কাজে তিনি কোনো চুক্তি করেন না। উভয় পক্ষ খুশি হয়ে কিছু যাতায়াত খরচ দিলে তা থেকে বাঁচিয়ে ছোট ভাইয়ের এতিম দুই সন্তানের ব্যয়ভার বহন করেন। জানালেন নিজে বিয়ে না করার প্রসঙ্গেও। বলছি নেত্রকোনাবাসীর পরিচিত ঘটক ৬৭ বছর বয়সী হাবিবুর রহমান হাবিবের কথা।

নিজে বিয়ে না করলেও দিয়েছেন ২৫০ বিয়ে!

দিনভর শহরের নানা প্রান্তে দেখা মিলবে গোঁফওয়ালা জুতাবিহীন সেই হাবিবের। পকেটভর্তি টুকরো টুকরো শতাধিক কাগজ। আপন মনে বসে বসে খোঁজেন ঠিকানা। পুরোনো দিনের মতোই চলে বিয়ের আলাপচারিতা। সবাই সাধলেও মনের সঙ্গে মিল না হলে কিছুই খান না তিনি। সাদামাটা জীবনে নেই উচ্চ চাহিদা।

বিয়ের পাত্র-পাত্রীর খোঁজে কেউ যাতায়াত খরচ দিলে তা থেকে বাঁচিয়ে বাড়িতে পাঠান। সেখানে মৃত ভাইয়ের বাচ্চাদের ভরণপোষণের খরচ দিতে হয় তাকে। তাই কষ্ট করে হেঁটে পথ চলেন তিনি। এ সহজ জীবন নিয়ে খুশির অন্ত নেই তার।

যারা চেনেন এ ঘটককে তারাও একই কথা জানালেন, তাকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিতে হয় না। তিনি কেবল দুপক্ষের সমন্বয় করে দেন। বাকি কাজ নিজেরা মিলেমিশে করেন। এতে বিয়ে হলে খুশি হয়ে যা দেয় তাই নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট। কেউ কেউ জুতা না পরায় আশ্চর্য মানুষ ভাবেন তাকে।

ঘটক হাবিবের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপচারিতায় জানা যায়, তিনি ২৯ বছর বয়স থেকে শুরু করেন ঘটকালি। এখনও চলছে দুই জোড়া হাত এক করে দেয়ার এ কাজ। তবে নিজে বিয়ে না করার কারণ হিসেবে বললেন, পীরের নিষেধ আছে। জানালেন তার জুতা না পরা ও দীর্ঘ গোঁফের বিষয়ে।

তিনি বলেন, ‘আমার পীরের নির্দেশনায় খালি পায়ে থাকি এবং এ গোঁফ পীরের দেয়া। তিনিই আমাকে বিয়ে করতে বারণ করেছেন।’

এত বিয়ে দিয়েছেন তিনি, কখনো কোনো ঝামেলা তৈরি হয়েছে কি না–জানতে চাইলে বলেন, ‘আজ পর্যন্ত কেউ কোনোদিন বলতে পারেনি যে, এটা আপনি কী করলেন। আমার দেয়া বিয়ের সবাই সুখে আছেন।’

নামকরা লোকজনের বিয়ের কাজ করেছেন হাবিব। অনেক পরিবারে একাধিক বিয়ের ঘটকালি করেছেন।

ফেরদৌস আলম নামে এক বাসিন্দা জানান, তার এক আত্মীয়র বিয়ে দিতে হবে। তখনই পরিবারের আলোচনায় উঠে আসে হাবিব ঘটকের কথা। তার সহজ জীবনে তিনি বিয়ের কাজটাও সহজে করেন।

প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ম. কিবরিযা চৌধুরী হেলিম জানান, তার পরিবারেরও ৬টি বিয়ে দিয়েছেন এই হাবিব ঘটক।

হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, বছরে ১৫০টির মতো বিয়ের আলাপ আসে। সেখান থেকে ১০-১২টি বিয়ে সম্পন্ন করতে পারেন। সব মিলিয়ে গত ৩৮ বছরে অর্ধলক্ষাধিক বিয়ের পাত্রপাত্রী দেখেছেন তিনি। তার মধ্যে আড়াইশর মতো হবে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এক সময় তিনি নেত্রকোনা শহরের সাতপাই এলাকার বাসিন্দা প্যানেল মেয়র এস এম মহসীন আলমের বিয়ে দিয়েছিলেন। ওই সময় বছরখানেক তাদের ওখানেই খাওয়াদাওয়া করতেন। এ ছাড়া ছোট বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাইলাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাইয়ুম শেলু তার খাওয়াদাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন কিছুদিন। এভাবে শহরের বিভিন্ন জনের প্রিয় মানুষ ছিলেন। ফলে বোহেমিয়ান জীবনযাপন করেও শহরেই থাকতেন। পরে বৃদ্ধ মা খবর পাঠান বাড়ি চলে যেতে। এরপর বারহাট্টার আসমা গ্রামে মায়ের কাছে চলে যান।

তিনি আরও জানান, কিছুদিন হলো মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ছোট এক ভাই ছিল। তিনিও মায়ের মৃত্যুর কিছুদিন পর মারা যান। ভাইয়ের সংসারে দুই ছেলে রয়েছে। বর্তমানে তিনি ভাইয়ের দুই এতিম ছেলের দেখাশোনা করছেন। পাত্র-পাত্রী দেখার কাজে কেউ যাতায়াত খরচ দিলে তিনি হেঁটে চলাচল করে, কম খেয়ে সে টাকা থেকে বাঁচিয়ে তাদের সহযোগিতা করেন।

চাওয়া-পাওয়াহীন এক সরল জীবন হাবিবের। বয়স হলেও হয়নি বয়স্কভাতা কার্ড। জাতীয় পরিচয়পত্রটিও হারিয়ে ফেলেছেন। তারপরও খুঁজে যাচ্ছেন দুই হাত এক করার সম্বন্ধ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com