বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:২৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
রাজশাহীতে নির্মাণাধীন ভবনে তরুণীর রক্তাক্ত লাশ, ভাই-ভাবিসহ আটক ৩ বেড়ানোর কথা বলে বোনকে খুন করলেন সৎভাই রাজশাহীতে সিবিএ নেতাকে মারধরের অভিযোগ, চিনিকলে উত্তেজনা আজ ৫৪তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আয়োজন :জেলা পর্যায়ে উদ্বোধনী ও আইডিয়া শোকেসিং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ৮০ কি.মি. বেগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রামেবি স্থাপনের জমির দখল বুঝে পেল কর্তৃপক্ষ নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতের লক্ষ্যে হোটেল ও রেস্তোরা পরিদর্শনে রাসিকের স্যানিটারী পরিদর্শকগণ মশা নিয়ন্ত্রণে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

পবিত্র রমজান মাসে রোজাদারের কষ্ট লাঘবের উপায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১
  • ৫৩৯ বার পঠিত

ফাতেমা আক্তার ময়না : পবিত্র রমজান মাস রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস। সাধারণ সময়ে কোনো কাজের জন্য যে পুণ্য পাওয়া যায় এ মাসে তার তুলনায় সত্তর গুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত অথবা আল্লাহ তা‘আলা চাইলে তারও চেয়ে বেশি পুণ্য বাড়িয়ে দিতে পারেন।

রোজার মাধ্যমে প্রকৃত রোজাদারগণ আল্লাহর কাছে প্রতিদান চান। এই রোজা রাখা একটি বড় বিষয়। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত-এই লম্বা সময় পানাহার ও যৌন তৃপ্তি মেটানো থেকে দূরে থাকতে হয়। অনেক কষ্ট করতে হয়।

রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। এই ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবার আগে চলে আসে তা হচ্ছে রোজার মাস এলেই দেখা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে আকাশচুম্বী হতে থাকে। যে খাবার ইফতার ও সেহরিতে বেশি ব্যবহার করা হয়, দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে সেই সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ‌্যকে হাতের নাগাল থেকে বাইরে সরিয়ে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের এ ধরনের চিন্তা থেকে ফিরে আসা উচিত। দ্রব্যমূল্য না বাড়ানোর মাধ্যমে রোজাদারকে স্বস্তি দেওয়া যেতে পারে এবং এর মাধ্যমে রোজাদারের কষ্ট লাঘব করা যেতে পারে।

রোজাকে সামনে রেখে মজুদদারি ও কালোবাজারি বন্ধ করার মাধ্যমে রোজাদারের কষ্ট লাগবে অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। এই রোজার মাসে অধিক মূল্য পাওয়া যাবে, চাহিদা বেশি থাকবে এমন চিন্তা করে অনেক ব‌্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মজুদ করে থাকেন। রাসূল (সা.) মজুদদারিকে নিরুৎসাহিত করেছেন এবং সাবধান করেছেন। মজুদদাররা তাদের এই কৃতকর্মের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবেন। সেই ক্ষেত্রে আমরা মজুদদারি বা কালোবাজারির মতো দুষ্কর্ম হতে দূরে থেকে রোজাদারের কষ্ট লাগবে কাজ করতে পারি।

অনেক সময় রমজানে ব্যবহৃত নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার ও দ্রব্য সামগ্রী প্রবাহে এবং পরিবহনে বাধা দিয়ে রোজাদারের জন্য কষ্ট বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। নানা কারণে, হরতাল বা ধর্মঘটের মাধ্যমে অথবা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, যাতে রমজানে ব্যবহৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ও কাঁচামাল প্রবাহ ও পরিবহন সহজ ও সুন্দর হয় তাতে বাধা সৃষ্টি করা হয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই রোজাদারদের জন্য কষ্ট হয়। আমরা এই কষ্ট লাঘবে এ জাতীয় কাজ থেকে দূরে থাকতে পারি।

অসাধু ব্যবসায়ীরা খাবার সামগ্রী বা কাঁচামালে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে রোজাদারদের স্বাস্থ্যহানির জন্য ভয়াবহ ব্যবস্থা তৈরি করে। একথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে খাদ্য সামগ্রী বা কাঁচামাল ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে, ক্ষতিকর কেমিক্যাল বা এমন কিছু ব্যবহার না করেই খাদ্য সামগ্রী ঠিক রাখা যায়। শুধু অসাধুতা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা যে, আমরা শুধু  নিজেদের স্বার্থকেই সামনে নিয়ে আসি। এই কাজের মাধ্যমে আমার ভাইদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না, সেই চিন্তা করার সুযোগও যেন আমাদের নেই।

রোজার দিনে বা রোজার মাসে শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রোজাদারের কষ্ট লাঘব করা যায়। এই ক্ষেত্রে অফিস-আদালতে যারা কাজ করেন অথবা শিল্প-কারখানায় যারা শ্রম দেন অথবা বাসায় বাসায় যেসব নারী-পুরুষ কাজ করেন, তারা যাতে নির্বিঘ্নে রোজা রাখতে পারেন, কষ্ট কম করে রোজা রাখতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা দরকার। এ ক্ষেত্রে মালিক, মুনিব, কর্তৃপক্ষ ও বাসার দায়িত্বশীল পুরুষ বা নারী, সকলে তাদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বিষয়টির সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন এবং আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন। দাস-দাসীসহ কাজের বোঝা যাদের মাথায় থাকে, তাদের কাজ কিছুটা হাল্কা করে দিলে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা বলেছেন মহানবী (সা.)। সর্বোপরি যার যেখানে সুযোগ রয়েছে সেখান থেকেই শ্রমিকের বা কাজের লোকের শ্রমের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাকে রোজা রাখায় সাহায্য করা যেতে পারে। এতে নিয়ত অনুযায়ী আল্লাহ তা‘আলা অনেক গুণ সওয়াব বাড়িয়ে দেবেন।

রমজান মাসে রোজাদারের যাতে কষ্ট কম হয়, বিশেষ করে বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত অথবা সাধারণ মানুষের জন্য বিনামূল্যে ইফতার ও সেহরি সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে রোজাদারের কষ্ট লাঘব করা যেতে পারে।

দান করা ইসলামের মহৎ একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বিভিন্নভাবে দান করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আর রোজা রেখে বা রমজান মাসে প্রতিদানের সওয়াব বেশি।  এক্ষেত্রে সাধারণ রোজাদারদের অথবা নিম্নবিত্ত রোজাদারদের বা খেটে খাওয়া মানুষদেরকে মুক্ত হাতে বেশি বেশি দান করে তাদের রোজার কষ্ট লাঘব করা যেতে পারে।

আমাদের দেশে খোলা বাজারের পণ্য সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের মাধ্যমে অথবা বাংলাদেশের অন্যান্য সংস্থা ও এজেন্সির মাধ্যমে এই খোলাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রয় করা হয়। রোজার মাসকে সামনে রেখে এই ওএমএস বা খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে রোজাদারদের রোজা রাখতে সুবিধা হবে, কষ্ট লাঘব হবে। এতে অসাধু ব্যবসায়ীদের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণের এবং মনোপলি সিন্ডিকেটধর্মী যে অসাধু পাঁয়তারা তাও অনেকটা কমে আসার সম্ভাবনা থাকে। তাই সরকারি পর্যায়ে ওএমএস এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া উচিত, যাতে রোজাদারের কষ্ট অনেকাংশে কমে যায়।

রোজাদারের সামনে পানাহার বা ধূমপান ইত্যাদি করলে মানসিকভাবে রোজাদার যথেষ্ট কষ্ট পান। কখনো কখনো তার পানাহারের প্রতি লোভও জন্মাতে পারে। তাছাড়া, ধূমপানের মাধ্যমে রোজাদার মানসিক ও শারীরিকভাবে যথেষ্ট কষ্ট অনুভব করেন। ধূমপানের কারণে প্রকৃত অর্থে শরীরের ওপর যথেষ্ট খারাপ প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়। তাই রোজাদারের কষ্ট লাঘবে প্রকাশ্যে অথবা রোজাদারকে দেখিয়ে দেখিয়ে পানাহার না করা ও ধূমপান না করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।

অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, কুরুচিসম্পন্ন গান-বাজনা ইত্যাদির মাধ্যমে রোজাদারদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়। রোজা রেখে এসব পরিহার না করা হলে রোজার কোনো মূল্য থাকে না। তাই অশ্লীলতা ও কুরুচিসম্পন্ন গান-বাজনার প্রবক্তারা এই বিষয়গুলো মাথায় না রেখে, রেডিও, টেলিভিশন, মাইক এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব প্রচার-প্রচারণা চালাতে থাকলে, স্বাভাবিকভাবেই রোজাদারের জন্য যথেষ্ট কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ রোজাদার এ মাসে কিছু ইবাদত-বন্দেগি, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে তার সময় কাটাতে চান। কিন্তু এ সবের কারণে তাও পারেন না। তাই অশ্লীলতা, গান-বাজনা ইত্যাদি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে। এতে নিঃসন্দেহে সত্যিকারের রোজাদারদের কষ্ট লাঘব হবে।

যেসব সমস্যার মাধ্যমে রোজাদাররা কষ্ট পায় তা দূর করার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। সরকারি নজরদারি বাড়ানো দরকার। সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। প্রশাসনিক আইনানুগ ব্যবস্থাগুলো বাস্তবায়ন করা দরকার। আইন শুধু কাগজে আছে কিন্তু বাস্তবে নেই এমন যাতে না হয়; অথবা ঘুষ এর মাধ্যমে আইন দুর্বল হয়ে যাবে-এ জাতীয় ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিকে সরকারের দায়িত্বশীলদের নজর রাখতে হবে। তাহলে রোজাদারদের কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিয়মিত রোজা রাখার তাওফিক দিন। যেকোনো ধরনের রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে আমরা যাতে ভূমিকা রাখতে পারি সেই শক্তি ও সামর্থ‌্য দিন। আমাদের রোজা বা সিয়াম সাধনাকে কবুল করুন। আমিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com