বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন

জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবিতে দেশজুড়ে সড়কে ভোগান্তি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১
  • ২০৫ বার পঠিত

জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের ডাকে দেশের প্রায় সব স্থানেই সড়কপথে পণ্য ও যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকায় বিআরটিসি’র কিছু বাস ছাড়া যাত্রীবাহী বাস খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। গত বুধবার সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে পনের টাকা এবং গত বৃহস্পতিবার এলপি গ্যাসের দাম ১২ কেজির সিলিন্ডার প্রতি ৫৪ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। কোনো আলোচনা ছাড়াই তেলের দাম একতরফাভাবে বাড়ানোর কারণে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাবে বলে দাবি করছেন পরিবহন নেতারা। তেলের দাম কমানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে পন্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেয় ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ধর্মঘটের কোন সিদ্ধান্ত না নিলেও জেলা পর্যায় থেকে মালিক শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় ঢাকাগামী যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিবিসি’র প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রাম থেকে সাংবাদিক মিন্টু চৌধুরী জানিয়েছেন, শহর থেকে বাস-ট্রাক-লরি চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে শহরে অটোরিকশা চলাচল করতে দেখেছেন তিনি। বরিশালের সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলছেন, শহরের রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে শুক্রবার ভোর থেকে বাস চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে না। পণ্য পরিবহনের ট্রাক-লরিও কোনো কাজ ছাড়াই ফেলে রাখা হয়েছে। রাজশাহী থেকে আনোয়ার আলী জানান যে শহর থেকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন প্রায় বন্ধ করে রেখেছে মালিক ও শ্রমিকরা। তিনি বলেন, ‘কিছু ট্রাক শহরে আসলেও শহর থেকে বাস-ট্রাক সব চলাচল বন্ধ আছে।’ খুলনা থেকে যে ২২টি রুটে বাস চলাচল করে সেগুলোতেও শুক্রবার ভোর থেকে বাস চলাচল বন্ধ আছে। এছাড়া গাজীপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ ও চাঁদপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকা থেকে একই খবর পাওয়া গেছে।
১০০ টাকার ভাড়া ৫০০: ওহিদুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার রাতে ছোট ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। রাতে ভাইকে ফ্লাইটে তুলে দিয়ে ঝিনাইদহে ফেরার উদ্দেশ্যে ভোরে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। কিন্তু ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ার প্রতিবাদে ঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে মালিক-শ্রমিকরা রাজধানীসহ সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখায় ওহিদুল ইসলাম পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এ ভোগান্তি আজ গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে আসা সব যাত্রীর। গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ে জনপ্রতি বাসভাড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা। সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। রাস্তায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়েই এ অতিরিক্ত ভাড়া গুনে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। গতকাল শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের দুর্ভোগের এ চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রয়েছে। ফলে ঢাকা থেকে জেলা শহরগুলোতে চলাচলে যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। আর এই সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছেন কিছু প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসচালক। প্রাইভেটকারের পেছনে চারজন ও সামনে দুজন যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে ট্রিপ দিচ্ছেন চালকরা। জনপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। প্রতি ট্রিপে তারা পাচ্ছেন তিন হাজার টাকা। আবার সাত সিটের মাইক্রোবাসে ৯-১০ জন করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।
যশোর যাওয়ার জন্য পরিবারসহ সকাল ৭টায় গাবতলী এসেছেন শামীম হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যেতে সকালে গাবতলী এসেছি। আজ থেকে যে বাস বন্ধ তা আমি জানতাম না। এখন রাস্তায় এসে দেখি বাস নেই। গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত ভাড়া চাইছে ৫০০ টাকা। আর যদি যশোর সরাসরি যায় তাহলে ভাড়া চাইছে দুই হাজার টাকা। এখন যাবো কিনা সেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।
পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বাধ্য হয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত যেতে হচ্ছে বলে জানান যাত্রী শহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমি যাবো মাগুরায়। একটি পারিবারিক সমস্যার কারণে হঠাৎ যেতে হচ্ছে। না গিয়ে উপায় নেই। টার্মিনালে এসে দেখি গাড়ি বন্ধ। আরিচাঘাট পর্যন্ত প্রাইভেটকারে ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। এই ভাড়ায় আমি মগুরা পর্যন্ত যেতে পারতাম। তবে জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া বেশি না, এমনটাই দাবি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসচালকদের। চালক আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঠিকই আছে ৫০০ টাকা করে নিচ্ছি। আমাদেরও রাস্তায় কয়েক জায়গায় টাকা দিতে হবে। টার্মনালে দিছি ১৫০ টাকা। সামনে আরও দিতে হবে। জানা গেছে, বুধবার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে সরকার। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে ভাড়া বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ ঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার সকাল থেকে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। তবে তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম না কমানো পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলেও জানান বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাস চললেও ভোগান্তিতে যাত্রীরা: পরিবহন ধর্মঘট থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কিছুসংখ্যক বাস ও পণ্যবাহী যানবাহন চলছে। তবে তা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় বাসে উঠতে পারছেন না অনেক যাত্রীই। তাই হুট করে ঢাকা এই ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। গতকাল শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ছুটির দিনে মহাসড়কে যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টি অনেকেই জানেন না। বাসে উঠতে না পারলে দূরের গন্তব্যে যেতে যাত্রীরা প্রাইভেটকার, পিকআপ ও সিএনজি ব্যবহার করছেন। এই সুযোগে কেউ কেউ ভাড়া বেশি নিচ্ছেন। শামছুর রহমান মানসুর নামে এক যাত্রী বলেন, আমি নিউমার্কেট যাবো। মহাসড়কে এসে দেখি পরিবহন ধর্মঘট। বাস বন্ধ থাকার বিষয়টি জানা ছিল না আমার। কুমিল্লার লাকসাম যাবেন আরিফ মিয়া নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের খবরটা সকালে জানলাম। বাস কিছু কিছু চলছে। চেষ্টা করছি বাসে করে যাওয়ার। কিন্তু দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছি না। রিতা বেগম নামে আরেক যাত্রী জানান, তিনি সিএনজিতে করে গ্রামের বাড়ি আড়াইহাজারে যাবেন। কিন্তু সিএনজিচালকরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন। বিষয়টি স্বীকার করে ফরহাদ মিয়া নামে এক সিএনজিচালক জানান, পরিবহন ধর্মঘট থাকায় সিএনজিচালকরা ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছেন। পরিবহন ধর্মঘটে বাস কেন চলছে জানতে চাইলে বাস হেলপার আসাদুজ্জামান বলেন, একদিন বাস বন্ধ থাকলে আমগো ক্ষতি। সংসার তো চালাইতে হইবো। মহাসড়কের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ করিম জানান, পরিবহন ধর্মঘট হলেও বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলছে। কিন্তু বাস- ট্রাকের সংখ্যা খুব কম। উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার অথবা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন মালিক-শ্রমিকরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com