নওগাঁ সংবাদদাতা : হাসপাতালের স্ট্রেচারে চাদরে মোড়ানো একটি নিথর দেহ। তার পাশেই অঝোরে কাঁদছে ছোট্ট একটি শিশু। কাঁদতে কাঁদতেই স্ট্রেচারে থাকা মানুষটির চোখেমুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে। আর বলছে, ‘আমার আব্বু কথা বলে না কেন, আব্বুকে কেউ জাগিয়ে তুলো। বাবা কি মারা গেছে, আর কি কথা বলবে না।’
ঘটনাটি সোমবার রাতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের। এ নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত হয়। স্ট্রেচারে থাকা মরদেহটি ছিল নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়ন এর চকবিষ্ণপুর গ্রামের ফজর আলী (কালু গোয়াল) এল ছেলে মুজিবর রহমানের।
শ্বাসকষ্টে থাকা মুজিবরকে সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে নেয়া হয়। তবে চিকিৎসক দেখার আগেই তার মৃত্যু হয়। আর শিশুটি তার মেয়ে মরিয়ম খাতুন। এর পর বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সকলের নজরে আসে।
এরপর অনেকেই মরিয়ম ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায়। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলামের উপহার মরিয়ম খাতুনের বাড়িতে এসে পৌঁছে দেন নওগাঁর পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া।
শুক্রবার বিকেলে শিশু মরিয়ম খাতুনের বাড়িতে ছুটে আসে তিনি। এসময় মরিয়মের পরিবারের খোঁজ খবর নেন পুলিশ সুপার মান্নান মিঞা। তুলে দেন ডিএমপি কশিনার এর দেয়া নগদ বিশ হাজার টাকা। এসময় অর্থ ব্যাংকে জমা রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ছোট্ট শিশু মরিয়ম যেভাবে বাবার মরদেহ পাহারা দিয়েছে এবং বসে বসে কেঁদেছে তা মানুষের হৃদয়কে চরমভাবে নাড়া দিয়েছে। ভিডিওটি দেখার পর আমি নিজেও খুব কষ্ট পেয়েছি। একজন বাবা তার সন্তানের জন্য বড় ছাতা। পরম যত্নে বাবা তার সন্তানদের বড় করে তোলেন। সেই বাবা আজ নেই। ছোট্র শিশুটি আজ বাবা হারা। যার বাবা নেই সেই বোঝে বাবা হারানোর ব্যথা। বাবা না থাকার শূন্যতা পরিমাপ যোগ্য নয়।
তিনি বলেন, এর আগে আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও সহযোগীতা করেছি মরিয়মের পরিবারকে। সেই ধারাবাহিকতায় ডিএমপি কমিশনার মহদোয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আগামীতে মরিয়ম ও তার পরিবারের জন্য পাশে থাকবে জেলা পুলিশ নওগাঁ।
এসময় মরিয়মকে সহযোগীতা করার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান পুলিশ সুপার।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে মারা যান মুজিবুর রহমান। নিহত মুজিবর রহমান পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়ন এর চকবিষ্ণপুর গ্রামের ফজর আলী (কালু গোয়াল) এল ছেলে। তিনি পেশায় একজন ফেরিওয়ালা। গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাড়ি পাতিল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মজিবুর রহমান স্ত্রীসহ দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রেখে মারা যান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার সাপাহার সার্কেল বিনয় কুমার, পোরশা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিউল আযম খান, এস আই সোহাইল হোসেনসহ থানা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা, ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।