বিডি ঢাকা অনলাইন ডেস্ক
কালের বিবর্তনে বদলে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি খাত। এ খাতে এখন অনেক শিক্ষিত যুবক উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসছেন। তারা আমবাগানসহ গড়ে তুলছেন মিশ্র ফলের বাগান। কেউ বা গড়ছেন ডেইরি ফার্ম। আধুনিক কলাকৌশল অবলম্বন করে কৃষিপণ্য উৎপাদনে রাখছেন ব্যাপক অবদান। বিশেষ করে আমচাষের পুরনো ধ্যান-ধারণা পাল্টে তারা থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশী জাতের পাশাপাশি বিদেশী জাতের আম উৎপাদন করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তারা এখন সারাবছরই আমচাষ করছেন এবং ফলনও পাচ্ছেন। অসময়ে বাজারে আমের দামও ভালো পাচ্ছেন। বদলে যাচ্ছে আমচাষের পুরনো রীতিনীতি।
এমন একজন তরুণ উদ্যোক্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের ফলচাষি গোলাম মোস্তফা। তিনি ঝিলিম ইউনিয়নের নয়ানগর এলাকায় প্রথমে চার বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন আমবাগান। পরে তা বৃদ্ধি করে বর্তমানে লিজ নেয়া ৩২ বিঘা জমিতে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু আম উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি পেয়ারা ও মাল্টাও চাষ করছেন। তার বাগানে বর্তমানে দেশী-বিদেশী অগুনতি আমগাছ রয়েছে। গাছগুলো ছোট ছোট। প্রতিটিতেই আমের গুটি ঝুলছে। তবে বিদেশী জাতের বারমাসি আমগাছগুলোয় ঝুলে থাকা আমগুলোর আকার বেশ বড় হয়ে উঠেছে। একবার দেখলে যে কারো মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাবে।
গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গোলাম মোস্তফার বাগানের তাইওয়ান রেড নামের একটি আম দেখে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার সরেজমিনে বাগানটি পরিদর্শন করেন। তার সঙ্গে ছিলেনÑ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কানিজ তাসনোভা ও অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সলেহ আকরাম। পরে এসে যোগ দেন প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নিরাপদ আম উৎপাদনে বাস্তবায়নাধীন এসইপি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ মো. জহুরুল ইসলাম।
এসময় জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা জানান, প্রথমে চার বিঘা এবং পরে তা বৃদ্ধি করে বর্তমানে লিজ নেয়া ৩২ বিঘা জমির ওপর আমবাগান গড়ে তুলেছেন।
এরই মধ্যে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন তিনি। বাগানটিকে ঘিরে বেশ কিছু কৃষি শ্রমিকের কর্মসংস্থানও হয়েছে। তার বাগানের উৎপাদিত আম অনলাইনে বিক্রি করে থাকেন তিনি। দামও ভালো পান। সারাবছরই আম পাওয়া যায়।
তার বাগানে দেশী আমের জাতগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ গোপালভোগ, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, ফজলি, আশ্বিনা, হাড়িভাঙ্গা ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে আ¤্রপলি, বারি আম-৪, কাটিমন, ব্যানানা, চিয়াংমাই, কিং আফ চাকাপাত, তাইওয়ান রেড, তাইওয়ান গ্রিন, নামডকমাই, থ্রিটেস্ট, ব্রুইনা কিং, কিউজায়, হানি ডিউ, আর ২, ই ২, বি ১, ডি ২০, ফোর কেজি, রংভাদুরি, গৌড়মতি, ইত্যাদি।
কথা হয় উপপরিচালক ড. পলাশ সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, গোলাম মোস্তফার মতো তরুণ উদ্যোক্তারা এই জেলার অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বহু শিক্ষিত যুবক কৃষিতে বিনিয়োগ করছেন এবং লাভবানও হচ্ছেন। গোলাম মোস্তফার এই আমবাগানসহ জেলার তরুণ উদ্যোক্তাদের বাণিজ্যিকভাবে আমচাষ স্বপ্ন দেখাচ্ছে তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার। তাদের উৎপাদিত আম শুধু স্থানীয় বা দেশের বাজারেই নয়, বিদেশের বাজারেও যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপানে তাদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষে বিপ্লব ঘটবে, অর্থনৈতিকভাবে আরো মজবুত হবে এই জেলা।