হঠাৎ করে ডিজেলের দাম বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে সারা দেশে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। এতে বিপাকে পড়েছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গমনকারী যাত্রী ও পরীক্ষার্থীরা। অন্যদিকে কখন থেকে চলবে গণপরিবহন তা সুনির্দিষ্ট করে কেউ জানাতে পারছেন না। বিস্তারিত প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে—
সাভার, ঢাকা : পরিবহন সংকটে আটকে পড়ায় সাভারে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্নাতক শ্রেণির ভর্তীচ্ছু পরীক্ষার্থীরা। শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাস স্ট্যান্ডে প্রবেশপত্র হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন এসব শিক্ষার্থী। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলে এই বিক্ষোভ। আকস্মিক এ কর্মসূচিতে যোগ দেন রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরাও। এ সময় তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ যাত্রীরাও।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা জানান, ভোর বেলায় ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে মহাসড়কে এসে কোনো গাড়ি পাননি তাঁরা। তাদের মতো অনেকেই মহাসড়কে যানবাহনের অপেক্ষায়। একপর্যায়ে দীর্ঘ সময় অবস্থানের পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে তাঁরা নিজেরাই মহাসড়ক অবরোধ শুরু করেন।
অবরোধে আটকে পড়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে ছোট ভাইকে নিয়ে মারাত্মক ভোগান্তির কবলে পড়েন হানিফ নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার যেমন হুট করে তেলের দাম বাড়িয়েছে, তেমনি পরিবহন শ্রমিক-মালিকরাও পরিবহন যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে ধর্মঘট ডেকে বসেছেন।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সাভারে মালিক-শ্রমিকদের পরিবহন বন্ধের ডাকে আটকে পড়ার প্রতিবাদে ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থী ছাড়াও সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা আটকে পড়েছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। পরে তাদের বিভিন্ন বাসে তুলে দিয়ে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
নওগাঁ : নওগাঁ থেকে বন্ধ রয়েছে জেলার সব ধরনের অভ্যন্তরীণ ও দূর পাল্লার বাস। সকাল থেকেই শহরের ঢাকা স্ট্যান্ডে সারিবন্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে বাসগুলো। বাস না চলায় হঠাৎ করে এমন ধর্মঘটের কারণে অনেক যাত্রী পড়েছেন চরম বেকায়দায় আবার অনেক চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
শ্যামলী কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আসেন শ্যামল কুমার নামের এক যাত্রী। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় এসেছি বদলগাছী উপজেলা থেকে ঢাকা যাবো। দুই ঘণ্টা ধরে ১০-১২টি কাউন্টারে ঘুরলাম, কোনো বাস ঢাকা যাবে না। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কালকে (শনিবার) অফিসের একটি জরুরি কাজ আছে। আজ ঢাকা না যেতে পারলে খুব বিপদে পড়ে যাবো, কিন্তু এসে দেখি সব বাস চলাচল বন্ধ। ধর্মঘট চলছে তেলের দাম বাড়ার কারণে। হঠাৎ কেন তেলের দাম বাড়ানো হলো, আবার কেনই বা ধর্মঘট শুরু হলো বুঝতে পারছি না। আমরা এখন মহাবিপদের মধ্যে আছি।
একতা পরিবহনের ম্যানেজার আব্দুল মালেক বলেন, কখন থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে সঠিকভাবে বলতে পারছি না। এটা মালিক সমতির বিষয়। অনেক যাত্রীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। তাদেরকে বলতেও পারছি না কখন বাস চলবে।
লক্ষ্মীপুর : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে লক্ষ্মীপুরে বাস-ট্রাক মালিক এ্যাসোসিয়েশনের ধর্মঘট চলছে। শুক্রবার (০৫ নভেম্বর) ভোর থেকে ধর্মঘটের কারণে জেলায় বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। তবে ছোট ছোট যান বিশেষ করে সিএনজি ও রিকশা চলতে দেখা গেছে। তবে চালকরা ভাড়া বেশি দাবি করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। পরিবহন চালকরা জানান, হটাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বুধবার জ্বালানি তেলের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বেড়েছে। নতুন দাম প্রতি লিটার ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।