নিউজ ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনার জেরে রোববার (২৮ মার্চ) হরতাল পালন করেছে হেফাজতে ইসলাম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোড থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত রাস্তায় দফায় দফায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হরতাল সমর্থকরা। যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। নির্বিচারে ভাঙচুর করে। হরতালের শুরু থেকেই গণমাধ্যমকর্মীরা ছিল হেফাজত কর্মীদের টার্গেট। গণমাধ্যমকর্মী জানলেই তারা আক্রমণ করেছে।
একাধিকবার হামলার শিকার দৈনিক সংবাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি সৌরভ হোসেন সিয়াম জানান, দুপুর দুইটার দিকে মাদানী নগর মাদ্রাসার অদূরে পোড়ানো বাসের ছবি তুলতে গেলে হেফাজত কর্মীরা তাকে জিজ্ঞেস করে তিনি সাংবাদিক কিনা। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা তাকে মারধর শুরু করে। সৌরভ পাশের একটি করাত কলে গিয়ে আশ্রয় নিলে সেখানেও তারা তাকে মারধর করে। তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তার মোবাইল ফোনের সমস্ত ছবি ডিলিট করে দেয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলে বের হওয়ার সময় আরেকবার মারধরের শিকার হন। প্রায় একই সময় সাইনবোর্ড এলাকার প্রো-একটিভ মেডিক্যাল হাসপাতালের সামনে বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টি ফোরের গাড়িতে হামলা চালানো হয়। গাড়িতে থাকা নারী সংবাদ কর্মী ও গাড়ি চালককে তারা লাঞ্ছিত করে। এসময় সহকর্মী সাংবাদিকরা তাদের সহায়তায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে হেফাজত কর্মীরা সাংবাদিকদের লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে পুলিশ ও বিজিবি গিয়ে তাদের উদ্ধার করে আনে।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সানারপাড় এলাকায় পুলিশ বিজিবি যৌথভাবে হরতাল সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। এসময় পেছনে পেয়ে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের রিপোর্টার খালেদ রায়হান, বৈশাখী টিভির রিপোর্টার আশিক মাহমুদসহ দুই টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসনকে বেধড়ক মারধর করে আহত করে। ছিনিয়ে নেয়া হয় আশিক মাহমুদের মোবাইল ফোন। সানারপাড় এলাকায় হরতাল সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন নিউ এইজের রিপোর্টার মোক্তাদির রশিদ রোমিও। এছাড়া একাত্তর টেভি ও আরটিভির সংবাদ কর্মীরাও লাঞ্ছনার শিকার হন।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে গাজী টেলিভিশনের রিপোর্টার রূবিনা ইসলাম ও ক্যামেরাপারসন মাসুদুর রহমানকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। এ সময় গাজী টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন তাদের হামলা থেকে বাঁচতে পাশের একটি বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু হরতাল সমর্থকরা তাকে বাথরুম থেকে বের করে এনে মাথায় ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রেসক্লাবে ভাঙচুরের সময় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বাধা দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হয়ে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে হরতালের সমর্থনে মিছিল থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী চৌরাস্তায় অবস্থিত ‘নোয়াখালী টিভি সাংবাদিক ফোরাম’ কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের ইটের আঘাতে চার সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এছাড়া দুইটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে তারা।
রোববার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহত সাংবাদিকরা হলেন- এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি মানিক ভূঁইয়া, একাত্তর টিভির জেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান, বাংলা টিভি জেলা প্রতিনিধি ইয়াকুব নবী ইমন ও ক্যামরা পার্সন মনির হোসেন।
আহত সাংবাদিকরা জানান, বিকেলে হরতালের সমর্থনে নোয়াখালী টিভি সাংবাদিক ফোরাম কার্যালয়ের সামনে দিয়ে হেফাজতের একটি মিছিল যাচ্ছিলো। এ সময় মিছিলকারীরা কার্যালয়কে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল ও লাঠি নিক্ষেপ করে। এতে কার্যালয়ের দরজার গ্লাসসহ আসবাবপত্র ভেঙে যায়। দরজার ভাঙা গ্লাস পড়ে কার্যালয়ের ভিতরে থাকা চার সাংবাদিক আহত হন। হামলাকারীরা কার্যালয়ের সামনের সড়কে থাকা একাত্তর টিভি ও বাংলা টিভি প্রতিনিধির মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।