চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা : স্বাস্থ্যবিধি মেনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে জমে উঠছে আম বাজার। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন ঘোষণার কারণে প্রথম ২ থেকে ৩ দিন বেচাকেনা কম হলেও এখন তা বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার সকালে সরেজমিনে কানসাট আম বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে মিলছে ক্ষিরসাপাত, হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগসহ নানা জাতের আম। দুপুর ১২টার দিকে বারিক বাজার থেকে দুই ভ্যান ক্ষিরসাপাত আম আনেন এক বাগান মালিক।
দুপুর আড়াইটা বাজলেও তার আম বিক্রি হয়নি। এনামুল হক জানায়, প্রতি মণ আমের দাম দুই হাজার একশ’ টাকা চাইলেও অর্ধেক দাম বলেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তার দাবি- অন্য বছরের মত এবারও যদি ব্যাপারী এবং আড়ৎদার থাকতো তবে আম দ্রুততই বেশি দামে বিক্রি হত। রফিকুল ইসলামী নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, নাচোল থেকে এক ভ্যান আম এনেছি। প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূর থেকে কানসাটে আম আনার বিষয়ে তিনি বলেন, জেলার একমাত্র কানসাট বাজারে নায্যমূল্যে এবং সঠিক ওজনে আম বিক্রি করা যায়। আড়ৎদার মুখলেসুর রহমান জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার প্রভাব পড়েছে আমে। যার কারণে ব্যাপারীরা আসতে পারছে না। এছাড়া যে আম পাঠানো হচ্ছে- তা নিরাপদ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ভোক্তারা।
তিনি আরও জানান, ব্যাপারীদের কানসাট আসতে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। তারা আসলেই জমজমাট হবে আম বেচাকেনা। হাট ইজারাদার সদস্য আর কে বাবু জানায়, বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি আড়তে নিরাপদভাবেই আম প্যাকিং করে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। আম আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক টিপু জানান, কানসাটে পাঁচশ আমের আড়ৎ থাকলেও গত এক সপ্তাহে প্রায় অর্ধশত আড়তে আম বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে শুধু শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১০ কোটি ফ্রুড ব্যাগ ব্যবহার করে আম প্রস্তুত করা হচ্ছে। যদি দেশের বাইরে আম রফতানি হয়, তবে চাষিরা করোনা সংকটকালে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, প্রশাসন আম সংশ্লিষ্টদের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। কোনো ব্যবসায়ীর পরিচয়পত্র প্রয়োজন হলে সেটিও কৃষি বিভাগ দিতে প্রস্তুত আছে। তিনি আরও জানান, অনলাইনের পাশাপাশি জেলার প্রধান প্রধান আম বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আম ব্যবসায়ীদের দ্বিতীয়বার ঘোষিত লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। ফলে তারা নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারছেন। বাইরের ব্যবসায়ীরাও এসে আম কেনাবেচা করতে পারবেন। প্রসঙ্গত, চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৪ হাজার ৭৭৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে এক হাজার ৭’শ হেক্টর বেশি। এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।