রংপুর সংবাদদাতা : চলমান লকডাউনে আয়-রোজগার না থাকায় পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ৬০ বছর বয়সী মোহাম্মদ নুরনবী। রমজানে সাহরি ও ইফতার ঠিকমতো খেতে পাচ্ছিলেন না। খাবার জোগাতে না পেরে সাহরিতে ভাতের পরিবর্তে সেদ্ধ আলু খেয়ে রোজা রেখেছেন নুরনবী ও তার পরিবারের সদস্যরা। তবে আজকের (২৩ এপ্রিল) পর সেদ্ধ আলু দিয়ে তাদের সাহরি করতে হবে না। তাদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন রংপুর জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সেদ্ধ আলু খেয়ে নুরনবীর রোজা রাখার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ সুপারের নজরে আসে। বিকেলে নুরনবীর বাড়িতে পৌঁছে যায় একদল পুলিশ। নুরনবী ও তার পরিবারের জন্য এক মাসের চাল, ডাল, চিনি, লবণ, তেল, মুরগিসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেন সহকারী পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলম।মোহাম্মদ নুরনবী রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের জারুল্লাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। রিকশা চালিয়ে সংসার চালোনো এই বৃদ্ধের পরিবারে ছয় সদস্য। চার শতক জমিতে খড়ের বেড়া দিয়ে ঘর বানিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনো রকম কষ্ট করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নিজের কোনো কৃষিজমি নেই।
পুলিশ সুপারের সহায়তা পেয়ে আবেগাপ্লুত নুরনবীর চোখে পানি চলে আসে। সৃষ্টিকর্তার দরবারে হাত তুলে শুকরিয়া আদায় করে কৃতজ্ঞতা জানান পুলিশ প্রশাসনের প্রতি।
নুরবনী বলেন, আলু সিদ্ধ খ্যায়া দুই দিন রোজা আচনু। চাল কেনার টাকা আছিল না। আইজ মোর বাড়িত কত কিছু। পুলিশ সুপার স্যার মোর জন্যে চাউল, ডাইল, মুরগি, আটা, নুন, তেল, পিঁয়াজসহ মেলা কিছু কিনি বাড়িত পাঠাইছে। আল্লাহ স্যারের ভালো করুক।
লকডাউন পরিস্থিতি আর বৃদ্ধ বয়সে সংসারের বোঝা টানার বর্ণনা দিয়ে নুরনবী বলেন, হামার জন্যে লকডাউন, হরতাল, ধর্মঘট অভিশাপ। এইগল্যা হইলে কামাই রোজগার কমি যায়। করোনাত তো আরও অবস্থা খারাপ। মানুষ আগের মতো বাইরো ব্যরাবার চায় না। ভ্যানোতো যাত্রী উঠে না। এমন করি চললে হামার মতো মাইনষের বউ ছইল নিয়্যা সংসার চালা খুব কঠিন হইবে।
অভাব-অনটনের সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া এই রিকশাচালক সরকারি কোনো অনুদান, ভিজিডি, ভিজিএফ, কিংবা বয়স্ক ভাতার সুবিধা পাননি বলেও জানান। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা উপার্জন করতেন। কিন্তু লকডাউনে তার উপার্জন কমে গেছে। রংপুর জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদটি দেখে আমার হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। নুরনবীর বাড়িতে আমার সহকর্মীর মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। প্রত্যেকের উচিত এমন অসহায় দুস্থ অসচ্ছল পরিবারগুলোর খোঁজ নিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসা। সবাই সবার অবস্থান থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে পারলে কেউ না খেয়ে থাকবে না।
গত বছরও করোনা মহামারির শুরু থেকে বিপদগ্রস্ত নিম্নআয়ের ও মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেন এসপি বিপ্লব কুমার সরকার। এ বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই আবারও অসহায় মানুষের জন্য মানবিক সহায়তার হাত প্রসারিত করেছেন তিনি। ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি রংপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও এরকম সহায়তামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার।