চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা : চাঁপাইনবাবগঞ্জের সচচেয়ে বড় আম বাজার কানসাট। গত ১৫ দিন থেকে ধীরে ধীরে জমে উঠেছে এই আম বাজারটি। এদিকে বাজারে কৃষকদের জিম্মি করে ওজনে ৫০ কেজিতে মণ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে আড়তদারদের বিরুদ্ধে। আমচাষীরা বলছেন, করোনার কারণে একে তো আমের দাম কম, অন্যদিকে ৪০ কেজিতে মণ হওয়ার কথা থাকলেও তারা নিচ্ছেন ৫০ কেজিতে। এতে ওজন নিয়েও বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাবুল নামে এক আমচাষি বসেছিলেন কানসাট বাজারের এক গাছের নিচে। চাচা এখানে কি করছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এক ভ্যান গুটি জাতের আম নিয়ে কানসাট বাজারে আসছিলাম বাপু। বিক্রি করেছি ৩৫০ টাকা মণ দরে। ওজন করার পরে জানতে পারলাম আমের মণ ৫০ কেজিতে, ৪০ কেজিতে নয়। হিসাব করে পেয়েছি মাত্র ১৪০০ টাকা। এ টাকা দিয়ে ভ্যান ভাড়া দিব না নিজে খাব কহো বাপু। সার ও বিষ বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
নয়ন নামে আরেক আম ব্যবসায়ী বলেন, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বসে আছি হিমসাগর আম নিয়ে। আম কেনার ক্রেতা নেই। ঘুরিফিরে কেউ দাম বলছেন ১২শ’ টাকা মণ। প্রচণ্ড গরমে আর কতক্ষণ বসে থাকবো। তিনি আরও বলেন, আমের মণ ৪০ কেজিতে নেয়ার কথা থাকলেও ৫০ কেজিতে নিচ্ছেন আড়তদাররা। আমরা সারা বছর খাব কি? আমরা তো ৫ থেকে ৬ কেজি বেশি দিচ্ছি। আমের ওজন ৪৫ থেকে ৪৬ কেজিতে করার দাবি জানান তিনি।
আড়তদার ফিরজ জানান, আম হচ্ছে কাঁচা মাল দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছাতে ওজন কমে যায়। এ জন্যই প্রধানত ১০ কেজি আম বেশি নেয়া হচ্ছে। ৫০ কেজি ওজন নেয়ার জন্য প্রশাসনের কোন অনুমতি আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই নিচ্ছে তাই আমরাও নিচ্ছি।
এদিকে ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব ও সাংবাদিক আহসান হাবিব জানান, আমের ওজন ও ডিজিটাল মিটারে সঠিক ওজনের বিষয়ে ২০১৬-২০১৭ সালে আন্দোলন করি সঠিক। তখন অনেকেই এটা নিয়ে না বুঝে এবং আড়তদারদের মিথ্যা প্ররোচণায় আমাদেরই দোষারোপ করেছিল। এক সময় আড়তদারদের বাধ্য করি ডিজিটাল মিটার ব্যবহারে, তখন থেকে ওজন কারচুপি রোধে ডিজিটাল মিটার চালু হয়। পাশাপাশি ৪৫-৪৬ কেজিকে এক মণ ধরে আম কেনা শুরু করেন আড়তদাররা। জেলা প্রশাসনের সভায় তখন লিখিত রেজুলেশনও হয়েছিল ৪০ কেজিতে এক মণ হিসাবে ধরার। পরে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কোথাও এর বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেনি। গত দু-তিনবার থেকে এবারও আম নিয়ে চাঁদাবাজি করছেন বিভিন্ন আড়তদাররা। তিনি আরও বলেন, আমি নিজে অনেক আম কেনাবেচা করছি। স্থানীয় বাজারে আমার আম বিক্রি করি না। দেশে ও দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেট করে নিজস্ব পরিবহনে সরবরাহ করছি। আমচাষীদের কাছ থেকে ৪৫ কেজি হিসাবে কেনা ও একইভাবে বিক্রি রেট ধরি।
আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক টিপু জানান, কানসাট বাজারে আমের মণ ৪০ কেজিতে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে পৌঁছাতে ওজন কমে যায় তাই ৫-৬ কেজি আম বেশি নেয়া হয়। তবে কৃষকের কাছে ৫০ কেজিতে মণ নেয়া হচ্ছেÑ এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বি বলেন, আমের মণ ৪০ কেজির বাইরে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ইউএনও।