ফয়সাল আজম অপু : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২০২০ সালে পানিতে ডুবে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১৩ জনই শিশু। শিশুদের বয়স দেড় বছর হতে ১৪ বছরের মধ্যে। বাকি ৪জনের মধ্যে ৩ জন বৃদ্ধ (বয়স ৫৪, ৬০, ৬৮ বছর) ও ১ জন ৩৫ বছরের যুবক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একটি বেসরকারী সংস্থা ‘শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট’ (অনিবন্ধিত) এর জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট এর তথ্য মতে জেলায় পানিতে ডুবে মৃত্যু ১৭ জনের মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় সর্বাধিক ৭ জন। তারপরেই আছে গোমস্তাপুর উপজেলা ৪জন। বাকী সদর উপজেলায় ৩ জন, নাচোল উপজেলায় ২ জন ও ভোলাহাট উপজেলায় ১ জন। পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী ১৭ জনের মধ্যে ১১ জন পুরুষ এবং ৬ জন নারী। এর মধ্যে বাড়ির পাশের ডোবা, পুকুর বা দীঘিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ জনের। বাকিগুলোর মধ্যে পাগলা নদীতে ৬ জনের, মহানন্দা নদীতে ২জন এবং পুণর্ভবা নদীতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু নিয়ে কাজ করা জেলার একমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট’ (অনিবন্ধিত) এর চেয়ারম্যান মোঃ রবিউল আলম বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৫ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রোগ-বালাইয়ের বাইরেও বাংলাদেশে প্রতিবছর বিশাল সংখ্যক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। তাই শিশুমৃত্যু নিয়ে এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জনে প্রতিরোধযোগ্য এ মৃত্যু কমানো জরুরি। পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বহু সংখ্যক শিশুকে পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এটি করতে পারলে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন সহজতর হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে হবে। তিনি আরও জানান, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের মধ্যে ৩২ জনই চার বছরের কম বয়সী (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে)। বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজারে। এছাড়া পানিতে ডোবার কারণে আরো ১৩ হাজার শিশু স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে। এক লাখ শিশু পানিতে ডোবার কারণে বিভিন্নভাবে আহত হয়। চেয়ারম্যান রবিউল আলম বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর সবগুলো ঘটনার তথ্য গণমাধ্যম পায় না। এ নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় ভাবে কোনো কার্যকর তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা এখনো গড়ে উঠেনি। আবার গণমাধ্যম প্রতিবেদনগুলো শুধুমাত্র ঘটনাকেন্দ্রিক। এ নিয়ে গভীরতাধর্মী প্রতিবেদনের অভাব রয়েছে। গভীরতাধর্মী প্রতিবেদনে গণমাধ্যমগুলো গুরুত্ব দিলে বিষয়টি নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্ব পাবে এবং এ নিয়ে জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়টি তরান্বিত করবে। এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে তিনি বলেন, দিনের প্রথমভাগে শিশুদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হলে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে গ্রামভিত্তিক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র সফলভাবে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে কার্যকর। পাশাপাশি এ গ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যও সহায়ক। এ ধরনের দিবাযত্নের ব্যবস্থা বাংলাদেশের মতো অন্যান্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার দূরীকরণে বিশেষ অবদান রাখতে পারে।