নিজস্ব সংবাদদাতা : অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখের বেশি লাভের আশার বলি হয়েছে ৪০ প্রাণ। ঢাকা থেকে দেরিতে যাত্রা করে সবার আগে গন্তব্যে পৌঁছানোর কৌশল নিয়েছিলেন লঞ্চ মালিক। তাতে যাত্রী পাওয়া যেত বেশি, ফলে লাভের পরিমাণও বাড়ত।
তাকে গ্রেপ্তারে পর জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
সোমবার সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলছেন, বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে গত এক মাস আগে বেশি ক্ষমতার ইঞ্জিন লাগানো হয়েছিল। কিন্তু কাজটি করা হয় সাধারণ ফিটার দিয়ে। আর সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কাছ থেকে ইঞ্জিন পরিবর্তনের অনুমোদনও নেননি হামজালাল।
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় সোমবার সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হামজালাল শেখকে। তিনি অভিযান-৩ ও অভিযান ৫ লঞ্চেরও মালিক বলে র্যাব জানায়।
কমান্ডার মঈন বলেন, মামলা হওয়ার পর এক আত্মীয়র বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন হামজালাল।
ঢাকা থেকে চাঁদপুর, বরিশাল, দপদপিয়া ঘাট, বেতাগী হয়ে বরগুনায় যেত অভিযান-১০। সেদিন যারা ওই লঞ্চে ছিলেন, তাদের অনেকেই বলেছেন, ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার পরপরই ইঞ্জিনে গোলযোগ দেখা দেয়। সে কারণে কয়েকজন টেকনিশিয়ান কয়েক দফা সেটা সারানোর চেষ্টা করছিলেন। দুটি ইঞ্জিন চালিয়ে দ্রুত গতিতে ছোটানো হচ্ছিল লঞ্চ।
তবে ইঞ্জিনে কোনো ত্রুটি ছিল না দাবি করে লঞ্চ মালিক হামজালাল শেখ সে সময় বলেছিলেন, নতুন ইঞ্জিন লাগিয়ে চলতি মাসেই সার্ভিসে নামে তার লঞ্চ। দুটি রিকন্ডিশন্ড ডাইহাটসু ইঞ্জিন লঞ্চটিতে লাগানো হয়েছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামজালাল বলেছেন, অতিরিক্ত যাত্রীর চাহিদা তৈরি করতে লঞ্চটিতে নভেম্বর মাসে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন লাগিয়েছেন। সেই রিকন্ডিশনড ইঞ্জিন সংযোগ করেছেন সাধারণ মিস্ত্রি দিয়ে। ইঞ্জিন পরিবর্তনের অনুমোদনও তিনি নেননি। স্টাফদের তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন দেরিতে রওয়না দিয়ে আগে গন্তব্যে পৌঁছাতে। এতে যাত্রীরা আকৃষ্ট হয়ে তার লঞ্চেই উঠবে। এই লোভে পড়ে এটি করেছেন।
তিনি বলেন, ইঞ্জিন লাগালেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন তিনি নেননি। আগুন লাগার খবর তাকে দিয়েছিল সুপারভাইজার আনোয়ার। খবর পাওয়ার পরও হামজালাল কোনো সংস্থার সহযোগিতা নেননি। এমনকি ৯৯৯ এ ফোনও দেননি। তিনি উদ্যোগ নিলে হতাহতের সংখ্যা হয়ত কম হত।
অগ্নিকাণ্ডের পর হামজালাল দাবি করেছিলেন, তার লঞ্চের ইঞ্জিনে কোনো সমস্যা ছিল না, অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রও ছিল।
মুন্সীগঞ্জ সদরের আবুল ওহাব আলী শেখের ছেলে হামজালাল শেখ (৫২) থাকেন ঢাকার ওয়ারীতে। গত শতকের ৯০ এর দশকের শুরু থেকে তিনি লঞ্চ ব্যবসায় জড়িত।
হামজালাল বিভিন্ন সময়ে লঞ্চ মালিক সমিতির পরিচালক ও নির্বাহী সদস্যের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি এবং মালিকদের নিয়ে গঠিত স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য তিনি।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় অভিযান-১০। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। আহত হয়ে ৮০ জনের বেশি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নিখোঁজ রয়েছেন বেশ কয়েকজন।