নিজস্ব সংবাদদাতা : চলচ্চিত্রের রুপালি পর্দায় তিনি হিরো। আদর্শ একজন নায়কের যা কিছু গুণাবলী সবই তার মধ্যে বিদ্যমান। সুদর্শন, স্মার্ট, রুচিশীল, চমৎকার অভিনয়শৈলী, নাচেন ভালো, মারপিটেও তার জুড়ি মেলা ভার। বহু কালজয়ী ও সুপারহিট সিনেমা তিনি উপহার দিয়েছেন কয়েক দশকে।
সিনেমার বাইরেও তিনি হিরো। নিরাপদ সড়কের দাবিতে দীর্ঘদিনের আন্দোলন তাকে গণমানুষের কাছে সুপারহিরো করে তুলেছে বলা যায়। আর গেল বছরের নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশ কাঁপানো ছাত্র আন্দোলনে তিনি রাজপথের সুপারম্যানের তকমা পেয়েছিলেন।
বলছি ‘বেদের মেয়ে জোছনা’খ্যাত নায়ক ও বাংলাদেশের বৃহৎ সামাজিক আন্দোলন নিরাপদ সড়ক চাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের কথা। আজ তার ৬৪তম জন্মদিন।
এই বিশেষ দিনে তিনি ফেসবুকে হাজির হয়েছেন লাইভে। সেখানে জানান, জন্মদিনটিকে ঘিরে তোমন কোনো আয়োজন করবেন না একুশে পদকে ভূষিত হওয়া অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি তার ভক্ত-দর্শকদের কাছে দোয়া চেয়েছেন যেন সুস্থ থাকেন। সেইসঙ্গে ভক্তদের ভালোবাসা ও সম্মান যেন আমৃত্যু ধরে রাখতে পারেন সেই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন তিনি।নিজের ৬৪ তম জন্মদিন প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘সারাদিন বাসায় কাটবে বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। আমার ভক্ত, অনুরাগী এবং আমার সংগঠনের সদস্যরা প্রতি বছরই কেক কেটে আমার জন্মদিনটি উদযাপন করেন। তাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেনো আমার জন্মদিনে এবার কোনো কেক না কাটেন।যে টাকা খরচ করে কেক কাটবেন সেই টাকা দিয়ে মাস্ক বিতরণ করুন এবং সম্ভব হলে যার পক্ষে যা সম্ভব অসহায় মানুষের মধ্যে শীতকালীন বস্ত্র বিতরণ করুন। তাহলে আমার প্রতি সঠিক ভালোবাসা প্রকাশ পাবে। আমিও আনন্দিত ও খুশি হবো।’
আর ক্ষণিকের জীবন ও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে সেই কথা চিন্তা করে নিজেকে ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।’প্রসঙ্গত, বাংলা চলচ্চিত্রে গত শতাব্দীর সোনালি যুগের অভিনেতা কাঞ্চন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় আশুতিয়াপাড়া গ্রামে ১৯৫৬ সালের ২৪ শে ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম হাজী আব্দুল আলী, মাতার নাম সরুফা খাতুন।
শিক্ষাজীবনে ইলিয়াস কাঞ্চন ১৯৭৫ সালে কবি নজরুল সরকারী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতক্তোর শেষ করেন। কৈশোর থেকেই অভিনয়ের প্রতি দুর্বলতা ছিলো। তাই যুক্ত হয়েছিলেন বেশ কিছু নাট্য সংগঠনের সাথে। নানা পথ পেরিয়ে অবশেষে কিংবদন্তি নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘বসুন্ধরা’ ছবি দিয়ে ১৯৭৭ সালে চলচ্চিত্রে ববিতার নায়ক হয়ে আবির্ভাব ঘটে ইলিয়াস কাঞ্চনের।
সময়ের সাথে সাথে তিনি নিজেকে চলচ্চিত্রের কিংবদন্তির পথেই নিয়ে এসেছেন। কাঞ্চন ৩৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তারমধ্যে বেশিরভাগ ছবিই ব্লকবাস্টার হিট ছিলো।
আর ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া তার অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোছনা’র ব্যবসায়িক সাফল্য এখনো ঢাকাই ছবিতে রূপকথা হয়ে আছে। তোজাম্মেল হক বকুলের পরিচালনায় এই ছবিতে কাঞ্চন জুটি বেঁধেছিলেন অঞ্জু ঘোষের সাথে। সীমাহীন কষ্টের এক অসাধারণ প্রেমের গল্প বেদের মেয়ে জোছনা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত।