বিডি ঢাকা ডেস্ক
সপ্তাহ ঘুরতেই ডিমের হালি চড়েছে ৫০ টাকায়, মাস ঘুরে পেঁয়াজের কেজি বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এমন অবস্থায় স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে রান্নায় পেঁয়াজের ব্যবহার কমানো হচ্ছে, ডিমও আগের মতো খাওয়া হচ্ছে না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিকের তুলনায় ক্রেতারা পেঁয়াজ ও ডিম কম কিনছেন। মিরপুরের মাটিকাটা এলাকার খুচরা দোকানিরা জানান, গত মাসের শুরুতে পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন ৮০–৮৫ টাকা। ক্রেতারা এখন পেঁয়াজ কম কিনছেন। ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেটিও কম বিক্রি হচ্ছে।
একই এলাকার বাসিন্দা (মিরপুর) জেসমিন বেগম বলেন, ডিমের দাম অনেক বেশি। আগে যে পরিমাণ ডিম খেতাম, এখন তা কমাতে হয়েছে। পেঁয়াজও আগের মতো ব্যবহার করছি না।
উত্তরার আজমপুর এলাকার গৃহিণী রোকসানা আক্তার বলেন, ডিমের দাম ৫০ আর পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে তো সংসারের খরচ চালানো মুশকিল। ডিম এখন সপ্তাহে দুই-তিন দিন কিনি, প্রতিদিন খাই না। পেঁয়াজের ব্যবহার অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছি।
রবিউল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সিন্ডিকেটের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। পেঁয়াজ ও ডিমের চড়া দামের কারণে হিসেব করে কিনতে হচ্ছে।
ঢাকার আজমপুর, পল্লবী, মোহাম্মদপুর, বনানী ও তেজগাঁও এলাকার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্রেতাই এখন আগের মতো সপ্তাহে দুই কেজি পেঁয়াজ কেনার পরিবর্তে ১ কেজি বা আধা কেজি কিনছেন। ডিমের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বিশেষ করে ছোট পরিবারগুলোতে খরচ সামলাতে কেনাকাটা আরও সীমিত করা হয়েছে।
সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা টিসিবি বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম বর্তমানে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা, সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা। ডিমের দাম প্রতি হালিতে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। এক মাস আগেও পেঁয়াজের কেজি ৬৫–৫৫ টাকার মধ্যে ছিল।
ভোক্তারা মনে করছেন, দাম বাড়ানোর ফলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারে ডিম কম খাওয়া হচ্ছে, কারণ তারা প্রতিদিন ডিম কিনতে পারছে না। এতে পরিবারের খাবারের মান ও পুষ্টিতে প্রভাব পড়ছে।
বাজারের দোকানিরাও স্বীকার করছেন, ক্রেতারা এখন কম কিনছেন। দাম বাড়ার কারণে ক্রেতারা আগের তুলনায় অর্ধেক পরিমাণ পেঁয়াজ ও ডিম কিনছেন। এটা আমাদেরও উদ্বেগের বিষয়।
পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। যে দেশে সস্তায় পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হবেবাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন
রাজধানীর খিলগাঁও বাজারের খুচরা দোকানদার আব্দুল হান্নান বলেন, দাম এত বেড়ে গেছে যে ক্রেতারা আগের মতো আর কিনতে চাইছেন না। আগে অনেক ক্রেতা পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এক পাল্লা (৫ কেজি) আর ডিমের ক্ষেত্রে ১ ডজন (১২টি) বা ১ খাঁচা (৩০টি) ডিম নিতেন। এখন তারা আধা কেজি বা তিন-চারটা ডিমেই সীমিত থাকছেন।
নিউ মার্কেট এলাকার দোকানদার হুমায়ুন কবির বলেন, ক্রেতাদের চাপ কমে গেছে। আগে দোকানে ভিড় লেগেই থাকত, এখন অনেকেই শুধু দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু এখানে আমাদেরও করার কিছু নেই।
গত ১২ আগস্ট বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘যে দেশে সস্তায় পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।’