বিডি ঢাকা ডেস্ক
জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্মরণসভা অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা প্রশাসন, সদর উপজেলার বালুগ্রাম আদর্শ কলেজ ও নাচোল সরকারি কলেজের আয়োজনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বেলা ১১টায় গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত স্মরণসভার আয়োজন করে গোমস্তাপুর উপজেলা প্রশাসন। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত আনজুম অনন্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- পার্বতীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আতিকুল ইসলাম আজম, নিহত তারিকুল ইসলামের বাবা আসাদুল ইসলাম, ছাত্র প্রতিনিধি রাসেল ইসলাম।
জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ তার বক্তব্যে বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর আমি এই জেলায় জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করি। তারপরে জেলার বিভিন্ন দাপ্তরিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু আজকে যে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলাম, এ রকম ভালো লাগা অন্য অনুষ্ঠানে হয়নি। সত্যি আনন্দিত যে, আজকে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আপনাদের সহযোগিতায় বীর শহীদদের পরিবারের কাছে কিছু উপহার তুলে দিতে পেরেছি। সবাই মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। এটা আমরা মনে করেছি, আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যিনি শহীদ হয়েছেন, তিনি তখনো জানতেন না যে আসলে ৫ আগস্টের পর কী হবে। তিনি তার দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, উপস্থিত শহীদ তারিকুলের বাবার কাছ থেকে তার ছেলের ঘটনা শুনলাম। এক ছাত্র ভাই, তিনিও তার অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন। সত্যিকার অর্থে ৫ আগস্টের পূর্বে কিংবা পরে অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমরা যারা সরকারি কর্মচারী ছিলাম, আমাদের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ ছিল না। চাকরিবিধি অনুযায়ী আমাদের চাকরি করতে হয়। আমাদের সমর্থন থাকলেও আমরা প্রত্যক্ষভাবে মাঠে নেমে এসে কাজ করতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমরা যেটা পারিনি, ছাত্র ভাইয়েরা সেটা করে দেখিয়ে দিয়েছে। ছাত্রভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। একই সাথে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। যারা আহতাবস্থায় এখনো হাসপাতালে আছেন, তাদের সুস্থতা ও আরোগ্য কামনা করি। আমাদের এখানে যারা উপস্থিত রয়েছেন, তাদের প্রতি শুভকামনা ও আগামীতে মঙ্গল কামনা করি।
আব্দুস সামাদ বলেন, আজকে এই স্মরণসভার মাধ্যমে আমাদের বীর শহীদ পরিবারের প্রতি যে দায়িত্ববোধ, তার কিঞ্চিত অংশ পালন করতে পেরেছি। তাদের যে ঋণ আমরা তখনই শোধ করতে পারব, যখন দেশটা ভালোভাবে চলবে। যেটা আমাদের তারিক হোসেনের বাবা বলেছেন, দেশটা যেন ভালোই চলে। দেশটা ভালো চালানোর দায়িত্ব আমরা যারা দায়িত্বে আছি, জনপ্রতিনিধি যারা আছেন, তারাসহ সবার। উনি কিন্তু সবার কাছে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ৫ আগস্টের পর এখনো তিন মাস হয় নাই, কিন্তু এখনো ষড়যন্ত্র থেমে নেই। আমাদের দেশটা যদি আগামীতে আলোর দিকে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে পারব। সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা এটাই, আমরা যারা প্রশাসনিক পদে আছি, আমরা যেন নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারি। ইনশআাল্লাহ আমরা সেই দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আগামী শনিবার জেলা ও উপজেলার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের উপস্থিতিতে এই ধরনের অনুষ্ঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার শহীদ সাটু মিলনায়তনে করা হবে বলে তিনি জানান।
স্মরণসভায় শহীদ তারিকুল ইসলামের বাবার কাছে চার শতক জমির দলিল ও সেলাইমেশিন তুলে দেন জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ। পরে শহীদ ও আহতদেরসহ দেশের কল্যাণ, অগ্রগতি, সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার বালুগ্রাম আদর্শ কলেজের আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। কলেজের অধ্যক্ষ বেলাল উদ্দীন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ মোহা. মতিউর রহমান। শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় শুরুতেই ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় বক্তব্য দেন- উপাধ্যক্ষ মো. গোলাম ফারুক মিথুন, সহকারী অধ্যাপক মো. মোখলেসুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক ও স্টাফ কাউন্সিল সম্পাদক মো. আব্দুস সামাদ, সহকারী অধ্যাপক মো. আজাদ আলী এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র মো. আতিক আহমেদ।
বক্তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
আলোচনা শেষে কবিতা আবৃত্তি করেন দ্বাদশ শ্রেণীর প্রসেনজিত কুমার কুুন্ড, দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করেন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর সোনালী, আশিয়া, কাউসারী।
অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুথানের ভিডিও চিত্র দেখানো হয়।
শেষে দোয়া পরিচালনা করেন অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মো. আফজাল হুসাইন।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে অনুরূপ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নাচোল সরকারি কলেজের আয়োজনে বৃহস্পতিবার সকালে কলেজ অডিটোরিয়ামে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্মরণসভায় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় আহত সাউথইস্ট ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি কলেজের শিক্ষার্থী নাচোলের সিংরইল গ্রামের মেহেদী হাসানের পিতা আব্দুল কুদ্দুস অংশগ্রহণ করেন।
নাচোল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বক্তব্য দেন- ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রভাষক শফিকুল আলম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রভাষক ড. অজিত কুমার দাস, প্রভাষক ইসরাফিল হক, প্রভাষক গোলাম কবির মোল্লা, প্রভাষক সোহেল আলম।
সভা শেষে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত নাচোলের মেহেদী হাসানের পিতা আব্দুল কুদ্দুসকে কলেজের পক্ষ হতে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয় এবং ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত দেশের স্বাধীনতাকে ধরে রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানানো হয়।