বিডি ঢাকা ডেস্ক
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে তাবলীগ জামাতের দুইপক্ষ মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ অনুসারিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় মাওলানা জুবায়ের অনুসারী এস এম আলম হোসেন বাদি হয়ে জিএমপি’র টঙ্গী পশ্চিম থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো শতক শতক জনকে আসামী করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পুলিশের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও বৃহষ্পতিবার ইজতেমা মাঠের বিভিন্নস্থানে কিছু মুসল্লি অবস্থান করছেন। তাদের দাবি, কাঁথা বালিশসহ বিভিন্ন মালামাল পাহারা দিতে মাঠে রয়েছেন তারা। এছাড়া ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। তবে মাঠের ভেতর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন ষ্টেশন রোডের মোড়, মুন্নু গেইট- কামারপাড়া সড়ক, ইজতেমা মাঠে প্রবেশের গেইটসহ আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছেন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এসময় কিছু মুসুল্লীকেও বাঁশ হাতে নিয়ে ইজতেমা মাঠে প্রবেশের বিভিন্ন গেইটে পাহারা দিতে দেখা গেছে।
মাঠে থাকা মুসল্লি খায়রুল বাশারসহ কয়েকজন জানান, মাঠে অবস্থানকারীরা সবাই মাওলানা জুবায়ের অনুসারী। মাওলানা সাদ অনুসারীরা মাঠ খালি করে দেওয়ার পর বুধবার দিবাগত রাতের বিভিন্ন সময় তারা ইজতেমা মাঠে এসেছেন। এসব মুসুল্লীসহ আমরা ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে মুরুব্বীদের নির্দেশনা অনুযায়ী ইজতেমা ময়দানের যাবতীয় মালামাল পাহারা দিতে বিভিন্ন জামাতভুক্ত প্রায় ৫’শ সাথী মাঠে এসেছেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন বলেন, বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই পক্ষের সভা শেষে মাঠে থাকা মালামাল পাহারা দেওয়ার জন্য জুবায়ের অনুসারীদের ৫শ’ লোক থাকার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা মাঠে অবস্থান করছেন। তবে পুলিশের নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে। মাঠ ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে বুধবার দুপুরে ময়দানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে পুলিশের গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর সাদ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করেন।
তবে মাওলানা সাদ অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইজতেমা ময়দান প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই সরকার জুবায়ের অনুসারীদের মাঠ বুঝিয়ে দিয়েছেন। তারা পাহারার নামে ঠিকই মাঠে অবস্থান করছেন। এটা আমাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার থেকে ইজতেমা মাঠে মাওলানা সাদের অনুসারী মুসল্লিরা পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা সাদপন্থিদের মাঠে জোড় পালন করতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে গত কিছুদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্ধ চলে আসছিল। এর জেরে বুধবার ভোররাতে উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের চারজন নিহত ও শতাধিক মুসুল্লী আহত হন। এ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ বিজ্ঞপ্তি জারির পর সাদ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করে। তবে তাদের অনেক জামাতভুক্ত সাথীরা ময়দানের আশেপাশের বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, বাসা-বাড়ি ও মেসে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে জুবায়ের অনুসারীদের উপর হামলা ও হতাহতের ঘটনায় সাদ অনুসারীদের দায়ি করে তাদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা। বৃহষ্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিবাবাড়ি-শিমুলতলী সড়কের পাশে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
এ ব্যাপারে জিএমপি’র টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইস্কান্দর হাবিবুবুর রহমান জানান, ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তদের নাম তদন্তের স্বার্থে এ মুহুর্তে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান।