শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন

দেবীগঞ্জে দরপত্র ছাড়াই বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গাছ বিক্রির অভিযোগ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৯ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

 

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে কোনোরকম দরপত্র ছাড়াই বন বিভাগের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের যোগসাজশে সরকারি গাছের লক বাইরে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে দেবীগঞ্জ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে এ অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ দিন আগে পাশ্ববর্তী বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়াঘাট এলাকায় ওয়াই ব্রিজ নির্মাণ স্থলে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য অনেকগুলো গাছ কাটা হয়। ধীরে ধীরে সেসব গাছের লগ দেবীগঞ্জ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে আনা হয়। যা পরবর্তীতে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হতো।

অভিযোগ উঠেছে, দেবীগঞ্জ বনবিভাগের সদর বিটের বিট কর্মকর্তা রিয়াজুল হাসনাত এবং মালি সাজু ইসলাম কাঠ ব্যবসায়ী জাকিরুল ইসলামের সহায়তায় পুরনো দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা গাছের সঙ্গে নতুন এনে রাখা গাছের লগও বাইরে বিক্রি করেছেন। শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালেও কয়েকটি ভ্যানে করে নতুন ইউক্লিপটাসসহ বিভিন্ন গাছের লগ বনবিভাগের অফিস থেকে বের করে দেবীগঞ্জ ডাকবাংলো সংলগ্ন গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সোমিলের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বনবিভাগের অফিসের ভিতরে গেইটের পাশে অনেক দিন আগের পুরনো কিছু গাছের লগ রয়েছে। এছাড়া পুরনো অফিসের সামনে থেকে পূর্ব দিকে প্রায় দুই শতাধিক নতুন ইউক্লিপটাস গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের লগ স্তুপ করে রাখা হয়েছিল। মাটিতে গাছ টানার চিহ্ন এবং ভ্যানের চাকার দাগ স্পষ্ট দেখা গেছে। বনবিভাগের অফিসে নতুন করে রাখা গাছগুলোর পাশে গাছ সরানোর প্রমাণও পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে পৌরসভার ডাকবাংলো সংলগ্ন গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সোমিলের সামনে বিভিন্ন পুরনো গাছের সঙ্গে বনবিভাগ থেকে আনা প্রায় শতাধিক নতুন ইউক্লিপটাস ও মিনজিরি গাছের বিভিন্ন সাইজের লগ দেখতে পাওয়া গেছে। এসব গাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী মোঃ জাকিরুল ইসলাম বনবিভাগ থেকে পুরনো গাছের লগ কিনেছেন। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নতুন গাছও তার মাধ্যমে বাইরে বিক্রি করা হয়েছে। পুরনো লগের সঙ্গে নতুন লগ মিশিয়ে বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোন রকম দরপত্র ছাড়াই এসব গাছ সো মিল এবং অন্যান্য স্থানে নিয়ে গেছেন।

দেবীগঞ্জ পৌরসভার ডাকবাংলো সংলগ্ন গিয়াস চৌধুরীর সোমিলে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব গাছের মালিক স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী জাকিরুল ইসলাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, শনিবার সকালেও নতুনভাবে ভ্যানে করে গাছের লগ আনা হয়েছে।

বন বিভাগের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অল্প কিছু পুরনো গাছ অকশনে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু যেগুলো সম্প্রতি আনা হয়েছে সেগুলোর অকশন এখনো হয়নি। নতুন গাছ অফিস থেকে বের হয়েছে, এটা সত্য।

এদিকে দরপত্রের মাধ্যমে পুরনো গাছ কিনেছিলেন স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী জাকিরুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, তার মাধ্যমে পুরনো গাছের সঙ্গে নতুন আনা গাছগুলোও অফিস থেকে কৌশলে বের করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাঠ ব্যবসায়ী জাকিরুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত দেবীগঞ্জ সদর বিটের বিট কর্মকর্তা রিয়াজুল হাসনাত বলেন, আমি বাইরে ছিলাম। সাজুকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম দেখার। দেখি কাঠ ব্যবসায়ী জাকিরুলের সঙ্গে কথা বলে জানতে হবে নতুন গাছ তিনি নিয়েছেন কি না।

তবে কতগুলো গাছ অফিসে ছিল এবং কতগুলো বাইরে গেছে- এ প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দেবীগঞ্জ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ওখানে জাকিরুল ভাইয়ের পুরনো কিছু লক আছে। মাড়েয়া থেকে আনা নতুন গাছগুলোর দরপত্র এখনো হয়নি, তবে সামনে হবে। দরপত্র ছাড়াই নতুন গাছ অফিস থেকে কীভাবে বাইরে গেল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এখন বাইরে আছি, পরে শুনে জানাব।

এই ঘটনায় জড়িত বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে দিনাজপুর বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফাহিম মাসউদ বলেন, আমি কয়েক দিন আগে দেবীগঞ্জ রেঞ্জ অফিসে গাছগুলো দেখে এসেছি। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, আমরা দ্রুত তদন্ত করব। অভিযোগের সত্যতা পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com