সত্যনারায়ন শিকদার, পশ্চিমবঙ্গ : মেদিনীপুর কলেজ মাঠ। ৫০ বছর ব্যসে রাজনীতিতে নতুন ইনিংস শুরু। পদ্ম শিবিরে পা রেখেই একের পর এক ছক্কা। না এখনও সেই অর্থে কাজ শুরু করেন নি, কিন্তু ভাষণে গেরুয়া ঝড়ের ইঙ্গিত। এর আগে পূর্ব মেদিনীপুরের অরাজনৈতিক মঞ্চে বলেছিলেন লড়াইয়ের ময়দানে দেখা হবে। বলাই বাহুল্য একুশের লড়াই। সেই লড়াইয়ের লক্ষ্যে প্রথম দিনেই রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
অমিত শাহের হাত থেকে নিজেই শুধু পদ্ম পতাকা গ্রহণ করলেন তাই নয়। সঙ্গে যারা বিজেপিতে যোগদান করলেন সেই তালিকাই শুধু দীর্ঘই নয়, রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ। সাংসদ থেকে বিধায়ক, পুরসভার চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পারিষদ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে শিক্ষা জগতের মানুষ কে নেই সেখানে? সুনীল মণ্ডল, দশরথ তিরকে, বনশ্রী মাইতি, সুদীপ মুখার্জি, বিশ্বজিৎ কুন্ডু, সৈকত পাঁজা, দীপালি বিশ্বাস, শীলভদ্র দত্ত, কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী, দেবাশিস জানা, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, বাণি সিংহ রায়, তাপসী মণ্ডল, এস মুন্ডা- তালিকা দীর্ঘ।
যদিও অমিত শাহের মতে এই তো সবে শুরু হলো। ভোট আসতে আসতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ফাঁকা হয়ে যাবে। একা হয়ে যাবেন তিনি। সুনামি আসছে, কল্পনাও করতে পারবেন না কী হতে চলেছে? বাংলায় টিম বিজেপির ক্যাপ্টেন যে অমিত শাহ তা তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজেই স্পষ্ট। টার্গেট ২০০-এর বেশি আসন। আর সেই টিমে অলরাউন্ডার শুভেন্দুকে যে পুরোপুরি কাজে লাগাতে চলেছে বিজেপি, তা ১৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচীতে স্পষ্ট।
৩ শুভেন্দুর প্রিয় নম্বর, পয়া নম্বর। এদিন দুপুর বারোটা বেজে ৩ মিনিটে মা গায়িত্রী দেবীকে প্রনাম করে কাঁথির বাড়ি থেকে বেরোন শুভেন্দু। গন্তব্য ছিল মেদিনীপুর কলেজ ময়দান, উপলক্ষ বিজেপিতে যোগদান। ময়দানে জোর গলায় তিনি বললেন, আমার মায়ের নাম গায়িত্রী অধিকারী। সুতরাং যারা বলছেন মায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি, আমি বলি আমার অন্য কোনও মা নেই। ইঙ্গিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই। যদি আর কাউকে মা বলা যায় তাহলে বিবেকানন্দকে অনুসরণ করে বলা যায় বিবেকানন্দকে মা বলবো অন্য কাউকে মা বলতে পারবোনা। তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলে যারা আক্রমণ করছেন তাদের বিরুদ্ধেও পাল্টা দিতে ছাড়েন নি শুভেন্দু। বলেন, আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছে, ভারতরত্ন অটলজি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন সেকথা মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এটাও বলেন, অটলজির হাত ছেড়েছিলেন তিনি। পুরোটাই নাম না করে বলেন।
এরপর একের পর এক বিজেপির স্থানীয় নেতা কর্মীদের নাম ধরে ধরে তিনি উল্লেখ করে বলেন শুভেন্দু অধিকারী মাতব্বরি করতে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে আসেনি। প্রয়োজনে পতাকা লাগাবো, দেওয়াল লিখন করবো। পাড়ায় পাড়ায় বুথে বুথে যাবো। আগামীকাল থেকেই দলের কাজ শুরু করে দেব। অবশ্য ১৯ ডিসেম্বর বিজেপিতে যোগদানের পরেই অমিত শাহের সঙ্গে কলকাতায় আসেন তিনি। নিউটাউনে একটি হোটেল দীর্ঘক্ষণ ধরে অমিত শাহ সহ রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁর। কাজ যে তিনি শুরু করে দিয়েছেন তা বলাই বাহুল্য। এদিনের সভা থেকে নাম না করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বলেন এবারের ভটে দ্বিতীয় হবেন আপনারা। ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার অভিযোগ আনেন। মঞ্চ থেকে স্লোগান তলেন তোলাবাজ ভাইপো হঠাও। বাংলায় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সরকার গঠন হবে। কলকাতা ও দিল্লিতে এক সরকার থাকুক সেটাই তিনি চান। বলেন, যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে বাংলাকে তুলে দিতে চাই।
অমিত শাহের সঙ্গে যে তাঁর পরিচয় ২০১৪ সালে সেকথাও বলেন তিনি। তিনি যখন করোনা আক্রান্ত তখন তৃণমূল কংগ্রেসের কেউ খবর না নিলেও খবর নিয়েছেন অমিত শাহ। আর সেকারনেই ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা জানান অমিত শাহকে। ধন্যবাদ জানান মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষকেও। মঞ্চে অমিত শাহের পায়ে হাত দিয়েও প্রনাম করেন শুভেন্দু।
লক্ষ্য ২১। বহিরাগত ইস্যুতে আবারও পরোক্ষে আক্রমণ করেন তৃণমূল কংগ্রেসকে। বলেন, আমি আগে ভারতীয়, পরে বাঙালি। ভারতের ঐতিহ্য বহুজন সুখায়, বহুজন হিতায়, বসুধৈব কুটুম্বকম। এদিন বড়ো ভাই বলে সম্বোধন করেন, অমিত শাহও তাঁকে ছোটভাই বলে উল্লেখ করেন। ১৯ তারিখ সকালেই দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছিলেন শুভেন্দু। তিনি লেখেন, রক্ত,ঘাম, কান্নার বিনিময়ে যে দল তৈরি করেছিলাম তা পচে গেছে। মাতাদর্শ, জনাদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এর পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে বিশ্বাসঘাতক, পচা বলে আক্রমণ করেছেন। আক্রমণ প্রতি আক্রমণ চলতেই থাকবে। এরই মাঝে মঙ্গলবার দিল্লি গিয়ে শুভেন্দু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন এমন খবরও সূত্র মারফৎ পাওয়া যাচ্ছে।
সামনে নির্বাচন। উত্তেজনার পারদ চড়ছে। ১৯ তারিখ মরসুমের শীতলতম দিনে রাজনৈতিক উত্তাপ ছিল তীব্র। শুভেন্দু কলেজ ময়দানে আজ যে ঝোড়ো ইনিংসের সূচনা করলেন তা বলাই বাহুল্য। তবে জনাদেশের দিকে তাকিয়ে সবাই। জনতা জনার্দনই ঠিক করে দেবেন কে হবেন উইনার।